মহারাষ্ট্রের একটি ছোট গ্রামে জন্ম উমেশ গণপতের। বাড়িতে আর্থিক অস্বচ্ছলতা থাকলেও পড়াশোনাটা চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন উমেশ। কিন্তু, সেই দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা। যেখানে জীবনের প্রথম বড় ধাক্কাটা খেয়েছিলেন উমেশ। ইংরেজি পরীক্ষায় মাত্র ২১ নম্বর পেয়ে ব্যর্থতার মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি। ব্যর্থতার চৌকাঠে দাঁড়িয়ে কিছুদিনের জন্য পড়াশোনাকে টা টা বাই বাই করেন। এলাকায় দুধ বিক্রি করতে শুরু করেন এবং তার বাবাকে অন্যান্য বিভিন্ন কাজে সাহায্য করেন।
কিন্তু, মনের মধ্যে একটি চিন্তা কুরে কুরে খেত, 12th Fail- এর বদনাম তাঁকে ঘোঁচাতে হবে। ‘রিস্টার্ট’ করেন নিজেকে। ফের লড়াই শুরু। দূরবর্তী শিক্ষার মাধ্যমে প্রথমে দ্বাদশ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। যে ইংরেজি ভাষা তাঁর গালে সজোরে থাপ্পড় মেরেছিল, সেই ভাষাকেই আঁকড়ে ধরে নতুন উদ্যমে লেগে পড়েন মহারাষ্ট্র মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ভাষায় দূরশিক্ষায় সাম্মানিক স্নাতক হন। বাড়িতে বসেই করে ফেলেন মাস্টার্সও। সেই ইংরেজিতেই। কলেজ পেরিয়ে বসেন ইউপিএসসি পরীক্ষায়। UPSC পরীক্ষায় 704 তম স্থান অর্জন করেন। IPS পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সাফল্য অর্জন করেন উমেশ।
কলেজে পড়াকালীন চাকরির পরীক্ষা দিতে শুরু করেন উমেশ। গওরি ভাইয়ার মতো উমেশেরও কিছু সহপাঠীরা তাঁকে অনবরত শুনিয়ে যায়, ‘হাল ছেড়ো না বন্ধু।’ প্রথমবারের জন্য রাজ্য স্তরের পিএসআই পরীক্ষায় বসেই উত্তীর্ণ হয়েছিলেন উমেশ। তবে লক্ষ্য ছিল আইপিএস। ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য ২০১২ সালে দিল্লিতে যান। তারপর ৩ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রম, হার না মানা লড়াই। সাফল্য এসে দরজায় কড়া নাড়ে ২০১৫ সালে। ইউপিএসসি পরীক্ষায় ৭০৪ র্যাঙ্ক করে উত্তীর্ণ হলেন উমেশ।
IPS উমেশ গণপত খান্ডাবাহালে
আইপিএস হওয়ার পর একাধিক জেলায় কাজ করেছেন। কোচবিহারের দিনহাটায় এসডিপিও পদের দায়িত্বে ছিলেন কিছুদিন। এরপর তিনি আলিপুরদুয়ার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে নিযুক্ত হন। আপাতত তিনি জলপাইগুড়ি পুলিশ সুপার পদে কর্মরত তিনি। ওয়েস্ট বেঙ্গল পুলিশ তাঁর সাফল্যকে তুলে ধরতে একটি ভিডিয়ো প্রেজেন্টেশন তুলে ধরেন। সেখানে উমেশ বলেন, ‘বাবার সঙ্গে যখন চাষবাসের কাজ করতাম, দুধের ব্যবসা ছিল বাড়িতে, সেগুলি দেখাশোনা করতাম। তখনই বারবার মনে হত, না আমাকে ঘুরে দাঁড়াতেই হবে।’ তাঁর সাফল্যকে স্যালুট জানান সকলেই। বর্তমান প্রজন্মের কাছে আরও একটি 12th Fail থেকে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছনোর উদাহরণ হয়ে রইলেন তিনি।