শীর্ষেন্দু দেবনাথ, তুহিনা মণ্ডল| এই সময় ডিজিটাল
লোকসভা নির্বাচনের আগে তিন তিনটি সরকারি কমিটির পদ থেকে আচমকাই ইস্তফা ঘাটালের সাংসদ দেব তথা দীপক অধিকারীর। তাঁর এই পদক্ষেপ ‘ডিকোড’ করাই এখন রাজনৈতিক মহলের কাছে ‘চ্যালেঞ্জ’। তবে কি ভোট সৈনিক হিসেবে নিজেকে গুটিয়ে নিলেন এই সুপারস্টার? নাকি এই সিদ্ধান্তের রাস্তা সোজা সংসদের নিম্নকক্ষ থেকে উচ্চকক্ষের দিকে যায়? শুধু হয়েছে ‘পার্টি গনিত’-এর বিশ্লেষণ। ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের রাজনৈতিক মহলের অন্দরে খোঁজ লাগাল এই সময় ডিজিটাল-ও।

কেন হঠাৎ এই তিনটি কমিটিতে থাকতে ‘মন মানল না’ দেবের? নেপথ্যে কী সমীকরণ?

শনিবার সপ্তাহের শেষ লগ্নে রাজ্য রাজনীতিকে নাড়া দেওয়ার মতো খবর, ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পদ থেকে শুরু করে ঘাটাল রবীন্দ্র শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতির সভাপতি ও বীরসিংহ উন্নয়ন পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদ ছাড়েন ঘাটালের তৃণমূল সাংসদ দেব। তাঁর এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিভিন্ন মহলে রীতিমতো হইচই পড়ে যায়।

তাৎপর্যপূর্ণভাবে শনিবার ছুটির দিনে দেব এই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জেলা প্রশাসনের একটি সূত্রে খবর, জেলাশাসককে হোয়াটসঅ্যাপে শনিবারই এই চিঠি পাঠিয়েছেন দেব। হার্ড কপি এখনও জেলাশাসকের কার্যালয়ে এসে পৌঁছয়নি। এরপরেই অনেকেই দেবের এই সিদ্ধান্তকে ‘হঠকারি’ আখ্যা দিয়েছেন। আর এই সাত তাড়াতাড়ি নেওয়া সিদ্ধান্ত অবাক করছে অনেককেই। সঙ্গে ঘুরপাক খেতে শুরু করেছে আরও একটি প্রশ্ন। লোকসভা নির্বাচনে কি তৃতীয়বার লড়বেন না দেব?

জেলাজুড়ে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে, গত কয়েক মাসে দলেরই একটি অংশের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়েছিল এই তারকা সাংসদের। নেপথ্যে ঘাটাল মহকুমার তৃণমূলের এক প্রাক্তন বিধায়কের হাত রয়েছে, দাবি ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের। লাগাতার তাঁকে উত্যক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে বলেও দাবি। সঙ্গে অপর একটি সূত্রের দাবি, সম্প্রতি প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার তরফে স্থানীয় কিছু নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। আর এই ঘটনা খানিকটা ভস্মে ঘি ঢালার মতো কাজ করেছে বলেই মত জেলা রাজনৈতিক মহলের।

স্বচ্ছ ভাবমূর্তি, অনিয়ম থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করা এই তারকা সাংসদ বিষয়টি ভালোভাবে নেননি। জেলার এক প্রবীণ নেতা মানছেন, ‘দেবকে নানা ভাবে বিরক্ত করা হচ্ছে। সেটা শুধু যে দলের একটা অংশের দিক থেকে তা নয়, আরও অনেক বিষয় রয়েছে। এর থেকে বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়।’ যদিও তৃণমূলের একটা অংশ বলছে, অভিনয় সামলে একাধিক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারছে না দেব। সেই কারণেই এই সিদ্ধান্ত।

এই ঘটনাগুলি নিয়ে যখন কাটাছেঁড়া চলছে, তখন জেলা রাজনৈতিক মহলের একাংশ ‘ফিরে দেখছেন’ শিশু মেলার বিষয়টি। গত বছর ঘাটাল শিশু মেলার উদ্বোধন করেন রঞ্জিত মল্লিক। ধুমধাম করে মেলার আয়োজন করা হয়। যদিও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত ছিলেন দেব। সেই সময়ও তাঁর অনুপস্থিতি নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন উঠেছিল। যদিও দলের একাংশের দাবি ছিল, পুরোটাই আদতে ‘ফিল্মি ব্যস্ততা’-র জন্য। পাশাপাশি ঘাটাল শিশুমেলায় ‘ওপেন টেন্ডার’ থেকে মেলায় শাসক দলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ধস্তাধস্তির বিষয়টি নিয়ে দেব যথেষ্টই দলের উপর ক্ষুন্ন হন তিনি, ওয়াকিবহাল মহলের দাবি এমনটাই।

ও আগে নায়ক, পরে সাংসদ

নারায়ণ মুখোপাধ্যায়

সম্প্রতি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলকে নিয়ে একটি বৈঠক করেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে বরাবরের মতো দেবের প্রশংসা করতে শোনা যায় দলনেত্রীকে। অন্যদিকে, জেলায় প্রাক্তন বিধায়ক যাঁর সঙ্গে বারংবার দেবের ‘সংঘাত সংবাদ’ সামনে আসে, তাঁকে সতর্ক করেন তিনি। দেবের এই তিনটি কমিটি থেকে পদত্যাগ নিয়ে যখন জল্পনা তুঙ্গে সেই সময় বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলের ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি আশিস হুদাইত ঢাল করেছেন বিরোধীদের। বাংলার শব্দকোষ থেকে বিশেষ কিছু আক্রমনাত্মক শব্দের উপর ভরসা রাখলেন তিনি। একযোগে আক্রমণ করেন বিজেপি ও বামেদের। কিন্তু, দেবের পদত্যাগের কারণ বা এই নিয়ে দলীয় অবস্থান প্রসঙ্গে খুব একটা শব্দ খরচ করেননি তিনি।

Dev Exclusive Interview: ঘাটালে দেবের উপরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভরসা? অভিনেতা সাংসদ নিজে কী বলেছিলেন?

অন্যদিকে, পরিবারের সঙ্গে রাজনীতি বা পদত্যাগ নিয়ে আলোচনা করেননি দেব! তাঁর মামা নারায়ণ মুখোপাধ্যায় স্পষ্ট জানান, তাঁদের সম্পর্কের মধ্যে কোনওদিনই রাজনৈতিক আলোচনা টেনে আনেননি ভাগ্নে। মামাবাড়ির আদর, সম্পর্কগুলোতে বরাবর ভালোবাসার আলো-বাতাস খেলা করে। সেখানে পেশাগত জটিলতা মেশানো বিশেষ পছন্দ করেন না সাংসদ। তবে মামা হিসেবে অভিনেতা দেবকেই এগিয়ে রেখেছেন নারায়ণ মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘ও আগে নায়ক, পরে সাংসদ।’

Dev Resign : লোকসভার আগেই ৩ কমিটি থেকে ইস্তফা, দেবকে নিয়ে তুঙ্গে জল্পনা
একদিকে যখন দেবের ‘ভোট সন্ন্যাস’ নিয়ে কথা চলছে, সেই সময় অনেকে আবার নতুন এক সমীকরণ দেখছেন। শীঘ্রই রাজ্যসভার ভোট। সেক্ষেত্রে দলের তরফে দেবকে নিম্নকক্ষ থেকে সোজা উচ্চকক্ষে পাঠানোর কোনও পরিকল্পনা করা হচ্ছে না তো? তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। রাজ্যসভার সাংসদ হলে কাজের পরিধি অনেক বেশি হলেও তুলনামূলক লোকসভার সংসদ সদস্যদের থেকে পরিশ্রম কিছুটা কম। ফলে তিনি অভিনয় এবং রাজনৈতিক জীবন ব্যালান্স করে এগোতে পারবেন।

শোনা যাচ্ছে, আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি ঘাটালে পা রাখতে পারেন দেব। অনেকেই আশাবাদী, সেই দিনই হয়তো এই বিষয়ে আলোকপাত করবেন তারকা এই সাংসদ।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version