সঞ্জয় চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি

লুট হয়ে যাচ্ছে পূর্ব হিমালয়ের প্রাণিসম্পদ। তা রুখতে একটি ডিএনএ সংরক্ষণ কেন্দ্র তৈরির কথা ভাবা হচ্ছে। মূলত দার্জিলিং চিড়িয়াখানাকে কেন্দ্র করেই এই ডিএনএ ল্যাবরেটরি তৈরি হবে। ইতিমধ্যেই ভারত সরকারের কাছে মৌখিক ভাবে প্রস্তাব পাঠানোর পরে ডিটেলস প্রজেক্ট রিপোর্ট তৈরির কাজ চলছে। প্রস্তাবটি অনুমোদনের পরেই কাজে নামবেন বন দপ্তরের আধিকারিকেরা।

দার্জিলিং চিড়িয়াখানার ডিরেক্টর বাসবরাজ বলেছেন, ‘এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে এই ধরনের কাজ যে খুব জরুরি, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।’ হিমালয়ের জীববৈচিত্রের ডিএনএ সংরক্ষণের ভাবনার পিছনে মূল কারণ, বিপুল পরিমাণ প্রাণিসম্পদ চুরি এবং গণনার সময়ে চিহ্নিতকরণে সমস্যা। মূলত বিদেশের বিভিন্ন ল্যাবরেটরির জন্য প্রতিদিন দার্জিলিং, কালিম্পং, সিকিম থেকে জীববৈচিত্রের ভাণ্ডার চুরি হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ।

উত্তরবঙ্গের প্রজাপতি, গুবরে পোকা, হিমালয়ের নানা ধরনের ছোট প্রাণী ধরে প্যাকেট করা হয়। স্ক্যানারের চোখ ফাঁকি দিতে সেই প্যাকেট কালো টেপ দিয়ে মুড়িয়ে তার পরে বিমানবন্দরের কর্মীদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে পাচার করা হয় বলে অভিযোগ। বছর পনেরো আগে এমনই এক অভিযোগ পেয়ে এক চেক বিজ্ঞানীকে গ্রেপ্তার করে দার্জিলিংয়ের ওয়াইল্ড লাইফ দপ্তর। তার আগেও দার্জিলিংয়ের বেশ কিছু স্থানীয় বাসিন্দাকে পাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়।

এখনও কোথা থেকে কত প্রাণী বা প্রাণীর দেহাংশ পাচার হচ্ছে, তার হদিশ মেলাই কঠিন হয়ে পড়েছে। কেন না এই কাজে স্থানীয়রাই জড়িয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ। বিদেশের নানা ল্যাবে ডিএনএ সংরক্ষণের কাজ চললেও আমাদের দেশে সেই কাজ এখনও শুরু করা যায়নি। এ বার সেই ফেলে রাখা কাজেই হাত দিতে চলেছে বন দপ্তর।

তাছাড়া এখন বাঘ, হাতি কিংবা গন্ডারের মতো প্রাণীগণনার ক্ষেত্রেও সমস্যায় পড়তে হয় বন দপ্তরকে। বিষ্ঠা থেকে নির্দিষ্ট জিনটিকে চিহ্নিত করার জন্য রাজ্যের বাইরের ল্যাবরেটরিতে নমুনা পাঠাতে হয়। এই ল্যাব তৈরি হলে, সে সমস্যারও সমধান হবে।

এই কাজে দার্জিলিং চিড়িয়াখানাকে বেছে নেওয়ার কারণ, এই ধরনের কাজের অভিজ্ঞতা দার্জিলিং চিড়িয়াখানার রয়েছে। রীতিমতো মিউজিয়াম তৈরি করে দার্জিলিংয়ের প্রজাপতি, পাখি, গুবরে পোকা এবং নানা ধরনের প্রাণীর সংরক্ষণ করা রয়েছে সেখানে। নয়া প্রকল্পে পূর্ব হিমালয়ের সমস্ত প্রাণীকূলের ডিএনএ সংরক্ষণ করা হবে। যাতে ভবিষ্যতে এই এলাকার জীববৈচিত্রের তালিকা তৈরি করতে সমস্যা না হয়, নির্দিষ্ট প্রাণীর জিন চিহ্নিত করতেও সমস্যায় না পড়তে হয়।

Covid 19 Virus : আবার চিনা ভাইরাস-ভয়, ‘পাগলামি’ বলছেন বিশেষজ্ঞরা
হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের কো-অর্ডিনেটর অনিমেষ বসু বলেন, ‘উত্তরবঙ্গে এই ধরনের একটি ডিএনএ ল্যাবরেটরি ভীষণ জরুরি। সংরক্ষণ এবং চিহ্নিতকরণের কাজটা সহজ হয়ে যায়। দক্ষিণ ভারতে রয়েছে। সেখানেই নমুনা পাঠাতে হয়। এখানেই সেই ব্যবস্থা থাকলে বনকর্মীদের কাজে অনেক সুবিধা হবে।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version