গৌতম ধোনি কৃষ্ণনগরথানায় গিয়ে বেলা গড়াবে না, তাই কখনও হয়? দেরি হওয়াটাই তো দস্তুর! কখনও বড়বাবু নেই, কখনও নাইট ডিউটি করে ফিরেছি, অপেক্ষা করুন, কখনও বা মার্ডার কেস নিয়ে ঘেঁটে রয়েছি, এমন কথা শুনতে অভ্যস্ত অনেকে। জেনারেল ডায়েরি, কেউ নিখোঁজ হলে অভিযোগ জানাতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েননি, এমন লোক খুঁজে পাওয়া ভার।

থানায় এসে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে গিয়ে যাতে ধৈর্যচ্যুতি না ঘটে সেজন্য থানা ক্যাম্পাসে মিনি লাইব্রেরি চালু হয়েছে নদিয়ার পলাশিপাড়ায়। বইয়ের পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে কিছুটা হলেও থানায় আসা মানুষজন যাতে রিলিফ পান, এমন চিন্তা থেকেই পাঠাগার চালুর উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার প্রাক্তন অতিরিক্ত সুপার (গ্রামীণ) কৃশানু রায়।

তিনি বলেন, ‘থানায় আসা লোকজনের একটু স্বচ্ছন্দ্যবোধের ব্যাপার তো আছেই, সেই সঙ্গে আরও একটা বার্তা রয়েছে এই উদ্যোগের পিছনে।’ কী সেটা? তিনি বলেন, ‘দিনে দিনে যে ভাবে আমাদের মোবাইলে আসক্তি বাড়ছে, তা থেকে বের হয়ে একটু বইমুখী হতে পারার জন্য এই চেষ্টা।’

এ মাসের গোড়ায় পলাশিপাড়া থানায় উদ্বোধন হয়েছে ‘বিবেকানন্দ স্মৃতি পাঠাগার’-এর। পলাশিপাড়া থানা কর্তৃপক্ষ পাঠাগার চালু করলেও পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছেন স্থানীয় উত্তর সাহেবনগর অ্যাথলেটিক ক্লাবের সদস্যরা। ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নিশীথ বিশ্বাস বলেন, ‘অনেকেই আমাদের বই দিয়ে সাহায্য করেছেন। উদ্বোধনের দিনে আমরা প্রায় ৭০টি বই রাখতে পেরেছি।

খুব শীঘ্রই আরও বই আসবে। কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে আগামীতে চাকরির নানা পত্রিকা ও ইতিবাচক খবরের কিছু কাটিংও রাখব ওখানে। আর আঞ্চলিক ইতিহাস নিয়ে কিছু বইও রাখার ইচ্ছে রয়েছে। যাতে থানায় বদলি হয়ে আসা পুলিশকর্মীরা স্থানীয় এলাকার ইতিহাস, সংস্কৃতি দ্রুত জানতে পারেন।’

পেশায় নীচুতলার পুলিশকর্মী হলেও বছরভর সেবামূলক নানা কাজে যুক্ত থাকেন নিশীথ। থানার বড়বাবু সুমিত ঘোষ, তেহট্টের এসডিপিও শুভতোষ সরকার থেকে শুরু করে প্রাক্তন ও বর্তমান পুলিশকর্তাদের প্রিয়পাত্র তিনি। নিজের গ্রাম-সহ গোটা পলাশিপাড়া থানা এলাকায় গাছ লাগানো, বছরভর সেইসব গাছে নজরদারি করেন বলে এলাকায় তাঁকে ‘সবুজবন্ধু’ বলে ডাকেন অনেকে।

রক্তদান শিবির, দুঃস্থদের বস্ত্র দান, অভাবী ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বই-খাতাও বিলি করেন। এ বার স্থানীয় থানায় মিনি লাইব্রেরি গড়ে দিতে পেরে খুবই খুশি তিনি। তাঁর কথায়, ‘ক্লাবের ছেলেরাই থানার পাঠাগার পরিচালনা করবেন। পলাশিপাড়া থানা এখন ভাড়া বাড়িতে চলছে। অল্প জায়গার কারণে বেশি বই এমনকী আলমারিও রাখা যায়নি। শুনেছি ছ’সাত মাসের মধ্যে থানার নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়ে যাবে। তখন আরও বইয়ের জোগান দেব আমরা।’

কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার অমরনাথ কেও এই উদ্যোগের পিছনে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন নিশীথ।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version