সঞ্জয় দে, দুর্গাপুর

শীতের সঙ্গে মেঘলা আকাশ। লেপ-কম্বলে জবুথবু বাঙালি। এমন ল্যাদ খাওয়া পরিবেশ পাল্টে গেল দুপুরে। ধোঁয়া ওঠা গরম ভাতের সঙ্গে মাছের হাজার একটা পদ। কাতলা মাছের কালিয়া, দই রুই, ভেটকি পাতুরি, চিংড়ির মালাইকারি বা শুঁটকি মাছের টকে জমিয়ে উৎসব আর বাঙালির প্রাণে তাজা বাতাস। একেবারে এসো বসো আহারে, ভোজ কয় যাহারের স্টাইলে রবিবার দুর্গাপুরের এ-জোন রবীন্দ্র ভবনে জমজমাট ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’ উৎসব। প্রায় ১৭০০ মানুষ মাছের হরেক পদ চেটেপুটে সাবড়ে দিলেন।

তিন বছর ধরে পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে মাছে-ভাতে উৎসবের আয়োজন করছে একটি সংগঠন। তাদের লক্ষ্য, শৈশব, কৈশোরে মাছকে আরও জনপ্রিয় করে তোলা। জেনারেশন জেড মাছের চেয়ে বেশি পছন্দ করছে ডিম ও চিকেন। মাছে যেন তাদের আগ্রহ নেই। কাঁটা বেছে মাছ খাওয়া একেবারে নাপসন্দ্‌। অথচ মাছের পুষ্টিগুণ তো বটেই চিকিৎসকদের মতে, হৃদরোগীদের ক্ষেত্রে মাছের বিকল্প খাবার হয় না।

সামুদ্রিক কিংবা নদী, পুকুরের মাছ তার তেল হার্টের রোগীদের অব্যর্থ দাওয়াই। ফলে মাছ নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে বছর তিনেক আগে প্রথম শুরু হয়েছিল এই মাছমেলা। প্রথম বছরেই অভাবনীয় সাফল্য। প্রচুর মানুষ এসেছিলেন উৎসবে। দ্বিতীয় বছর থেকে অবশ্য উৎসবে অংশগ্রহণের জন্য একশো টাকার টিকিট ধার্য করা হয়। এবারও টিকিটমূল্য ছিল একশো টাকা।

এবার উৎসবে মোট ১৬ রকমের মাছ ছিল। ১১ কুইন্টাল মাছ আনা হয়েছিল উৎসবের জন্য। সকালে উৎসবের উদ্বোধন করেন রাজ্যের মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার। বেলার দিকে আসেন পুরসভার মুখ্য প্রশাসক অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়। দু’জনেই উদ্যোক্তাদের প্রশংসা করে বলেন, ‘খাদ্য রসিকদের জন্য মাছে-ভাতে বাঙালি উৎসব সত্যি অভিনব। আনন্দ করে মাছ খাচ্ছেন সবাই।’

টিকিট কেটে উৎসবে অংশ নিয়েছিলেন স্টিল টাউনশিপের বাসিন্দা শ্রেয়াঙ্কা রায়। তিনি খেয়েছেন পাবদা, কাতলা, চিংড়ি, শুঁটকি আর ইলিশ মাছের বিভিন্ন পদ। বলেন, ‘এতেই পেট ভরে গিয়েছি। এই প্রথম উৎসবে এলাম। দারুণ অভিজ্ঞতা হলো।’ কুড়ুরিয়াডাঙা থেকে এসেছিলেন বাবলি দত্তরায়। মৌরলা, ইলিশ, বাটার মতো মাছের ৮ রকমের পদ খেয়েছেন তিনি।

Fish Market : কেষ্টপুরে মাছের মেলা! ইলিশ থেকে ভেটকি, তাজা মাছের পসরা
উৎসবের জন্য চাঁদা তোলা হয় না। উদ্যোক্তাদের একটি বড় অংশ ডিএসপিতে চাকরি করেন। তাঁরাই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। মূল উদ্যোক্তা ৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলার পল্লবরঞ্জন নাগ বলেন, ‘প্রথমে আমরা আম উৎসব করেছিলাম। তার পর মাছে-ভাতে বাঙালি। এটা দারুণ সাফল্য পেয়েছে। মূলত বর্তমান প্রজন্মের বাচ্চাদের মাছের প্রতি আকৃষ্ট করতে এই উৎসবের আয়োজন।

আগামী দিনে বাঙালির আর এক প্রিয় খাবার ঝালমুড়ি নিয়ে উৎসবের আয়োজন করব।’ তখন উৎসব প্রাঙ্গণে মাইকে বাজছে মাছের উপকারিতা নিয়ে ঘোষণা। আসুন মাছ খান, মাছ খাওয়ান, চুনো মাছ, কুচো মাছ, বাংলার মাছ, বাঙালির মাছ…



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version