সঞ্জয় চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি
পাহাড়ের প্রত্যন্ত এলাকার ফসলের দাম সরাসরি কৃষকদের হাতে তুলে দিতে শিলিগুড়িতে চালু হলো গোর্খে হাট। মূলত নেপালি সম্প্রদায়ের লোকেরাই হাটের বিক্রেতা। তিন সপ্তাহ হলো প্রতি রবিবার শিলিগুড়ির চেকপোস্ট লাগোয়া এলাকার একটি শপিং মলে চালু হয়েছে এই হাট। কেবলমাত্র পাহাড়েই মেলে এমন শাক-সবজির সঙ্গে বিক্রি হচ্ছে ঘি, মধু, পনির।পাওয়া যাচ্ছে নানা ধরনের পানীয় এবং খাবার। একেবারে জমজমাট হাট। গোটা শিলিগুড়ি যেন উপচে পড়ছে সেখানে। মোমোর সঙ্গে পাওয়া যাচ্ছে মিলেটের তৈরি শেল রুটিও। সে সব নিয়ে চলছে হুড়োহুড়ি। এমন অভিনব হাট আয়োজন করার মূল উদ্যোক্তা কালিম্পংয়ের যুবক নরেন্দ্র তামাং। পেশায় সাংবাদিক বলেই পাহাড়ের কৃষকদের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার প্রধান বাধা যে বাজার, সেটা বুঝে গত কয়েক বছর ধরে কাজ করছেন তিনি।

কালিম্পং পুরসভার সাহায্য নিয়ে কালিম্পং বাজারে তিনি চালু করেন ‘বিহিবারের হাট’। নেপালিতে ‘বিহিবার’ মানে বৃহস্পতিবার। সে দিন কালিম্পং বাজার বন্ধ থাকে। তাই সে দিন গ্রামের কৃষকদের জন্য ওই হাট চালু হয়েছে। এ বার সেই ভাবনাকেই তিনি নিয়ে এসেছেন শিলিগুড়িতে। রবিবার শিলিগুড়ির চেকপোস্ট লাগোয়া একটি শপিং মল বন্ধ থাকে।

সেদিন ওই শপিং মলের আঙিনায় চালু হয়েছে গোর্খে হাট। শপিং মল কর্তৃপক্ষ একেবারে বিনে পয়সায় নিজেদের আঙিনা ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন। একটাই শর্ত, হাট শেষে গোটা চত্বর সাফসুতরো করে দিতে হবে। কৃষকেরা মাথা পিছু পঞ্চাশ টাকা করে দেন শপিং মল চত্বর পরিষ্কার করে দেওয়া জন্য। নরেন্দ্র তামাং বলেছেন, ‘গ্রামে যে কৃষক ফসল উৎপাদন করেন, তিনি ন্যায্য দাম পান না। লাভের টাকা গোনেন ব্যবসায়ীরা। সেই কারণে আমার এই ভাবনা। যাতে কৃষকেরা সরাসরি হাটে নিজেদের পণ্য বিক্রি করতে পারেন।’

পাহাড়ে ফসলের দাম নিয়ে কৃষকদের খেদের শেষ নেই। সেটা কমলালেবু হোক আর কালিম্পংয়ের চকোলেট। প্যাকেজিং আর বাজারের অভাবে কালিম্পংয়ের চকোলেট তো কার্যত উঠে যেতে বসেছে। তার মধ্যে ২০২০-২১ সালের লকডাউন পাহাড়ের অর্থনীতিকে আরও দুমড়ে-মুচড়ে দিয়েছে। দেশের নানা প্রান্তে কাজের খোঁজে যাওয়া যুবকেরা গ্রামে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন। কৃষিকাজে অনেকেই ফিরতে চান।

রিম্বিকের বাসিন্দা মিঙ্মা শেরপা যেমন গ্রামের কৃষকদের কাছ থেকে গোরুর দুধ কিনে দার্জিলিংয়ে সরবরাহ করতে গিয়ে একটা ব্র্যান্ডই তৈরি করে ফেলেছেন। দার্জিলিংয়ে ‘রিম্বিক ফ্রেশ’ এখন পরিচিত নাম। কিন্তু বাজারের অভাবে সবাই এই সাহস পাচ্ছেন না। তাঁদের কাছে আশীর্বাদ হয়ে এসেছে গোর্খে হাট। শিলিগুড়ির মতোই এই হাট এখন দার্জিলিং, কার্শিয়াং, এমনকী, মিরিকেই চালু হয়েছে।

Raju Bista : শর্মা-কাঁটা উপড়ে ‘জেন্টলম্যান’ রাজু ফিরবেন কি

কিন্তু পাহাড়ের বাজার আর শিলিগুড়ির বাজারের ফারাকটা মাত্র কয়েক সপ্তাহে টের পেয়েছেন কালিম্পংয়ের রিতা মঙ্গর। তিনি জমিতে উৎপাদিত আতপ চাল, যব, পাহাড়ি আলু, শাক-সবজি নিয়ে বসেছেন। তিনি বলেন, ‘শিলিগুড়িতে পাহাড়ের সামগ্রীর কতটা চাহিদা, সেটা জানি। কিন্তু এখানে বসার জায়গা কোথায়? গোর্খে হাট চালু হওয়ায় সুবিধে হলো।’

কার্শিয়াং থেকে এসেছেন ললিতা থাপা। তিনি ঘি, এবং মধু বিক্রি করছেন। তাঁর কথায়, ‘পাহাড়ে এসব জিনিসের কদর থাকলেও দাম তেমন একটা মেলে না। শিলিগুড়িতে সেই সমস্যা নেই।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version