‘আজ গাড়ি ধরতে কোন দিকে যাবেন স্যার? আমি তো রেডি। আমার কোটা এখনও পূরণ হয়নি। আর দেরি করবেন না। বেলা ১টার মধ্যে চার-পাঁচটা গাড়ি তুলতেই হবে।’ জুনিয়র অফিসারের এমন তৎপরতা দেখে ট্র্যাফিক গার্ডের অ্যাডিশনাল ওসির মন্তব্য, ‘আতিপাতি গাড়ি তুললে তো আর চলবে না! এসইউভি চাই। রুবির দিকে চলুন। দেখি ওদিকে জালে পড়ে নাকি!’ভোট বলে কথা। চাকা থাকলেই তো আর গাড়ি হলো না। সঙ্গে চাই চিলড এসি-ও। এই লোকসভা নির্বাচনে গাড়ির ডিমান্ড অনেকটা যেন বর্ষার ‘নধর’ ইলিশের মতো। বসেদের নির্দেশ মেনে শহরে গাড়ি খুঁজতে গিয়ে তাই মাথার ঘাম পায়ে পড়ছে ট্র্যাফিক সার্জেন্টদের একাংশের। মূলত সেভেন সিটার এসইউভি গাড়ির রিকুইজিশন আসছে বেশি।

আর এতেই ফাঁপড়ে পড়েছেন ট্র্যাফিক সার্জেন্টরা। কারণ, কমিশন হয়ে লালবাজার থেকে ধাপে ধাপে গাড়ির রিকুইজিশন আসতে শুরু করায় প্রাথমিক ঝাড়াই-বাছাইয়ের দায়িত্ব পড়েছে কর্তব্যরত ট্র্যাফিক সার্জেন্টদের উপরেই। শহরে গাড়ির অভাব নেই। কিন্তু ভোটের অশান্তির কথা মাথায় রেখে শখের গাড়ি দিতে রাজি হননা অনেকেই।

ফলে শরীর-স্বাস্থ্য ভালো রয়েছে, এমন গাড়ি ধরতে গিয়ে মুখ ঝামটাও সহ্য করতে হচ্ছে পুলিশকে। গাড়িতে প্যাসেঞ্জার থাকলে কপালে তিরস্কারও জুটছে। দিন কয়েক আগে যাদবপুরের এমনই একটি গাড়িকে আটকানো হলে সার্জেন্টের উদ্দেশে মালিক হুঙ্কার দেন, ‘আপনার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতির কাছে নালিশ করব। প্রয়োজনে মানবাধিকার কমিশনেও যাবে। আমার গাড়ি কাকে দেব, আপনি ঠিক করবেন?’

শ্যামবাজার থেকে ইএম বাইপাস, গাড়ি ধরলে ছবিটা সর্বত্র প্রায় একই রকম। ফলে বাধ্য হয়েই কৌশল বদলাচ্ছেন পুলিশকর্মীরা। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক ট্র্যাফিক সার্জেন্টের কথায়, ‘প্যাসেঞ্জার থাকলে আর গাড়ি আটকাচ্ছি না। চালককে পরে ড্রাইভিং লাইসেন্স সহ দেখা করতে বলা হচ্ছে। পরে তাঁকে বুঝিয়ে ভোটের ডিউটিতে রাজি করাচ্ছি আমরা। শাখের করাতের মতো অবস্থা আমাদের। গাড়ি পাঠাতে না পারলেও কমিশন-লালবাজার থেকেও চাপ আসছে।’

পুলিশ সূত্রে খবর, সার্জেন্ট পিছু গড়ে ৩ থেকে ৫টি গাড়ির বরাত দেওয়া হয়েছে। সকলকে কোটা পূরণ করতে হচ্ছে। তবে গাড়ির ভাতা অবশ্য খারাপ নয়। সেভেন সিটার এসি গাড়ির ক্ষেত্রে দৈনিক ভাতা ১২৩০ টাকা। সঙ্গে গাড়ির তেলের টাকা প্রয়োজন অনুযায়ী দেওয়া হয়। চালকের খাওয়া খরচ ২৫০ টাকা। আট থেকে তেরো সিটার এসি গাড়ির ক্ষেত্রে বরাদ্দ ১৫৪০ টাকা। তবে প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে ঝক্কি পোহাতে হলেও বাস মালিকদের একাংশ এক কথায় ভোটের জন্য গাড়ি দিতে রাজি হয়ে যাচ্ছেন।

গাড়ি রপ্তানির হাব হয়ে উঠছে ভারত, সংখ্যা বাড়ল এপ্রিলে

কারণ, রাস্তায় গাড়ি চালালে সেই টাকা ওঠে না। একই সঙ্গে সর্বোচ্চ ৪ জন স্টাফের ভাতাও পেয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। উত্তর কলকাতার এক ট্র্যাফিক গার্ডের ওসির কথায়, ‘আগে ভোটের ডিউটিতে বাস-মিনিবাস তুলতে সমস্যায় পড়তে হতো। এখন ঠিক তার উল্টো।’ কলকাতার এক নামী ট্রাভেল সংস্থার মালিকের বক্তব্য, ‘আমাদের আগে থেকে অনেক বুকিং থাকে। গাড়ি দিলে সেই বুকিং বাতিল করতে হয়। ভালো গাড়িরই তো বাজারে চাহিদা থাকে। তাও যদি তুলে নেয়, আমাদের চলবে কী করে?’

সিইও অফিসের এক কর্তা বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী ডিস্ট্রিক্ট ইলেকশন অফিসার পরিবহণ দপ্তরকে জানিয়ে দেন, তার এলাকায় কত গাড়ি দরকার। আর আগে গাড়ির রেট কি হবে তা পাঠিয়ে দিতে হয় দিল্লির নির্বাচন দপ্তরে। অনুমোদন পেলে ভাড়া চূড়ান্ত হয়।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version