অমিত চক্রবর্তী

জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চে দুর্নীতি নিয়ে জল গড়িয়েছে দিল্লিতেও। হাইকোর্টের বিচারবিভাগের কর্তাদের তলব করে দুর্নীতির পরিস্থিতি জেনেছে শীর্ষ আদালত। বেআইনি কাজের শিকড় গভীরে বুঝে শীর্ষ আদালত কড়া পদক্ষেপের নির্দেশ দেয়। যদি এই শিকড় উপড়ে না ফেলা যায় তা হলে সাময়িক ভাবে সার্কিট বেঞ্চ বন্ধ করার কথাও যে ভাবা হবে– সেই হুঁশিয়ারিও দিয়েছে শীর্ষ আদালত। এই অবস্থায় রাজ্য সরকার পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়েছে।

সরকারের শীর্ষ কর্তাদের তরফে তলব করা হয়েছিল হাইকোর্টে রাজ্যের ফৌজদারি মামলার দায়িত্বপ্রাপ্ত বর্ষীয়ান আইনজীবীদের। গোটা ঘটনায় পদক্ষেপের বিষয়টি দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এডিজি (আইন) আনন্দ কুমারকে। যে সব মামলায় ডিভিশন বেঞ্চকে অন্ধকারে রেখে রায় আদায় করেছেন অভিযুক্তরা, সেই সব রায় সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য।

পাশাপাশি, যে সব অভিযুক্তের তরফে এমন দুর্নীতি হয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে। পুলিশ ছাড়াও কারা দপ্তর, স্বাস্থ্য দপ্তরের বিরুদ্ধেও অবশ্য অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু যে সরকারি কৌঁসুলিদের বিরুদ্ধে অনিয়মে মদতের অভিযোগ, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হবে কিনা, তা নিয়ে অন্ধকারে আধিকারিকরাও।

এক আধিকারিকের বক্তব্য, আপাতত কিছু পদক্ষেপের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাকি বিষয়ে ‘ইনস্ট্রাকশন’ অনুযায়ী পদক্ষেপ হবে। বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চের রায়ে অবশ্য স্পষ্ট, গোটা চক্রে সরকারি প্যানেলভুক্ত কৌঁসুলিদের ভূমিকা সন্দেহজনক। ফলে সার্কিট বেঞ্চ এবং কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবীদের একাংশ মনে করছেন, নজিরবিহীন অভিযোগে কৌঁসুলিদের কোনও শাস্তি না হলে আগামী দিনে আরও খারাপ নজির তৈরি হবে।

মূলত ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগসাজশে সরকারি কৌঁসুলি ও পুলিশের একাংশের দুর্নীতির পর্দাফাঁস হয় বিচারপতি বসাকের ডিভিশন বেঞ্চের নজরদারিতে। ডিভিশন বেঞ্চ দেখিয়ে দেন, কী ভাবে হাইকোর্টকে অন্ধকারে রেখে দুর্নীতিবাজরা অভিযুক্তদের জামিন বা আগাম জামিন পাইয়ে দিচ্ছে। মূলত মাদক ও খুনের একাধিক মামলার উদাহরণ সামনে আনে আদালত।

ইতিমধ্যে কলকাতা হাইকোর্টের মূল বেঞ্চেও এমন জালিয়াতির ঘটনা সামনে এসেছে। যেখানে জাল অর্ডারের নথি পর্যন্ত তৈরি করা হয়েছে। সেই নথির ভিত্তিতে এক খুনের আসামিকে জামিনে ছেড়েও দেওয়া হয়েছে। তার পর থেকে সে বেপাত্তা। সেই ঘটনায় হাইকোর্টের দায়ের করা অভিযোগে সিআইডি এক আইনজীবীকে গ্রেপ্তার করেছে।

কেস ডায়েরি হাপিশ! পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্তে সিবিআই
আবার বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চেই এমন কিছু মামলা সামনে এসেছে, যেখানে সরকারি প্যানেলভুক্ত নন, এমন একাধিক আইনজীবী সরকারের হয়ে মামলা লড়ছেন। সেই সব মামলায় কী করে তাঁরা দাঁড়াচ্ছেন, তাঁদের ফি কে দিচ্ছে, সরকারের হয়ে তাঁরা মামলায় দাঁড়ালে সেই সব মামলায় ফল কী হতে পারে–এমন প্রশ্ন উঠেছে।

তবে জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চ নিয়ে অভিযোগ যে গুরুতর, মানছেন বিচারবিভাগের একাধিক শীর্ষ অফিসার। তাই সবাই কড়া পদক্ষেপই চাইছেন। কিন্তু লোকসভা ভোটের আগে জেলার সরকারি কৌঁসুলিদের শাস্তি ‘অন্য’ ক্ষতি করবে কিনা, এমন অঙ্ক কষাও চলছে!



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version