ঋতভাষ চট্টোপাধ্যায় | এই সময় ডিজিটাল
কখনও লাভপুর, পাড়ুই বা বগুটুইয়ের মতো হত্যাকাণ্ড, কখনও আবার শাসকদলের নেতার গরমাগরম ভাষণ, ঘটনা অনেক, জায়গা একটাই, রাজ্য রাজনীতির অন্যতম এপিসেন্টার বীরভূম। বঙ্গ রাজনীতির শিরোনামে যেন পাকাপাকিভাবে জায়গা করে নিয়েছে এই জেলা। চতুর্থ দফার লোকসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হল সেই বীরভূমেই। জেলার দু’টি লোকসভা কেন্দ্র বীরভূম ও বোলপুরে এদিন ভোটগ্রহণ হয়। বিক্ষিপ্ত কিছু অশান্তি ও উত্তেজনার মধ্যে দিয়ে চলে দুই কেন্দ্রের নির্বাচন।

ময়দানে নেই কেষ্ট মণ্ডল

তবে রাজনৈতিকমহলের কারও কারও মতে, এবারে বীরভূমের ভোটের চিত্রটা অনেকটাই অন্যরকম। অনেকের মতে এর নেপথ্যে প্রধান কারণ, বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা অনুব্রত মণ্ডলের অনুপস্থিতি। গোরু পাচার মামলায় গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে দিল্লির তিহাড় জেলে রয়েছেন অনুব্রত। আর তাঁর অনুপস্থিতিতে ভোটের ময়দানে নামে তৃণমূল। তাই এবারের ভোটে বীরভূমে নেই ‘চড়াম চড়াম’ ঢাকের শব্দ, নেই ‘তাড়াতাড়ি হাত চালানো’র নির্দেশও। এমনকী অনুব্রতর বাড়িটাও কেমন যেন নিস্তব্ধ, নীচের তলায় শাটার নামানো, বন্ধ দরজা জানালাও। কিন্তু গত লোকসভা ভোটেও এই বাড়ির চিত্রটা ছিল একেবারেই অন্যরকম, এবার যা আকাশ পাতাল ফারাক। বলতে গেলে ‘ক্যাপ্টেন’কে ছাড়াই নির্বাচনের পিচে ব্যাট করতে নেমেছে তৃণমূল। যদিও অনুব্রতর অনুগামীরা অবশ্য বারেইবারেই বলেছেন, কেষ্টদার দেখান পথেই লড়াই চালাচ্ছেন তাঁরা। এদিকে কেষ্টর অনুপস্থিতিতে জেলায় দল পরিচালনার জন্য কোরকমিটিও গঠন করা হয়েছে। দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের তরফে তৈরি করে দেওয়া হয় কোর কমিটি।

লড়াই চালাচ্ছেন শতাব্দী

কেষ্ট ময়দানে নেই, তবে দলের দীর্ঘদিনের সঙ্গী শতাব্দী রায় কিন্তু সেই বীরভূমের মাটি কামড়েই পড়ে রয়েছেন। এবার ফের একবার তাঁকেই বীরভূম লোকসভা কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। যদিও এলাকাবাসীদের একাংশের অবশ্য অভিযোগ, ভোটের পর আর এলাকায় বিশেষ দেখা যায় না শতাব্দীকে। যদিও শতাব্দী নিজে বা শাসকদল, কেউই সেই অভিযোগে বিশেষ গুরুত্ব দিতে নারাজ। ভোটের দিন সেই ময়দানেই দেখা গেল শতাব্দীকে। সকাল থেকেই বিভিন্ন বুথ ঘুরে দেখলেন তিনি। নিজের চোখে দেখে নিলেন কেমন চলছে ভোট প্রক্রিয়া। আবার তারকা প্রার্থীকে কাছে পেয়ে, অনেকেই তাঁর সঙ্গে সেলফি বা ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। অন্যদিকে ময়দানে দেখা যায় বোলপুরের তৃণমূল প্রার্থী অসিতকুমার মালকেও।

যে বীরভূমে অতীতে বিভিন্ন সময় বিরোধীদের মনোনয়ন পেশে বাধা দেওয়া বা ভোটের দিন শাসকদলের বিরুদ্ধে গণ্ডগোল পাকানোর অভিযোগ উঠেছে, সেই জেলাতেই এবারের লোকসভা ভোটে বড় কোনও অশান্তির খবর পাওয়া যায়নি। রবিবার রাতে বোলপুর লোকসভার অন্তর্গত কেতুগ্রামে এক তৃণমূল কর্মীকে খুনের অভিযোগ উঠলেও নির্বাচনের দিন বিক্ষিপ্ত কিছু অশান্তি ছাড়া, ভোটগ্রহণ চলল মূলত শান্তিতেই। এখন দেখার সরাসরি উপস্থিত না থেকেও বীরভূমের মাটিতে বজায় থাকে কি না কেষ্ট ক্যারিশমা, নাকি পালে লাগে বদলের হাওয়া।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version