দুই কামরার মাটির বাড়ি। এবড়ো খেবড়ো দেওয়ালের উপর গোলাপি রঙে লেখা ‘শুভবিবাহ’। বাড়িটার ফাটলগুলোর সঙ্গে আঁকড়ে ছিল ভালোবাসা, নতুন জীবন শুরুর স্বপ্ন। কিন্তু, শুরুর আগেই সব শেষ। বৃহস্পতিবার বিকেলে বাজ পড়ে মৃত্যু হয় হরিশ্চন্দ্রপুরের দৌলা খেজুরবাড়ির বাসিন্দা নয়ন রায়ের। শুধু নয়ন নয়, প্রাণ গিয়েছে তাঁর স্ত্রীরও। দুই জন তরতাজা সন্তানকে হারিয়ে শোকস্তব্ধ রায় পরিবার।বৃহস্পতিবার বিকেলে মাঠে কাজ কর্ম করছিলেন বছর ২৪-এর নয়ন রায়। সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা সিংহ রায়(২০)। স্বামীকে কাজে সাহায্য করছিলেন তিনি। আচমকাই কালো মেঘে ঢাকে আকাশ। একের পর এক বাজ পড়তে থাকে। মাঠ থেকে ফেরার চেষ্টা করেছিলেন নয়ন এবং প্রিয়াঙ্কা। কিন্তু, তাঁরা সফল হননি। বজ্রাঘাতে মৃত্যু হয় কুশিদা পঞ্চায়েতের সদ্যবিবাহিত এই দম্পতির। তাঁদের দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছিল। শুক্রবার তাঁদের দেহ বাড়ি ফিরতেই ওঠে কান্নার রোল।

মাত্র কয়েকদিন আগেই ঘটা করে বিয়ে হয়েছিল তাঁদের। আনন্দে মেতেছিল গোটা গ্রাম। প্রতিবেশীদের কথায়, ‘কখনও ভাবিনি এই দিনও দেখতে হবে। দুটো তরতাজা প্রাণ এভাবে শেষ হয়ে যাবে।’ শুক্রবার তাঁদের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। গোটা বাড়িতে এখন বিষাদ লেগে। মাঝে মধ্যেই পরিবারের নজর চলে যাচ্ছে নয়নের ঘরের পাশে লাল রং দিয়ে আঁকা আলপনাটার দিকে। যেখানে বিয়ের অনুষ্ঠানের চিহ্ন আঁকা রয়েছে। ছেলের বিয়ের জন্য তা এঁকেছিলেন মা সুমিয়া রায়। ডুকরে কেঁদে উঠছেন তিনি।

বিয়ের সময় প্রিয়াঙ্কার পরিবারকে কথা দিয়েছিলেন, বাড়িতে মেয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। খেয়াল রাখবেন তিনি। সেই মেয়েকে আগলে না রাখার আফশোস তাঁর কান্নার মধ্যে লেপ্টে। মাঝে মধ্যে জলভরা চোখে ‘শুভবিবাহ’ লেখাটার দিকে তাকিয়ে থাকছেন এই প্রবীণা।

তিন ভাইয়ের মধ্যে মেজো নয়ন। বাবা বছর দুয়েক আগে মারা গিয়েছেন। বৃদ্ধ মায়ের সঙ্গেই থাকতেন নয়ন। সংসারে একমাত্র রোজগেরে বলতে নয়নই ছিল। বিয়ের সময় মায়ের নামে লোন নিয়েছিলেন ৩০ হাজার। সেই টাকা থেকেই কিছুটা বাঁচিয়ে জমি লিজ নিয়ে পাট চাষ করেছিলেন এই তরুণ। কিন্তু, সেই জমিতে কাজ করতে গিয়েই সব শেষ।

বজ্রাঘাতে মৃত্যু মিছিল, মালদায় মৃত কমপক্ষে ৮

রাজ্য সরকারের সাহায্য ইতিমধ্যেই পৌঁছেছে সুমিয়ার কাছে। দুই পরিবারের হাতে দু’লাখ টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়েছে। ‘ছেলেটা যে আমার আর ফিরবে না…’, চেনা পরিচিতদের দেখলেই হাহাকার সন্তানহারা মায়ের।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version