লড়াইটা দুই দিদির। সরাসরি কোথাও নেই তিনি। নিজের কেন্দ্র ছেড়ে ঘাঁটি গেড়েছেন অন্যত্র। কিন্তু মেদিনীপুরে ভোটভূমে তিনি আছেন প্রবল ভাবেই। দলের কর্মী থেকে প্রার্থীদের মুখে তো বটেই, প্রতিপক্ষ তৃণমূল প্রার্থী জুন মালিয়ার মুখেও ফিরে ফিরে আসছে দিলীপ ঘোষ। পানীয় জল থেকে রাস্তা, সেতু থেকে কর্মসংস্থান — তপ্ত ভোট-বাজারে ইস্যুর কমতি নেই। কিন্তু দিলীপ নতুন কেন্দ্রের ভোটের কুশীলব হলেও পুরোনো কেন্দ্রের ইস্যু বনে গিয়েছেন।এ প্রসঙ্গে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে তিনি অবশ্য বলছেন, ‘লোকে ভালোবাসলে আর কী করার থাকতে পারে!’ এমন অবস্থায় তৃণমূলের জুন বলছেন, ‘দিলীপদাকে মানুষ গতবার যে ভালোবাসা দিয়েছিল, এ বার তা আমি পাচ্ছি।’ বিজেপির প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পল আবার জানাচ্ছেন, দিলীপের আশীর্বাদই তাঁর বড় শক্তি। দাঁতনের মোহনপুরে বড় রাস্তা থেকে যে লাল মোরামের রাস্তা সরু থেকে আরও শীর্ণ হয়ে গ্রামের পুকুরপাড় হয়ে চণ্ডীমণ্ডপে পৌঁছেছে, চাঁদি ফাটা গরমে সেই মণ্ডপেই পাওয়া গেল জুনকে।

তিনি খোল-করতাল বাজিয়ে হরিনাম সংকীর্তনে ব্যস্ত। সেখান থেকে শিয়ালসাই হয়ে ভরদুপুরে জেনকাপুর। ঘরে বেড়াচ্ছেন মেদিনীপুরের বর্তমান বিধায়ক। সর্বত্রই মন্দিরে পুজো দিয়ে জনতার ভিড়ে মাইক ধরে দু’এক কথা বলতে হচ্ছে। যেখানেই নামছেন, মহিলারা ভিড় জমাচ্ছেন। উল্লেখযোগ্য হলো, সেই ভিড়ে আট থেকে আঠারোর হয়ে থাকছেন আশির মহিলাও। ছেলে-ছোকরার ভিড়ও কম নয়। শুধু দু’-চার কথা বলাই তো নয়, মেটাতে হচ্ছে হাজারো আব্দার।

কারওর সঙ্গে সঙ্গে সেলফি তোলা, তো কারও সঙ্গে হাত মেলানো। কোথাও আবার নানা দাবিদাওয়াও শুনতে হচ্ছে। ভালোবাসার ঠেলায় মাঝেমধ্যে আঁচড়ও পড়ছে হাতে-পায়ে। তবে সে সবে দমছেন না জুন। বলছেন, ‘ওঁদের ভালোবাসর জন্যই তো এই ভোটের ময়দানে এসে দাঁড়িয়েছি।’ শেষ পর্যন্ত একটু ফুরসত যখন মিলল, মুখে-চোখে জল দিয়ে খেতে বসলেন। এক কর্মীর বাড়িতে ব্যবস্থা। পোলাওয়ের বদলে চেয়ে নিলেন সাদা ভাত। টক-দই থেকে শুক্ত, মাছের ঝাল খেলেন মন দিয়ে। এই হরিনাম, ঠা ঠা রোদে দাঁড়িয়ে সেলফি তোলা, এ সব করে ভোট বৈতরণী পেরোনো যাবে?

এ তো বিজেপির জেতা আসন! জুনের যুক্তি অবশ্য অন্য। তিনি বললেন, ‘২০১৯ আর ২০২৪ এক নয়। মানুষ সে বার যে কোনও কারণেই হোক, আমাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু গত বিধানসভা ভোটে আমাদের ভোট ফিরেছে। দিলীপদা ভালো মানুষ। কিন্তু মানুষের দাবি তো অনেকাংশেই মেটেনি। আবার দিলীপদার লোকেরাই আমাদের সঙ্গে এসে ভোট করছেন।’

Dilip Ghosh : দিলীপের মনোনয়নে শমীক, রাজু, সায়ন্তন

সংযোজন, ‘শুধু তাই নয়, বিধায়ক হিসেবেও মানুষ দেখেছে, আমাকে সব সময়ে পাওয়া যায়। আর দিদির ক্যারিশমা তো রয়েইছে। এ বারের ফল অন্যরকম হবে।’ তাই কি? মানছেন না অগ্নিমিত্রা। ভোটের লড়াইয়ে তিনি চরকি কাটছেন এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। সকালে এগরা, তো বিকেলে খড়্গপুর। বলছেন, ‘যে যাই বলুক, মানুষ আমাদের দু’হাত ভরে ভোট দেবে। যেখানে যাচ্ছি, মানুষ তৃণমূলের দুর্নীতির কথা বলছেন। গত বারের থেকে অনেক বেশি ভোট পাব আমরা।’

কিন্তু তাঁর দলের অন্দরে কান পাতলে যে অন্য গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে! দিলীপের দীর্ঘদিনের অনুগামীরা নাকি এ বার একটু দূরে দূরে থাকছেন। মোটেও পাত্তা দিচ্ছেন না অগ্নিমিত্রা। তিনি বলেন, ‘এ সবই বিরোধীদের অপপ্রচার। দিলীপদার আশীর্বাদ নিয়েই লড়তে এসেছি।’ দিলীপ কী বলছেন? তাঁর কথায়, ‘দীর্ঘদিন পড়ে থেকে সংগঠন তৈরি করেছি। সব কিছু সাজিয়ে রেখেছিলাম। এখন যদি কেউ কোনও কারণে বিমুখ হন, তার দায় আমি কী করে নেব। তবে লড়াই হবে।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version