এই সময়, বালি: এইবার আরও বেশি উৎসাহ, আরও বেশি উদযাপন নিয়ে তৈরি দেবারতি, দেবদত্তা। তৈরি স্কুলের বাকি ছাত্রী, শিক্ষিকারাও। সরস্বতী পুজো নিয়ে পড়ুয়াদের মধ্যে আনন্দ সবসময় দেখা যায়। সেদিন কী পরবে, কী ভাবে পুজোর আয়োজন হবে তা নিয়ে মাসখানেক আগে থেকেই চলে প্রস্তুতি। সে সবের মাঝেই তথাকথিত সমাজপতিদের ভ্রূকুটি উপেক্ষা করে এ বারও বালি বঙ্গশিশু বালিকা বিদ্যালয়ে সরস্বতী পুজোয় পুরোহিত স্কুলেরই দুই ছাত্রী।

যারা আবার সম্পর্কে দুই বোন। শিক্ষিকারা জানিয়েছেন, ২০২৩ সালে প্রথম এই দুই ছাত্রী পুরোহিত হিসেবে স্কুলের সরস্বতী পুজো করেছিল—দশম শ্রেণির দেবারতি চক্রবর্তী ও একাদশের দেবদত্তা চক্রবর্তী। সুকুমার রায়ের আবোল তাবোলের শতবর্ষকে স্মরণে রেখে এ বার স্কুলের সরস্বতী পুজোর থিমও আবোল তাবোল।

শিক্ষিকা সোনালি দত্ত বলেন, ‘সে সময়ের বাবু সংস্কৃতি ও সমকালীন সমাজ রাজনীতির তির্যক পর্যবেক্ষণ ধরা পড়েছিল আবোল তাবোলে। আবোল তাবোলের শতবর্ষকে স্মরণ করেই এ বারে থিম করা হয়েছে। এর থেকে ভালো থিম আর কিছু হয় না।’ সরস্বতী পুজো উপলক্ষে তাই বালি বঙ্গশিশু বালিকা বিদ্যালয়ের অন্দর সেজে উঠছে হুঁকোমুখো হ্যাংলা থেকে শুরু করে কাঠবুড়ো, রামগরুড়ের ছানা, হাঁসজারু, খুড়োর কল এমন সব আবোল তাবোলের বিভিন্ন চরিত্রে।

প্রাচীন জনপদে ছাত্রীরা সরস্বতী পুজো করবে, এমন ছকভাঙা পুজোর প্রচলন মোটেই সহজে হয়নি। এসেছে প্রতিবাদ। আপত্তি তুলেছিলেন কেউ কেউ। তবে ছাত্রীদের প্রবল উৎসাহে আর শিক্ষিকা ও অভিভাবকদের বড় অংশের সমর্থনে সে সব ধোপে টেকেনি। তাই এ বার আরও বেশি উৎসাহ, আরও বেশি উদযাপন নিয়ে তৈরি দেবারতি-দেবদত্তারা। ছোট থেকে পারিবারিক পরিবেশে সরস্বতী পুজো করতে করতে করতে দুই বোন পুজোর বিধি মন্ত্রোচ্চারণ ও আচার ইত্যাদিতে পোক্ত হয়ে উঠেছে। সেই আত্মবিশ্বাসই তাদের আরও সাহসী করে তুলেছে।

বালি নর্থ ঘোষপাড়ার বাসিন্দা দেবদত্তা ও দেবারতি জানিয়েছে, ওদের বাবা শঙ্কর চক্রবর্তীর কাছেই পুজোর প্রশিক্ষণ নিয়েছে তারা। বাবার সঙ্গেই বিভিন্ন যজমানের বাড়ি পুজো করতে যাওয়া তো ছিলই। দরকারে দুই বোন বাবার যজমানদের অনেকের বাড়িতে সরস্বতী, লক্ষ্মী বা শিবপুজো করে দিয়ে আসে। বিষয়টি জানতে পারেন স্কুলের শিক্ষিকারা। সেই থেকেই আগের বছর স্কুলের পুজো করার প্রস্তাব আসে।

দিদিমণিদের উৎসাহ ও সমর্থনে ওরাও এগিয়ে যায়। ওদের পুজো দেখতে যেমন উৎসাহ ছিল স্কুলের অন্য ছাত্রীদের তেমনই স্থানীয় ও অতিথিরাও মেয়েদের পুজোর অনুষ্ঠান দেখে প্রশংসা করেন। দেবদত্তা বা বোন দেবারতির চায়, তাদের অনুপস্থিতিতে স্কুলের পুজো পরবর্তী ছাত্রীরাই চালিয়ে নিয়ে যাক। তাই এ বারই তারা অন্য দশম শ্রেণির দুই ছাত্রীকে তাদের সঙ্গে পুজোয় সাহায্যকারী হিসেবে প্রশিক্ষিত করার কথা ভেবেছে।

Kolkata Weather : দক্ষিণের আকাশে ফের মেঘ, আট জেলায় বৃষ্টির পূর্বাভাস
ধীরে ধীরে তারাও যাতে স্কুলের সরস্বতী পুজো করতে পারে, তাই এই ভাবনা দেবারতিদের। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা নবালি ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমাদের পুজোয় ভেদাভেদ নেই। আমাদের মেয়েদের পুজো মেয়েরাই করবে। আমাদের মেয়েরা সব কাজে পারদর্শী। ওরা নিজেদের প্রস্তুত করেছে। পুজোর যাবতীয় দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে নিয়েছে। আমরা শিক্ষিকারা ওদের সঙ্গে আছি।’

স্কুলের সরস্বতী পুজোর দায়িত্বে রয়েছেন সহ শিক্ষিকা সোনালি দত্ত এবং সঙ্ঘমিত্রা বাগ। মেয়েরা যাতে আনন্দে ও শান্তিতে সরস্বতীর আরাধনায় ব্রতী হয় সে জন্য মেয়েদের সঙ্গে তাঁরাও খেটে চলেছেন।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version