এই সময়: জনতার ভিড় থেকে ‘গনিখান-গনিখান’ আওয়াজ শুনে প্রয়াত বরকত সাহেবকে স্মরণ করলেন রাহুল গান্ধী। রতুয়া থেকে বুধবার সন্ধ্যায় ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’ নিয়ে মালদা শহরে ঢোকেন রাহুল। সেখানেই এ দিনের ন্যায়যাত্রা শেষ করার আগে রাহুলের সংক্ষিপ্ত ভাষণে আবু বরকত আতাউর গনিখান চৌধুরীর প্রসঙ্গে এসেছে। কয়েক দিন আগে শিলিগুড়িতে রাহুলের ভাষণে বাঙালি কীভাবে দেশকে পথ দেখিয়েছে, সেই ইতিহাস উঠে এসেছিল।

মালদাতে এ দিনও সেই ঢঙেই রাহুল বলেন, ‘দেশে এখন মতাদর্শগত লড়াই চলছে। একদিকে হিংসার আদর্শ, অন্যদিকে সম্প্রীতির আদর্শ। বাঙালি দেশকে পথ দেখায়। বাঙালিরা ইন্টেলেকচুয়াল। রবীন্দ্রনাথ, সুভাষচন্দ্র বসু থেকে অমর্ত্য সেনের মতো ইন্টেলেকচুয়ালরা বাংলা থেকে এসেছেন। বাঙালিরা সব থেকে বেশি নোবেল প্রাইজ পেয়েছে। আরএসএসের আদর্শের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাই আপনাদের এগিয়ে আসতে হবে।’

এই সময়ে ভিড় থেকে ‘গনিখান-গনিখান’ চিৎকার শুনে রাহুল বলেন, ‘কী বলছেন আপনারা?’ তখন জনতা আরও জোরে স্লোগান দেন, ‘গনিখান-গনিখান’। সেই আওয়াজ শুনে রাহুল বলেন, ‘আপনারা ঠিকই বলেছেন। গনিখান চৌধুরীর নাম নিতেই হবে। যিনি এখানে সবার জন্য অনেক বড় বড় কাজ করেছেন। তাই ওঁর নাম নিতেই হবে। ওঁকে স্মরণ করতেই হবে।’ রতুয়া থেকে মালদা শহর পর্যন্ত যাত্রাপথে সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য শতরূপ ঘোষের সঙ্গে রাহুল দেখা করেন।

মালদায় কংগ্রেসের ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’য় বামেরা ছিল। বহু জায়গার রাহুলের চারপাশে লাল-ঝান্ডা দেখা গিয়েছে। নিজের ক্যারাভানে শতরূপের সঙ্গে কথা বলেন রাহুল। সেখানে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী, জয়রাম রমেশ প্রমুখ ছিলেন। প্রায় ৪০ মিনিটের এই কথোপকথনে রাহুল শতরূপকে প্রশ্ন করেন, ‘এক সময়ে বিহার ও উত্তরপ্রদেশে বামপন্থীদের প্রভাব ছিল। সেই প্রভাব কেন চলে গেল?’

রাহুলের প্রশ্নের উত্তরে শতরূপ সিপিএমের দলীয় লাইন অনুযায়ী বলেন, ‘এক সময়ে শ্রেণি সংগ্রাম, শ্রেণি শোষণের উপরে মূল নজর ছিল কমিউনিস্টদের। ফলে কাস্ট এক্সপ্লয়টেশন নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ করা হয়নি। ভারতে জাতিগত বৈষম্য, শোষণের দিকে নজর কম দেওয়া হয়েছে। এই কারণে বিহার, উত্তরপ্রদেশে যেখানে জাতপাতের শোষণ রয়েছে, সেখানে বামেরা প্রভাব ধরে রাখতে পারেনি।’ কমিউনিস্ট চিনের মডেল নিয়ে সিপিএমের এই যুব নেতার কী বক্তব্য—জানতে চান রাহুল।

প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতির এই প্রশ্নের উত্তরে শতরূপ বলেন, ‘সিপিএম সোভিয়েত অথবা চিন কোনও মডেলকে অনুসরণ করে না। ভারতের বাস্তব পরিস্থিতির উপরে এদেশের মতো করে সমাজতান্ত্রিক মডেল তৈরির উপরে সিপিএম জোর দেয়। সেই ভাবে কর্মসূচি ঠিক করা হয়েছে।’

Bharat Jodo Nyay Yatra : রাহুলের যাত্রায় অসহযোগিতা, অভিযোগ উড়িয়ে দিল তৃণমূল
সঙ্ঘ পরিবারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রসঙ্গে কথায় কথায় শতরূপ রাহুলকে বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে ২০১১ সালের আগে এরএসএস-র স্কুলের সংখ্যা ছিল ২৪০টি, এখন তা বেড়ে ১৪ হাজার হয়েছে।’ সিপিএমের যুব নেতার কথায় রাহুল বিস্মিত হয়ে অধীরের দিকে তাকান। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিও শতরূপের কথায় সায় দেন। রাহুল তখন বলেন, ‘বাংলায় আরএসএসের স্কুলের সংখ্যা এত বেড়েছে! বিভিন্ন মাধ্যমে লাগাতার সঙ্ঘ পরিবারের এই কাজকর্মের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।’

মুর্শিদাবাদে আজ, বৃহস্পতিবার রাহুলের ন্যায়যাত্রায় সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী যোগ দেবেন।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version