উন্নয়নের ‘মালা’ হুডখোলা গাড়িতে পতপত করে উড়ছে তৃণমূলের পতাকা। আগে-পরে কর্মী-সমর্থকদের ভিড়। বেহালায় রোড-শো, গাড়ি থেকে প্রার্থীকে হাত নাড়তে দেখে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা এক মহিলার উক্তি, ‘দিদি আমরা সব পাচ্ছি…। অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকে যাচ্ছে।’ পাল্টা প্রশ্ন এলো, ‘কী পাচ্ছেন?’ একটু হেসে.. গলার স্বর আরও চড়িয়ে, ‘কেন, মমতাদির লক্ষ্মীর ভাণ্ডার।’ এ বার হাত জোর করে প্রার্থী বললেন, ‘তা হলে এ বারও আশীর্বাদ করছেন তো আমাকে?’ মাথা নেড়ে তিনি সম্মতিও দিলেন।পরনে তাঁতের শাড়ি। হাতে পুরোনো মডেলের ঘড়ি। পায়ে কখনও স্নিকার্স, কখনও চটি। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে দক্ষিণ কলকাতার তৃণমূল প্রার্থী মালা রায়ের নির্বাচনী পোষাক-বিধি এটাই। মাস দু’য়েক ধরে এ ভাবেই জনসংযোগ করে চলেছেন তিনি। কেউ এগিয়ে এসে কথা বলতে চাইলে, হাতও মেলাচ্ছেন। কাছে গিয়ে ভোট চাইতে ‘মালা’ জপছেন ‘উন্নয়ন এবং সরকারি প্রকল্প’ মন্ত্রের! নির্বাচনী প্রচারের ফাঁকে মালা বললেন, ‘মহিলাদের আর্থিক স্বাধীনতা জরুরি। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা দেওয়ার জন্য ইনকাম প্রুফ চায় না আমাদের সরকার। এমন অনেক প্রকল্প রয়েছে, যা সংসারে মহিলাদের স্বনির্ভর করে তুলেছে। সারা বছরই মানুষের জন্য ভাবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই পরীক্ষার ফল নিয়ে ভাবি না। সবাই আমাদের লক্ষ্মী ভোটার।’

ছবি সৌজন্যে বিসিসিএল

তিনকন্যা, খেলা হবে..
ভোটের জনপ্রিয় স্লোগান ‘খেলা হবে’। লোকসভা ভোটেরও তা ট্রেন্ডিং। কসবা থেকে ভবানীপুর। রাসবিহারী থেকে বালিগঞ্জ-বন্দর। ‘খেলা হবে’ স্লোগানের বিরাম নেই। খেলা হবে গানও হিট। তৃণমূল সমর্থকের কথায়, এ বার দক্ষিণ কলকাতায় ‘খেলায়’ তিন জনই কিন্তু মহিলা প্রার্থী। মালা রায়ের সমর্থনে মমতার বেহালায় জনসভা এবং কলকাতায় রোড-শো বাড়তি অক্সিজেনও জুগিয়েছে দলকে।

পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯-এর নির্বাচনে দেড় লক্ষের বেশি ভোটে জিতে ছিলেন মালা। আবার ২০২১-এ বিধানসভা ভোটের নিরিখে লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল ভালো ফল করে এগিয়ে গিয়েছে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ ভোটে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ওই কেন্দ্রে ২৭ শতাংশের আশপাশে সংখ্যালঘু ভোটার রয়েছেন। মমতাও বেশ কয়েকবার জিতেছেন এখান থেকে। তবে, মালাকে টক্কর দিতে বালিগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচনের ভোটবাক্সে ‘রক্তক্ষরণ’ বন্ধ করা সায়রা শাহ হালিমকে প্রার্থী করেছে সিপিএম।

ওই কেন্দ্রে বিজেপিকে ‘হারিয়ে’ সায়রা দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছিল। অন্যদিকে, গতবারের রায়গঞ্জের জয়ী প্রার্থী দেবশ্রী চৌধুরীও লড়ছেন। বিজেপির আশা, গত লোকসভা নির্বাচনে ২৬টি ওয়ার্ডে খারাপ ফল করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। তাই খেলা একতরফা মোটেই হবে না। যদিও মালা মনে করছেন, দৌড়ে তিনিই প্রথম হবেন। দ্বিতীয় কে হতে চান, সেটা ওদের চিন্তা!

West Bengal Lok Sabha Election : মহিলা ভোটই জয়ের চাবিকাঠি? দিনভর লম্বা লাইনে দেখে আত্মবিশ্বাসী তৃণমূল
ফুলে ‘কাঁটা’.. নেই
পোস্টার-ব্যানারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়র সঙ্গে মালা রায়ের ছবি ভরে গিয়েছে দক্ষিণ কলকাতার পথে-ঘাটে। উন্নয়ন এবং সরকারি প্রকল্পের ‘ফুলের ডালি’তে ‘কাঁটা’ হয়ে রয়েছে শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতির ইস্যু। সৌজন্যে বেহালা পশ্চিমের বিধায়ক পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাতে দোসর কালীঘাটের ‘কাকু’ সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রও। বিরোধীরা প্রচারের সেই অস্ত্র প্রয়োগ করতে কোনও খামতি রাখছেন না। ভোটের মুখে আবার গার্ডেনরিচে বেআইনি বহুতল বিপর্যয় কিছুটা হলেও বেকায়দায় ফেলেছে কলকাতা বন্দর বিধানসভা কেন্দ্রকে।

যদিও রাসবিহারী, কলকাতা বন্দর, ভবানীপুর, বেহালা পশ্চিম, বেহালা পূর্ব, কসবা, বালিগঞ্জ বিধানসভার সবেই তৃণমূলের বিধায়ক। মালার বক্তব্য, ‘ব্যক্তিগত ভাবে কেউ দুর্নীতি করে থাকলে, দল তাঁদের পাশে নেই। গার্ডেনরিচের ঘটনার পর বেআইনি নির্মাণের ক্ষেত্রে আরও কঠোর হয়েছে কলকাতা পুরসভা। উন্নয়নের কাছে ভোটে এগুলি ইস্যুই নয়। তাই জোড়া ফুলে কোনও কাঁটাও নেই।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version