তাপস প্রামাণিক

রাজ্যের আয়ের তুলনায় খরচের বহর দিনকে দিন বেড়েই চলছে। তাই রোজগার বাড়াতে এবার কোমর বেঁধে নামল নবান্ন। তারই অঙ্গ হিসাবে রাজস্ব বিভাগের খোলনলচে বদলের সিদ্ধান্ত নিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। সেই লক্ষ্যে অর্থ দপ্তরের অধীনে একটি পৃথক ‘রাজস্ব সেল’ তৈরি করা হলো। যার নাম রাখা হয়েছে, ওয়েস্ট বেঙ্গল রেভিনিউ সার্ভিস সেল। যাদের প্রধান কাজ হবে বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়ানো এবং রাজস্ব আদায়ের কাজকে আরও সুসংহত করা।

রাজ্য সরকারের অধীনে বিভিন্ন দপ্তর থাকলেও তার মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো রাজস্ব বিভাগ। তার আবার বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা আছে। এই তালিকায় রয়েছে ওয়েস্ট বেঙ্গল কমার্শিয়াল ট্যাক্স সার্ভিসেস, ওয়েস্ট বেঙ্গল এক্সাইজ় সার্ভিস, ওয়েস্ট বেঙ্গল রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড স্ট্যাম্প রেভিনিউ এবং ওয়েস্ট বেঙ্গল এগ্রিকালচারাল ইনকাম ট্যাক্স সার্ভিসেস। এগুলিকে একত্র করে তৈরি হয়েছে ‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল রেভিনিউ সার্ভিস’।

বর্তমানে তারা অর্থ দপ্তরের এক একটি শাখা অফিস হিসাবে কাজ করে। সেজন্য তারা কোনও স্বাধীন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। যে কোনও নতুন পদক্ষেপ করতে গেলে তাদের সবসময়ে অর্থ দপ্তরের মুখাপেক্ষী থাকতে হয়। রাজস্ব বিভাগে নতুন কর্মী নিয়োগ কিংবা কাউকে অন্য জায়গায় বদলি করতে গেলেও অর্থ দপ্তরের কাছে ফাইল পাঠাতে হয়। তার ফলে কোনও সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে গেলে অনেকটা সময় লেগে যায়। তাতে রাজস্ব আদায় ধাক্কা খায়। সেই লাল ফিঁতের বাঁধন থেকে রাজস্ব বিভাগকে মুক্ত করতেই পৃথক সেল তৈরি করল রাজ্য সরকার। তারা শুধুমাত্র রাজস্ব আদায়ের কাজ দেখভাল করবে।

নতুন সেলের কাজের তালিকা

সরকারি নির্দেশনামা অনুযায়ী, সিনিয়র স্পেশাল সেক্রেটারি কিংবা তার ঊর্ধ্বতন কোনও অফিসারকে রেভিনিউ সেলের মাথায় বসানো হবে। এছাড়াও ওয়েস্ট বেঙ্গল রেভিনিউ সার্ভিসের দু’জন ডেপুটি সেক্রেটারি পদমর্যাদার অফিসার, একজন হেড অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং দু’জন আপার ডিভিশন অ্যাসিস্ট্যান্ট রেভিনিউ সেলের কাজকর্ম দেখভাল করবেন। অর্থ দপ্তরের অধীনে থাকলে রাজস্ব আদায়ের বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তারা অনেকটাই স্বাধীনতা ভোগ করবে। তাতে রাজস্ব আদায়ের কাজে গতি বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।

নবান্নের কর্তাদের ব্যাখ্যা, নানা কারণে রাজ্য সরকারের খরচের বহর আগের থেকে অনেকটাই বেড়েছে। ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশ মেনে রাজ্য সরকারি কর্মীদের বর্ধিত হারে বেতন দিতে রাজ্য কোষাগার থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সরকারের আমলে রাজ্যে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রী, স্বাস্থ্যসাথী, খাদ্যসাথী, সবুজ সাথী সহ বিভিন্ন জনমোহিনী প্রকল্প চালু হয়েছে। এর জন্যও বিপুল টাকা ব্যয় হয়। জলজীবন মিশন, এনএইচইউএম-সহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে রাজ্য সরকারকে কোটি কোটি টাকার ম্যাচিং গ্রান্ট দিতে হয়।

কয়েক দিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার টাকা না দিলেও বাংলায় ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে যাঁরা কাজ করেও টাকা পাচ্ছেন না, তাঁদের সমস্ত বকেয়া পাওনা রাজ্য সরকারই মিটিয়ে দেবে। শুধু তাই নয়, বাংলায় প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ আবাস যোজনার বাড়ি তৈরির জন্য যাঁরা এ রাজ্য থেকে আবেদন করে বসে আছেন, তাঁদের টাকাও রাজ্য সরকারই মেটাবে বলে মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ১৯ লক্ষ জব কার্ড হোল্ডারের একশো দিনের বকেয়া মেটাতে আনুমানিক ৭ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে।

West Bengal Government : রাজ্যকে ৪৫৬ কোটি বরাদ্দ কেন্দ্রের, মমতার ধরনার দিনই বড় সিদ্ধান্ত
সামনেই আবার রাজ্য বাজেট রয়েছে। সামনে লোকসভা ভোট থাকায় রাজ্য বাজেটে একাধিক নতুন জনমুখী প্রকল্প ঘোষণা করতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। ফলে রাজ্য সরকারের ঘাড়ে পাহাড়প্রমাণ খরচের বোঝা চাপতে চলেছে। সেই অর্থ জোগাড় করতে গেলে রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ানো ছাড়া রাজ্য সরকারের সামনে আর কোনও বিকল্প নেই। তাই রাজস্ব বিভাগের খোলনলচে বদলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার।

অর্থ দপ্তরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘২০২২-২৩ সালে যে পরিমাণ রাজস্ব আদায় হবে বলে ভাবা হয়েছিল, বাস্তবে তার থেকে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা কম হয়েছিল। আবগারি ও জিএসটি থেকেও রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। এ বছর আবগারি থেকে ভালো রাজস্ব আদায় হলেও অতিরিক্ত ব্যয়ের কারণে রাজকোষে ঘাটতি কমবে না। সেজন্য আমাদের এখন একটাই লক্ষ্য, যে কোনও মূল্যেই হোক রাজস্ব আদায় বাড়ানো।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version