এই সময়, কাঁথি ও কলকাতা: ‘বিজেপি-পন্থী’ শিশির অধিকারীকে প্রকাশ্যে ‘গুরু’ সম্বোধন এবং পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে বিতর্কে জড়ানো কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যান সুবল মান্নার বিরুদ্ধে সোমবার ১৬-০ ভোটে পাশ হয়ে গেল নিজের দল তৃণমূলের কাউন্সিলারদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব। অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে পুরসভায় এ দিন যাতে আলোচনাই না হতে পারে, সে জন্যে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন সুবল। কিন্তু বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর সিঙ্গল বেঞ্চ সোমবার মামলা শুনতে চায়নি।

বুধবার শোনা হতে পারে বলে জানান বিচারপতি। অনাস্থা প্রস্তাব আলোচনায় কোনও অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিতেও অস্বীকার করে কোর্ট। ঘটনা হলো, হাইকোর্টে সুবলের মামলা ওঠার আগেই কাঁথি পুরসভায় অনাস্থা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছিল। প্রস্তাব পাশও হয়ে যায় অনায়াসে।

গত বছর ২১ ডিসেম্বর কাঁথির একটি স্কুলের অনুষ্ঠানে মঞ্চে উপস্থিত শিশির অধিকারীকে নিজের ‘রাজনৈতিক গুরু’ বলে মন্তব্য করেন সুবল। তাঁর পায়ে হাত দিয়ে প্রণামও করেন। দলীয় নেতৃত্ব শোকজ করেন সুবলকে। তাঁকে পদত্যাগেরও নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই নির্দেশ উপেক্ষা করার অভিযোগ ওঠে সুবলের বিরুদ্ধে। এর পরেই কাঁথির ২১ জন কাউন্সিলারের মধ্যে ১৬ জন তৃণমূল কাউন্সিলার চেয়ারম্যানের অপসারণ চেয়ে বিশেষ সাধারণসভা ডাকার প্রস্তাব জমা দেন।

অনাস্থা প্রস্তাব জমা পড়ার পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চেয়ারম্যান বিশেষ সভা ডাকেননি। ভাইস চেয়ারম্যান সুপ্রকাশ গিরি সোমবার সভা ডাকেন। সুবল হাইকোর্টে যান সেই সভা বাতিলের আর্জি নিয়েই। পুরসভায় এ দিনের সভা ঘিরে সকাল থেকেই ছিল উত্তেজনা। যাতে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সে জন্যে পুরসভা ঘিরে ছিল চোখে পড়ার মতো পুলিশি নিরাপত্তা। বৈঠকে অংশগ্রহণের জন্যে তৃণমূলের ১৬ জন কাউন্সিলার সকাল ১০টার কিছু পরেই পৌঁছে যান।

কিন্তু বোর্ডরুম বন্ধ থাকায় বেশ কিছু সময় বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় তাঁদের। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ ভাইস চেয়ারম্যান সুপ্রকাশ গিরির সঙ্গে তাঁরা বোর্ডরুমে মিটিং বসেন। কিছু সময়ের মধ্যেই ১৬-০ ভোটে অনাস্থা প্রস্তাব পাশ হয়ে যায়। সুবলকে সরানোর আনন্দে তৃণমূল কাউন্সিলাররা আবির খেলেন, চলে মিষ্টি বিতরণ।

ভাইস চেয়ারম্যন সুপ্রকাশ গিরি বলেন, ‘আমরা পুরসভার ২১ জন কাউন্সিলারকেই মিটিংয়ে উপস্থিত থাকার জন্যে চিঠি দিয়েছিলাম। কিন্তু ১৬ জন তৃণমূল কাউন্সিলার উপস্থিত ছিলেন। বিজেপির ৩ জন, এক নির্দল কাউন্সিলার ও সুবল মান্না আসেননি। সংখ্যাগরিষ্ঠ কাউন্সিলারের ভোটে চেয়ারম্যানের পদ থেকে সুবল মান্নাকে অপসারণ করা হয়েছে। দলের নির্দেশে পরবর্তী চেয়ারম্যানের নাম ঘোষণা করা হবে।’

Trinamool Congress : সুবলের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব ২২ জানুয়ারি
অন্য দিকে, সুবলের বক্তব্য, ‘চেয়ারম্যানের পদ নিয়ে চিন্তিত নই। চক্রান্ত করে আমাকে সরানো হয়েছে। কোনও বয়স্ক মানুষের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করা আমাদের সংস্কৃতি। কোনও অন্যায় করিনি। আমার বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক আচরণ করছেন দলেরই কাউন্সিলার ও নেতারা। আসলে না খাউঙ্গা না খানে দুঙ্গা নীতিতে চলায় অনেকের সমস্যা হচ্ছিল। আমি ৭ বারের কাউন্সিলার। দু’বছর চেয়ারম্যান রয়েছি। গাড়ি নেই, টালির চালের বাড়িতে থাকি। আইনের উপরে আস্থা আছে। এক জন কাউন্সিলার হিসেবেই কাজ করে যাব।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version