ক্যান্সার রোগীদের পাশে দাঁড়াতে অভিনব উদ্যোগ। কোলাঘাট হাইস্কুল প্রাঙ্গণে স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে প্রায় একশ জন মহিলা নিজেদের মাথার চুল দান করলেন। ক্যান্সার রোগীদের কেমোথেরাপি চলাকালীন প্রতিক্রিয়া স্বরূপ অনেকেরই মাথার চুল উঠে যায়। পুরুষ বা মহিলা সবার ক্ষেত্রেই ঘন কালো কেশ রূপচর্চার সৌন্দর্যের অন্যতম অংশ। সেই চুল হারানোর পর যে কোনও মানুষই স্বাভাবিকভাবে হীনমন্যতায় ভোগেন। একরাশ হতাশা গ্রাস করে। সেক্ষেত্রে এই দান করা চুল দিয়ে পরচুলা বানিয়ে ওইসব রোগীদের দেওয়া হয়।

এদিন এই হেয়ার ডোনেট ক্যাম্পে মহিলাদের আগ্রহ ছিল নজরে পড়ার মত। ছাত্রী, গৃহবধূ, শিক্ষিকা থেকে চাকুরীজীবী এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মিলিয়ে সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রায় শখানেক মহিলা এদিন চুল দান করেন। ছিলেন পুরষরাও। রাক্সাচক গ্রামের যুবক উদয় সামন্ত শুধুমাত্র এই কর্মসূচিতেই তার চুল দান করবেন বলে ৬ বছর ধরে মাথার চুল অতি যত্নে বড় করেছিলেন, এদিন তা দান করলেন।

থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত দীপালী মান্না নামে এক মহিলা এদিন চুল দান করে বলেন, ‘আমি তিরিশ বছর ধরে সহৃদয় মানুষদের দান করা রক্তে বেঁচে আছি, আমি এর মর্ম প্রতি মুহূর্তে অনুভব করি। সেই চেতনা থেকেই আজ আমি সামিল হলাম।’ কোলাঘাট সাহাপুর গ্রামের গৃহবধূ তনুশ্রী বোস সামন্ত এদিন তাঁর যত্নে লালিত মাথার চুলের কিছু অংশ দান করে বলেন, ‘আমার এই চুল নিয়ে কারও যদি মুখে হাসি ফোটাতে পারি তা হবে আমার কাছে পরম প্রাপ্তি।’ তনুশ্রীর স্বামী সুতনু সামন্ত বলেন, ‘এই মারণ ব্যাধি আক্রান্ত কেউ যদি এর মাধ্যমে একটু মনের জোর পান, তাহলে একবার কেন, বারবার আমার স্ত্রী এইসব কাজে এগিয়ে যাক, আমি এটাই চাই।’

আয়োজক সংস্থার পক্ষে শুভঙ্কর বোস বলেন, ‘এই দান করা চুল আমরা পাঠিয়ে দিই, মুম্বাইয়ে ক্যান্সার রোগীদের নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে। তারা এইসব চুল দিয়ে উইগ বানিয়ে বিনামূল্যে রোগীদের দেন। আমরা ইতিমধ্যে কোলাঘাটেই তিনজন ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষের মাথায় পরচুলা পরিয়ে সাফল্য পেয়েছি। আগামীদিনে আরও ব্যাপকভাবে আমরা এই কাজ করতে আগ্রহী।’ এদিন এই হেয়ার ডোনেটের পাশাপাশি ২২ জন মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকারও করেন। উদ্যোক্তাদের এহেন পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানান উপস্থিত প্রত্যেকেই।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version