সঞ্জয়বাবু জানান, খুবই অল্প বয়সে এই আবাসনে বাসিন্দা হয়ে এসেছিলেন তিনি। মূলত বিদ্যাসাগর কলেজের অধ্যাপকরা যাতে শহরের কাছাকাছি বাড়ি করে থাকতে পারেন, তার জন্যই এই আবাসন তৈরি হয়েছিল। বিধাননগর কলেজের পশ্চিম দিকে এই আবাসনটি ১০ বিঘা জমির উপর। আবাসন তৈরির সময়ে সেটির উল্টো দিকে এখন থাকা বিধাননগর কলেজ, ইন্দিরা ভবন, করুণাময়ীর পুরো এলাকা জুড়ে ছিল লবণহ্রদ।
তখন সারা দিনে সেখান থেকে দু’একটার বেশি বাস মিলত না। এখন অবশ্য সেই চিত্রটা আমূল বদলেছে। আবাসন থেকে ঢিলছোড়া দূরত্বে বিধাননগর পুরনিগম, সিটি সেন্টার, একাধিক হাসপাতাল, হোটেল ও সরকারি দপ্তর। মাথার উপর দিয়ে ছুটছে ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো।
আবাসন সমিতির চেয়ারপার্সন সুরজিৎ মুখোপাধ্যায় জানালেন, আবাসনে দুর্গা, কালী, লক্ষ্মী, সরস্বতী পুজো, দোল সব অনুষ্ঠানেই মেতে ওঠেন আবাসিকরা। রথের দিন কুমোরটুলি গিয়ে দুর্গাপ্রতিমার বায়না দেওয়া হয়। লক্ষ্মণচন্দ্র পালের তৈরি প্রতিমা আসে মহালয়ায়। চতুর্থী থেকে দ্বাদশী পর্যন্ত পুজো হয়।
পুজোর বেশিরভাগ দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নেনে আবাসনের লেডিস ক্লাবের সদস্য, কণিকা দাস, আরতি বন্দ্যোপাধ্যায়, উষা ঠাকুর, স্নিগ্ধা রায়রা। পুজোর সময়ে আবাসনের বাসিন্দারাই কমিউনিটি হলে নাচ, গান-সহ নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। মাটির হাঁড়িতে পুজোর ভোগ যায় প্রত্যেক ফ্ল্যাটে। বিজয়ায় শোভাযাত্রা করে বাবুঘাট যাওয়া হয় প্রতিমা বিসর্জনে। আর কয়েকদিন পরেই দোল। আবাসনে এখন বসন্ত উৎসবের প্রস্তুতি তুঙ্গে।
আবাসন কমিটির সভাপতি শ্যামা দাসের কথায়, ‘এখানে নিজেদের ভালো থাকার পাশাপাশি, অন্যরাও যাতে ভালো থাকেন, সে চেষ্টাও করা হয়। কোভিডে অসংখ্য মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি আমরা। আবাসনে একজন অসহায় মা ও ছেলে আছেন, যাঁদের কোনও আর্থিক সম্বল নেই। তাঁদের চিকিৎসা, খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করছি আমরা।’
আবাসন কমিটির সম্পাদক অর্ক মুখোপাধ্যায়, হিসাবরক্ষক দেবায়ন পাত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, আবাসনের মধ্যে জলা জমা, মশার উৎপাত তেমন নেই। তবে সমস্যা হলো আবাসনের বাইরে রাস্তায় অবৈধ পার্কিং। আর ফুটপাথ দখল হয়ে যাওয়ায় হাঁটার পথ নেই। পাশেই দত্তাবাদে সময়ে-অসময়ে মাইক বাজে। আবাসনে নিরাপত্তারক্ষী থাকলেও সিসিটিভির নজরদারি নেই। তবে গত ২০ বছরে আবাসনে চুরি বা অপ্রীতিকর কোনও ঘটনা ঘটেনি।