অরূপ বসাক: গত ছ’সাত মাস যাবত বন্ধ মাল ব্লকের বাগরাকোট গ্রাম পঞ্চায়েতের সোনালি চা-বাগান। যার ফলে এই চা-বাগানের শ্রমিকেরা খুব কষ্টে দিনযাপন করছেন। বাগান খোলার দাবিতে বিভিন্ন জায়গায় জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি বলে শ্রমিকদের দাবি। ইতিমধ্যে বহু শ্রমিক কাজের সন্ধানে অন্যত্র চলে গিয়েছেন। আজ, শুক্রবার লোকসভা ভোটের প্রথম দফা। সোনালি প্রাইমারি স্কুলে সকাল থেকেই চলছে ভোটদান-পর্ব। এদিন সোনালি চা-বাগানের এই স্কুলে গিয়ে দেখা গেল ভোটারদের লম্বা লাইন। তবে, মনে দুঃখ নিয়েই ভোট দিচ্ছেন শ্রমিকেরা।

আরও পড়ুন: West Bengal Weather Update: অসহ্য! স্বাভাবিকের তুলনায় ৭ ডিগ্রি বেশি হতে পারে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা? বৃষ্টি কবে?

শ্রমিকদের দাবি, গত ছয়-সাত মাস যাবত বন্ধ এই চা-বাগানে খুব কষ্টেসৃষ্টেই আছেন তাঁরা। ছেলেমেয়েদের ঠিকঠাক খাওয়া-দাওয়া করাতে পারছেন না, পড়াশোনা করাতে পারছেন না। তার পরেও তাঁদের ভোট দিতে আসা। তাদের আশা, অন্তত ভোট দিলে যদি বাগান খুলে যায়। 

এদিন সোনালি চা-বাগানের এই স্কুলে মহিলা-পুরুষ সবাই ভোট দিতে এসেছেন। তবে সবারই চোখে-মুখে বিষণ্ণতার ছাপ। সকলের একটাই দাবি, ভোট পর্ব মিটে গেলে যদি চা-বাগানটি খুলে যায়, যদি সেই ব্যবস্থা করে রাজ্য সরকার, সেটুকুই আশা তাঁদের। ইতিমধ্যেই বেহাল এখানকার যাতায়াতের রাস্তাও। এতেও বেশ সমস্যায় পড়েছেন চা-শ্রমিকেরা।

লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সোনালি চা-বাগান। বাগানের শ্রমিকেরা ভোট নিয়ে কী ভাবছেন, সেই প্রশ্নটা তখনই ওঠে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করতেই তাঁদের খোলাখুলি জবাব এসেছিল, তাঁরা মমতাদিদিরই সমর্থক। তবে এবারে কী হবে, এখনও ঠিক করেননি তাঁরা। বাগানে টিনের চালে ঢাকা দুটি বড় বিল্ডিং। একটি রাজ্য সরকারের উদ্যোগে গড়ে ওঠা চা-বাগানের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, অন্যটি শিশুদের জন্য আধুনিক ক্রেশ।  চা-শ্রমিকদের আক্ষেপ, হাসপাতাল বিল্ডিং হয়েছে, তবে বেড, আসবাবপত্র নেই। কবে চালু হবে, তার নিশ্চয়তাও কিছু নেই। আধুনিক ক্রেশ হাউসও খাঁ খাঁ করছে। সমস্যার মূলে যে বাগান বন্ধ থাকা ,তাও জানাতে ভোলেননি তাঁরা।

আরও পড়ুন: Sun Disappeared: ৩০০০ বছর আগে হারিয়ে গিয়েছিল সূর্য! কৃষ্ণের সেই সূর্য ঢেকে ফেলার সঙ্গে কি কোনও যোগ আছে?

তবে কি বাগান খোলার দাবিতে ভোট বয়কটের পথে হাঁটতে চলেছেন সোনালি চা-বাগানের শ্রমিকরা? কোঠি লাইন, জংলি লাইনের কাদামাখা শ্রমিক মহল্লায় ঘুরে বেশ কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলার পর দেখা মিলেছিল বাগানের সাব স্টাফ হিলারিয়াস টিগ্গার। বাগানের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে হিলারিয়াস বলেছিলেন, টানা কয়েকমাস বৃষ্টি এবং সেচের অভাবে ২১৭ হেক্টরের প্ল্যান্টেশন এরিয়ার ৪,৫ এবং ১৪ নম্বর সেকশনের চা-গাছ পুরোপুরি ঝলসে গিয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই ঝলসানো গাছে চা-পাতা পাওয়া যাবে না। বাগানের দায়িত্বভার নিতে নতুন করে যে এক দু’জন এগিয়ে এসেছিলেন, তাঁরাও বাগানের বর্তমান পরিস্থিতি দেখে পিছিয়ে গিয়েছেন। কেউ কেউ আবার বর্তমানের স্থায়ী শ্রমিকসংখ্যা ৩৫৮  জন থেকে কমিয়ে অর্ধেক করার প্রস্তাব রেখেছেন। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ধৈর্যের বাঁধ ভেঙেছে শ্রমিকদের। ভোটের আগে অবিলম্বে বাগানটি পুনরায় চালু করার উদ্যোগ না নেওয়া হলে বাগরাকোট গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত এই চা-বাগানের দুটি বুথের ১৫০০ ভোটাররা একত্রিত ভাবে ভোট বয়কটের মতো সিদ্ধান্ত নিতেও যে পিছপা হবেন না, তা  বুঝিয়ে দিয়েছেন হিলারিয়াস টিগ্গা থেকে শুরু করে সোনালির চা-শ্রমিকরা। তবে দেখা যাচ্ছে, সেই ভাবনা থেকে তাঁরা সরে এসেছেন।

(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)





Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version