মানস রায়
এই সময়, মালদা: ভালো রেজাল্ট করা পড়ুয়াদের মাঝে সুপ্তোত্থিতার যাপন যেন একটু অফবিট। সুপ্তোত্থিতা সরকার। মালদার হবিবপুর ব্লকের বুলবুলচণ্ডী গিরিজাসুন্দরী উচ্চ বিদ্যালয়ের কলা বিভাগের ছাত্রীটি এবারের উচ্চ মাধ্যমিকে মেধা তালিকায় পঞ্চম স্থান পেয়েছে। কিন্তু গতানুগতিক মেধাবী ছাত্রীর বাইরে তাঁর আরও একটা পরিচয় রয়েছে। সুপ্তোত্থিতা ব্যস্ত ট্র্যাভেল ভ্লগার! গান, আবৃত্তি, ডিবেট, কুইজ … হ্যাঁ, এত্ত সব এক্সট্রা-কারিকুলামে জুড়ে থাকলেও পড়াশোনাটাও সিরিয়াস ভাবেই করেছেন সুপ্তোত্থিতা। ভবিষ্যতে অধ্যাপনার ইচ্ছে রয়েছে। প্রিয় বিষয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান।সুপ্তোত্থিতা এমন অফবিট যাপনের অঙ্কুরকে লালন করার জন্য প্রয়োজনীয় জল হওয়া পেয়েছেন বাড়ি থেকেই। বাবা প্রান্তিক সরকার পেশায় শিক্ষক হলেও নেশা ওয়াইল্ড লাইফ ফোটোগ্রাফি। ক্যামেরা কাঁধে পাহাড়-বন-জঙ্গলে ঘুরে বেড়ান। তবে একা নন, নিয়ে যান পরিবারকে। ফলে ছোট থেকেই বাবা-মায়ের সঙ্গে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে সেই নেশা রক্তে মিশে গিয়েছে মেয়েরও। করোনাকালে সেই নেশাকেই ভিত্তি করে একটা সুপ্ত ইচ্ছেকে রূপ দেওয়া শুরু। মাধ্যমিকের আগে উত্তরবঙ্গে পাহাড়ে ঘুরতে গিয়ে প্রথম মোবাইলে খেয়ালের বশে তুলে ভ্লগ বানান।

এখন ওঁর ‘বার্বিজ জার্নি এনজয়’ ট্র্যাভেল ভ্লগ বেশ পরিণত ও জনপ্রিয়। উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের আনাচ-কানাচে ঘুরে ভ্লগগুলি বানিয়েছেন। ভিউয়ার্সও বেশ ভালোই। শুধু উচ্চ মাধ্যমিকের জন্য মাস কয়েক বাইরে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ফলে ভ্লগও তৈরি করা হয়নি। সেই সময়টায় ভিউয়ার্স কমায় একটু মন খারাপ হয়েছিল তাই। তবে সেই সময়টাতে মন ভরে নিজের জেলা ঘুরে বেড়িয়েছেন কন্যে। পরীক্ষা মিটতেই ফের ক্যামেরা-গিম্বল হাতে দৌড় এদিক-ওদিক।

কিন্তু পড়াশোনা আর ঘুরে বেড়ানো — দু’টো যে দুই মেরুর! অন্তত জেনারেল পারসেপশন তো তাই-ই। এই তীব্র প্রতিযোগিতার যুগে এদের ব্যালেন্স করার কৌশলটা কী? সুপ্তোত্থিতা প্রশ্নটায় অবাক হন না একফোঁটাও। বলেন, ‘ঘুরতে গিয়ে এই প্রশ্নটা আমাকে বহুবার বহু জনের কাছ থেকে শুনতে হয়েছে। উত্তরটা সোজা। ঘুরে বেড়ানো আমার অক্সিজেন।

প্রকৃতির কোলে ঘুরে বেড়িয়ে, নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হয়ে আমি যখন বাড়ি ফিরে আসি, তখন পড়াশোনা করার উৎসাহটা আরও বেড়ে যায়।’ তবে এই থট প্রসেসের পিছনে বাবা-মায়ের অবদানটা উল্লেখ করতেও ভুললেন না তিনি। বললেন, ‘আমি লাকি যে ছোট থেকেই আমাকে পড়াশোনা কেউ চাপিয়ে দেয়নি। সব কাজের সঙ্গেই পড়াশোনাটাও ভালবেসে করতে শিখিয়েছেন ওঁরা। ফলে কোনও সমস্যা হয় না।’

তবে সুপ্তোত্থিতা কি বোহেমিয়ান?
একদমই নয়, ট্র্যাভেল প্ল্যানের মতোই পড়াতেও নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছিল বলে জানালেন সুপ্তোত্থিতা। তাঁর কথায়, ‘এইচএস-এর পুরো পড়াটাকে তিন ভাগে ভাগ করে নিয়েছিলাম। বিগিনার্স, ইন্টারমিডিয়েট ও অ্যাডভান্স। সেই মতোই প্ল্যান করে পড়েছি।’ মাধ্যমিক পর্যন্ত শহরের একটি বেসরকারি স্কুলে পড়লেও উচ্চ মাধ্যমিকে বাড়ি থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে বাবার স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন। তা কি বাড়তি সুবিধে পাওয়ার আশায়?

প্যাঁচালো প্রশ্নেও সুপ্তোত্থিতা সাবলীল। বললেন, ‘মোটেই নয়, বরং বাবার স্কুলে মক পার্লামেন্ট করায়। নকল সংসদ, কুইজ। সেই টিম বাইরে গিয়ে প্রাইজ নিয়ে আসে। আমারও ওগুলো করতে ইচ্ছা হতো যে!’

মা পেশায় অধ্যাপক পম্পা বিশ্বাস বললেন, ‘আমরা ওকে আপন খেয়ালে বেড়ে উঠতে দিয়ে পাশে থেকে পরিচর্যা করে গিয়েছি মাত্র। ও মেরিট লিস্টে জায়গা না পেলেও কিছুই যায়-আসত না।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version