সরস্বতী পুজো, অর্থাৎ বিদ্যাদেবীর আরাধনা। আর সেক্ষেত্রে যে কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাগদেবীর আরাধনা হবে সেটাই স্বাভাবিক। বিদ্যালয়ে দেবী সরস্বতীর আরাধনা হবে তার মধ্যে অবশ্য নতুনত্ব কিছু নেই। তবে তারই মধ্যে কোথাও কোথাও দেখা যায় অভিনব কিছু উদ্যোগ। যেমন গরফা ধীরেন্দ্রনাথ মেমোরিয়াল উচ্চমাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়। এই বছর গরফার এই স্কুলে একটু অন্যরকম ভাবনা নিয়ে আয়োজিত হল সরস্বতী পুজো।

সরস্বতী পুজো মানেই পুরোহিতদের ব্যস্ততা দেখতে অভ্যস্ত প্রায় সকলেই। তবে সেই চেনা ছবি থেকে সরে এসে এবার বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পুজোর দায়ভার ন্যস্ত করে ওই স্কুলের সংস্কৃত শিক্ষিকা শ্রীমতী অর্পিতা বৈদ্যর হাতে। আর অভিনব এই আয়োজনকে ঘিরে স্কুলের অন্যান্য শিক্ষিকা এবং ছাত্রীদের মধ্যে উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মত। শিক্ষিকাদের মতে, মহিলা পুরোহিত, এই ধারণা এখন আর নতুন নয় ঠিকই, তবে স্কুলের শিক্ষিকা পুজো করছেন এতে সমস্ত ছাত্রীরা আরও বেশি একাত্ম বোধ করবে। পুজোয় আগে এটাই ছিল ভাবনা, আর বাস্তবেও তেমনটাই দেখা গেল।

স্কুলের শিক্ষিকারা বলছেন, ‘আমরা মেয়েদের এই শিক্ষাই দিতে চাই, নিজের সংস্কৃতিকে ধরে রাখ, কিন্তু যে সংস্কার পিছনে টানে তাকে ফেলে এগিয়ে চল। তাই অর্পিতা বৈদ্যর সুচারু পুজোর মাধ্যমে ছাত্রীদের হাত ধরে বিদ্যালয় পা বাড়াল নতুন এক আঙিনায়।’ অন্যদিকে সরস্বতী পুজোয় হাতেখড়ির এক বিশেষ ঐতিহ্য রয়েছে। আর সেই ঐতিহ্যতে ধরে রেখেই এদিন বিদ্যালয়ে হাতেখড়ি হল সেখাকারই এক শিক্ষিকার কন্যার। মহিলা পুরোহিতের কাছ থেকে হাতেখড়ির ঘটানও কার্যত নয়া নজির সৃষ্টি করল বলেই মনে করা হচ্ছে। এদিকে স্কুলের শিক্ষিকাকে পুরোহিতের ভূমিকায় দেখে, বিশেষ উৎসাহ লক্ষ্য করা যায় বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের মধ্যে। বলতে গেলে স্কুলের এবারের বাগদেবীর আরাধনায় অন্যতম আকর্ষণই হল অর্পিতা বৈদ্যর নিষ্ঠাপূর্ণ পুজো।

প্রসঙ্গত, এর আগে শহর কলকাতায় দুর্গাপুজোয় দেখা গিয়েছে মহিলা পুরোহিত। ২০২১ সালে কলকাতায় সর্বপ্রথম মহিলা পুরোহিতদের মাধ্যমে শারদোৎসবের আয়োজন করেছিল কলকাতার ৬৬ পল্লি। নন্দিনী ভৌমিক, রুমা রায়, সেমন্তী বন্দ্যোপাধ্যায় ও পৌলমী চক্রবর্তীকে পুরোহিত হিসেবে সেই বছর দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরবর্তীতে বিষয়টি ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। আর দুর্গাপুজোর পর এবার সরস্বতী পুজোতেও দেখা গেল এহেন এক পদক্ষেপ। সমাজে যে মহিলারা কোনও ক্ষেত্রেই আর পিছিয়ে তা এই ঘটনার মধ্যে দিয়ে আরও একবার প্রমাণিত হল বলেই মনে করা হচ্ছে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version