বুধবার হাওড়ার প্রশাসনিক সভায় রাজ্য বাজেট প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘আগামী দিনে কী করব শুনলে চমকে যাবেন।’ বৃহস্পতিবার বিকালে বিধানসভায় সেই প্রসঙ্গ তুলে মমতা বললেন, ‘বলেছিলাম না চমকে যাবেন!’ জ্বরে খানিক দুর্বল, বার বার কাশির দমক আসছে। কিন্তু তারপরেও মমতার বডি ল্যাঙ্গুয়েজে তখন আত্মবিশ্বাসের ঝলক স্পষ্ট। রাজনৈতিক মহলের একটা বড় অংশ মানছেন, বৃহস্পতিবারের বাজেট মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে খানিকটা ‘এলেন, দেখলেন জয় করলেন’-র মতো।

কেন বলা হচ্ছে এ কথা? রাজনৈতিক মহল থেকে প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশ মানছেন, প্রথম মাস্টারস্ট্রোক যদি ফের ৪ শতাংশ DA বৃদ্ধি হয় তবে দ্বিতীয়টা অবশ্যই সরকারি একাধিক প্রকল্পের ভাতা বৃদ্ধি। তবে মমতা সরকারের এই বাজেট যে ‘মা-মাটি-মানুষের’ তৃণমূল স্তরের নেতা-নেত্রীদের প্রচারের জোয়ারে আনতে পারবে তা নিয়ে কিন্তু কারও সন্দেহ নেই।

ওয়াকিবহাল মহলের মতে, গত বছরের মাঝে DA আন্দোলন নিয়ে মমতার কিছু বক্তব্যে সরকারি কর্মচারীদের একটা অংশের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে। কিন্তু, গত বছর ডিসেম্বর আচমকাই ৪ শতাংশ DA ঘোষণা করে চমকে দিয়েছিলেন মমতা। গত বছর বাজেটে ডিএ নিয়ে ঘোষণা ছিল। এ বছর অনেকেই কিন্তু সে আশা দেখেননি। কারণ, এ মাসেই বর্ধিত হারে ডিএ সহ মাইনে ঢুকেছে। কিন্তু টিভির পর্দায় ফের DA বৃদ্ধির খবর শুনে অনেকেরই মনে তিতক্তা কিছুটা কাটতে শুরু করেছে। রাজ্যের অনেক মন্ত্রীকেই ডিএ নিয়ে প্রশ্ন করলে উত্তরে শোনা যায়, ‘মুখ্যমন্ত্রী সাধ্যমতো চেষ্টা করেন।’ এদিন কিন্তু মমতা বুঝিয়ে দিয়েছেন আদতেই চেষ্টাটা জারি রয়েছে।

নিন্দুকেরা অনেকেই বলছেন, বাজেটে চমকের পর চমক। ভোট সামনে বলেই এরকম একটি বাজেট করা হয়েছে। কিন্তু, এ কথা অনেকেই মানতে বাধ্য হচ্ছেন, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার থেকে কন্যাশ্রী, তরুণের স্বপ্ন, সিভিক থেকে গ্রিন পুলিশ, অবসরকালীন ভাতা বৃদ্ধি- এই বাজেটে এমন কোনও সেক্টর নেই, এমন কোনও বয়সের মানুষ নেই যে কোনও না কোনওভাবে এদিনের এই বাজেট থেকে লাভবান হবেন না। অন্তত রাজনৈতির মহলের একাংশ এমনটাই মনে করছেন। নবান্নের ‘পাওয়ার করিডরে’ এদিন বাজেট ঘোষণার পর থেকে শোনা গিয়েছে, ‘লক্ষ্মীবারে-লক্ষ্মীলাভ’। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে ভাতা বৃদ্ধি হয়ে বছরে ১২ হাজার হতেই অনেক তরুণীও খোঁজ নিতে শুরু করেছেন কী ভাবে এই টাকা পাওয়া যায়। মৎসজীবী থেকে শুরু করে গ্রামোন্নয়ন এবং নারী কল্যাণ সব কিছুই যে মমতা সরকারে নজরে আছে তা বাজেট ঘোষণার সময় পরতে পরতে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য তা বুঝিয়ে দিয়েছেন।

DA Hike West Bengal : লোকসভার আগে সরকারি কর্মীদের ক্ষতে মলম, ৪ শতাংশ ডিএ বৃদ্ধির ঘোষণা
বাজেট থেকে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধেও কড়া বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ১০০ দিনের কাজে যুক্ত শ্রমিকদের টাকা দিতে অর্থ বরাদ্দ করেছেন। সঙ্গে কর্মশ্রী প্রকল্পের ঘোষণা করেন তিনি। ৫০ দিনের কাজের কথা বলা হয়েছে এই প্রকল্পে। রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ বাদ যায়নি কিছুই। ঢালাও উন্নয়নের ঘোষণা এই বাজেটে। সঙ্গে রাজ্যের যে এত দেনার পরেও শ্রীবৃদ্ধি হয়েছে সেই দাবিও করা হয়েছে। দিন শেষে চেনা মেজাজেই মমতা বললেন, ‘আমরা যা করি, তা দেশে কেউ করতে পারে না। বিশ্বসেরা করে যেতে চাই।’ এদিন বাজেট শেষে বিধানসভায় দাঁড়িয়ে এক তৃণমূল বিধায়কই বললেন, ‘জনমুখী বাজেটের ইতিহাস রচনা করলেন মমতা। কী নেই!’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version