এই সময়: ভোট কাটাকাটিতে যদি বিজেপি জিতে যায়, তা হলে ক্ষমতায় এসেই নরেন্দ্র মোদীর সরকার এনআরসি করবে বলে সংখ্যালঘুদের সতর্ক করলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এই কাটাকাটির অঙ্কে সিপিএম-কংগ্রেসের প্রত্যক্ষ ভূমিকাও দেখছেন তিনি। তাই এই দুই দলকে ভোট না-দেওয়ার আর্জিও সংখ্যালঘু ভোটারদের কাছে রবিবার রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী।২০২১-এর বিধানসভা ভোটে যে ভাবে সংখ্যালঘুরা একজোট হয়ে জোড়াফুলকে সমর্থন করেছিলেন, এই লোকসভা নির্বাচনেও সে ভাবে একজোট থাকার আহ্বান জানিয়েছেন মমতা। মালদার দু’টি লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল, বিজেপি এবং বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থীর ত্রিমুখী লড়াই হতে চলেছে।

এই রাজনৈতিক সমীকরণের দিকে তাকিয়ে রবিবার সুজাপুরের সভায় মমতা বলেন, ‘সংখ্যালঘু ভাই-বোনেদের বলি, এটা দিল্লিতে মোদীর গদি উল্টোনোর নির্বাচন। মোদীর যদি গদি উল্টোতে হয়, তা হলে সব ভোট এককাট্টা করে রাখবেন। কংগ্রেস প্রার্থী দিয়েছে তার কারণ বিজেপির দুটো চোখের একটা কংগ্রেস, একটা সিপিএম। তাই মুর্শিদাবাদে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন সেলিম। এখানে একজন, রায়গঞ্জে একজন দাঁড়িয়েছেন। যদি ভোট কাটাকাটির জন্য বিজেপি জিতে যায় ক্ষতি কিন্তু শেষ পর্যন্ত আপনাদেরই, এটা মনে রাখবেন।’

দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বলবৎ করা, ওয়ান নেশন ওয়ান ভোট— ক্ষমতায় এলে এমন নানা অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়িত করার পরিকল্পনা করেছে বিজেপি। তৃণমূল নেতৃত্ব মনে করছেন, সে ক্ষেত্রে সিএএ-র পর এনআরসি করার পথেও যেতে পারেন মোদী। মালদা ও মুর্শিদাবাদ জেলার লোকসভা কেন্দ্রগুলিতে সংখ্যালঘু ভোট ভাগাভাগি হয়ে গেলে গেরুয়া শিবির তার ফায়দা তুলতে পারে বলে অঙ্ক তৃণমূলের একাংশের। তখন বাংলা থেকে বিজেপির ঝুলিতে বাড়তি আসন যাওয়ার সম্ভবনা তৈরি হবে।

তাই সংখ্যালঘু ভোটারদের উদ্দেশে মমতার বার্তা, ‘আপনারা যদি একটু ভুল করে ভোট কাটাকাটি করে দেন, বিজেপি যদি ক্ষমতায় এসে যায়, এ বার গায়ের জোরে এনআরসি করে আপনাদের ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেবে। আমরা থাকতে এটা করতে দেবো না।’

মমতা বাম-কংগ্রেসকে ‘বিজেপির চোখ’ বলার জবাবে অধীর চৌধুরী মুর্শিদাবাদের প্রসাদপুরের সভায় বলেন, ‘২০১৯ সালেও তৃণমূল বলেছিল, অধীর চৌধুরী ভোটের পরে বিজেপিতে যাবে। আমাদের মুসলিমদের শত্রু বলে প্রচার করা হয়েছিল। ধর্মীয় সুড়সুড়ি দেওয়া হয়েছিল। তবুও মানুষ কংগ্রেস প্রার্থীদের জয়ী করেছিলেন।’ সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘মালদা, মুর্শিদাবাদ-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে মানুষ তৃণমূলের পাশ থেকে সরে যাচ্ছে বুঝতে পেরেই উনি সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতি শুরু করেছেন। কিন্তু মানুষ জানেন বাংলায় বিজেপির সঙ্গে জোট করে লোকসভা থেকে পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলই লড়ছে।’

এদিন মমতার বক্তব্যে আসে ‘ইন্ডিয়া’ প্রসঙ্গও। তাঁর কথায়, ‘কংগ্রেসের নেতৃত্বকে বলেছিলাম দুটো সিট দিচ্ছি, তোমরা সিপিএমের সঙ্গে জোট কোরো না। কিন্তু ওঁরা কথা শোনেননি। এই ইন্ডিয়া জোট আমি তৈরি করেছি, যা দেখে মোদী থর-থর করে কাঁপে। যদি দিল্লিতে বিজেপিকে রুখতে চান, বাংলায় ভোট কাটাকাটির রাজনীতিতে দয়া করে এ বারে যাবেন না। আমরাও (ভোট কাটাকাটি) করতে যাইনি অন্য কোথাও। ইচ্ছা করলে অনেক জায়গায় কনটেস্ট করতে পারতাম।’

CPIM-এর কাছে আত্মসমর্পণের প্রশ্ন নেই, কংগ্রেসকে বারণ করেছিলাম: মমতা

এই আহ্বানের পাশাপাশি তৃণমূল জমানায় রাজ্যে মুসলিমদের উন্নয়নে কী কী কাজ হয়েছে, তার বিশদ বিবরণ দিয়েছেন মমতা। রাজ্যে সংখ্যালঘু উন্নয়নের বাজেট বাম আমলের তুলনায় কতটা বাড়ানো হয়েছে, সে উল্লেখ করেছেন তৃণমূলনেত্রী। এমনকী তৃণমূলের সংসদীয় দলেও সংখ্যালঘুদের কী ভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় তা বোঝাতে মমতা বলেন, ‘মৌসম নূরকে রাজ্যসভার সাংসদ করেছি। আমাদের তেরোটি রাজ্যসভায় আসনের মধ্যে চার জন মুসলিম রয়েছেন। ডেরেক সংখ্যালঘু, তিনিও রয়েছেন। আমরা সাধ্যমতো করি।’

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সুজাপুর থেকে তৃণমূল প্রার্থী আব্দুল গনি রেকর্ড ভোটে জয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু পরে এই বিধায়কের কাজকর্ম নিয়ে তৃণমূলের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়। তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের অনুমান, গনিকে প্রার্থী করা ভুল হয়েছে বলেও এ দিন মমতা বোঝাতে চেয়েছেন। এ দিন তৃণমূলনেত্রী জানিয়েছেন, তিনি নিজে সুজাপুর বিধানসভার কাজকর্ম দেখবেন— ‘আমি ভুল স্বীকার করছি। বিধানসভা নির্বাচনে আপনারা গনি সাহেবকে জিতিয়েছেন, আমরা তাঁকে ওয়াকফের চেয়ারম্যান করেছি। কিন্তু তিনি এলাকায় আসতে সময় পান না। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিলাম এই কেন্দ্র আমি নিজে দেখব, আশিস (আশিস কুণ্ডু, মালদা জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র) দেখবে, আমাকে রিপোর্ট করবে। যেটা প্রয়োজন আমি দেখে দেবো।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version