জয় সাহা

লোকসভা নির্বাচনের আগে কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের জন্য বড় ঘোষণা করল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এ বার সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত অর্থাৎ গভর্নমেন্ট এডেড কলেজের শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীরা মারা গেলে তাঁর ফ্যামিলি পেনশনের সুযোগ-সুবিধে পাবেন ২৫ ঊর্ধ্ব অবিবাহিত, বিধবা কন্যা সন্তানরাও। এখানেই শেষ না করে এই ক্যাটেগরিতে রাখা হয়েছে ২৫ ঊর্ধ্ব ডিভোর্সি কন্যা সন্তানদেরও।

যার অর্থ, বিবাহবিচ্ছেদের পরও প্রয়াত বাবা বা মায়ের পেনশন পাবেন এঁরা। শিক্ষামহল এই সিদ্ধান্তকে ‘প্রগতিশীল পদক্ষেপ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সম্প্রতি রাজ্যের উচ্চশিক্ষার সদর দপ্তর বিকাশ ভবনের তরফে একটি নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়েছে। যেখানে বলা হয় — ১৯৭৮ সালের একটি বিধি অনুযায়ী এতকাল সরকার পোষিত কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা কর্মরত অবস্থায় মারা গেলে তাঁদের ফ্যামিলি পেনশনের জন্য আবেদন জানাতে পারতেন স্ত্রী বা স্বামী এবং ২৫ বছরের নীচে অবিবাহিত ও বিধবা কন্যা সন্তানরা।

কিন্তু এ বার থেকে অবিবাহিত, বিধবাদের পাশাপাশি ২৫ বছরের বেশি বয়সি ডিভোর্সি মেয়েরাও এই পেনশনের সুবিধে পাবেন। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর কথায়, ‘আমাদের কাছে এ নিয়ে অনেক আবেদন জমা পড়ছিল। মুখ্যমন্ত্রী অনেকদিন ধরেই এই কন্যা সন্তানদের জন্য কিছু করার কথা বলছিলেন। সে কথাই আমরা রাখলাম। এতে প্রমাণিত হয় যে বঞ্চিত মানুষের প্রতি আমাদের মুখ্যমন্ত্রী ও সরকারের কমিটমেন্ট কতখানি।’

নবান্ন সূত্রে খবর, সরকারি কর্মীরা এতকাল এই সুবিধে পেতেন। কিন্তু তা থেকে বাদ পড়ে গিয়েছিলেন সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত শিক্ষাক্ষেত্রের কর্মী ও শিক্ষকরা। গোটা রাজ্যে এমন কলেজের সংখ্যা সাড়ে পাঁচশোর কাছাকাছি। সেখানে কয়েক হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী চাকরি করেন। এ বার তাঁদের পরিবারের সুবিধার্থে বিশেষ সিদ্ধান্ত নিল শিক্ষা দপ্তর। তবে সরকারি বাদে সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত এবং পোষিত স্কুলের ক্ষেত্রে কী হবে, সেটা এখনও স্পষ্ট নয়।

এ প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ অধ্যক্ষ পরিষদের সভাপতি পূর্ণচন্দ্র মাইতির বক্তব্য, ‘এ নিয়ে বিস্তর মামলা আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। আমার কলেজেই এমন একজন ছিলেন, যিনি মারা যাওয়ার পর তাঁর অবিবাহিত ২৫ বছরের বেশি বয়সি কন্যা সন্তানকে ফ্যামিলি পেনশনের জন্য আদালত পর্যন্ত দৌড়তে হয়। এখন সরকার নিজে থেকেই এই মান্ধাতা আমলের বিধির বদল ঘটানোয় তাকে আমরা স্বাগত জানাই।’

সুরেন্দ্রনাথ কলেজের অধ্যক্ষ ইন্দ্রনীল করের সংযোজন, ‘অবিবাহিত এবং বিধবা ছাড়াও প্রচুর মেয়ের নানা সামাজিক কারণে বিবাহবিচ্ছেদ হচ্ছে। তাঁরা শ্বশুড়বাড়ি থেকে চলে আসছেন। এরই মধ্যে তাঁদের কর্মরত মা অথবা বাবা হঠাৎ মারা গেলে অন্ন সংস্থানেরও সুযোগ থাকে না অনেকের। ফলে ফ্যামিলি পেনশন না পেলে তাঁদের সত্যিই সমস্যা হতো।’

Mamata Banerjee : লোকসভার আগে রাজবংশীদের বড় ‘উপহার’, ২১০টি স্কুলকে সরকারি স্বীকৃতি মুখ্যমন্ত্রীর
লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের অধ্যক্ষ শিউলি সরকার জেন্ডার নিয়ে প্রচুর কাজ করেছেন। তিনি মনে করেন, আজকালকার দিনে বিবাহিত কন্যারাও বাপের বাড়ির সম্পত্তির সমান সমান ভাগীদার। ডিভোর্স হয়ে যাওয়ার পর তাঁদের মূল আশ্রয় হয়ে ওঠেন বাবা বা মায়েরাই। এই পরিস্থিতিতে মা-বাবার মৃত্যু হলে কিছুই করার থাকে না।

সে দিক থেকে বিচার করে উচ্চশিক্ষা দপ্তরের এই পদক্ষেপকে ‘প্রগতিশীল’ বলে অ্যাখ্যা দিচ্ছেন শিউলি। বাস্তবসম্মত এই পদক্ষেপের জন্য রাজ্য সরকারকে স্বাগত জানিয়েছেন আশুতোষ কলেজের অধ্যক্ষ মানস কবিও। তাঁর বক্তব্য, ‘এতে রাজ্য জুড়ে কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের প্রকৃত স্বার্থ রক্ষা করা হলো।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version