সঞ্জয় চক্রবর্তী
দক্ষিণবঙ্গে যে ফল হলো, উত্তরবঙ্গে তার প্রতিফলন কেন হলো না, তা নিয়ে পর্যালোচনা করবে তৃণমূল কংগ্রেস। মঙ্গলবার লোকসভা ভোটের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। দক্ষিণবঙ্গে বিজেপিকে কার্যত কোণঠাসা করে নিজেদের জমির পুনর্দখল করেছে তৃণমূল। অথচ, উত্তরবঙ্গে সেই ফল দেখা যায়নি। বরং সেখানকার রেজাল্ট খানিকটা হলেও অক্সিজেন জুগিয়েছে বিজেপিকে।২০১৯ সালে উত্তরবঙ্গের আটটি আসনের মধ্যে বিজেপি পেয়েছিল সাতটি। অন্যটি যায় কংগ্রেসের দখলে। এ বার সেখানে তৃণমূল কোচবিহার আসনটি ফেরাতে পারলেও অন্যত্র জয়ের ব্যবধান কমিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। অথচ, ভোটের আগে থেকেই আমজনতার অভিযোগ ছিল, গত পাঁচ বছরে উত্তরবঙ্গের জন্য কিছুই করেননি বিজেপি’র কোনও সাংসদ। দার্জিলিংয়ের সাংসদ রাজু বিস্তা কেন্দ্রীয় প্রকল্প থেকে কিছু টাকা আনতে সক্ষম হলেও বাকিরা সেটাও পারেননি।

উত্তরবঙ্গের অন্যতম প্রবীণ তৃণমূল নেতা গৌতম দেবও মনে করেন, কেন উত্তরবঙ্গে বিজেপি এবারেও জয় পেল, সেটা খতিয়ে দেখা উচিত। তিনি বলেন, ‘আমরা দলের পক্ষ থেকে এই ব্যাপারে পর্যালোচনা করব। কেন কোচবিহার ছাড়া অন্যত্র বিজেপি প্রার্থীদের হারানো সম্ভব হলো তা এক কথায় এখনই বলা সম্ভব নয়। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখে মন্তব্য করা দরকার।’

গতবার জয়ী হলেও কোচবিহারে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক পরাজিত হতেই এখন তাঁর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন দলের অনেকেই। তাঁদের অভিযোগ, সাংসদ হিসেবে নিশীথ প্রামাণিক পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন। একই সঙ্গে অভিযোগ উঠেছে, কোচবিহারের প্রাক্তন সাংসদের ঔদ্ধত্য নিয়েও। তুফানগঞ্জ কলেজের শিক্ষক তাপস বর্মন মনে করেন, ‘দেশের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিশীথ কোচবিহারের জন্য অনেক কিছুই করতে পারতেন। কিন্তু ঔদ্ধত্য প্রদর্শন ছাড়া আর কিছুই করেননি তিনি।’

এ বারের লোকসভা নির্বাচনে নিশীথ কোচবিহারের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী জগদীশ বসুনিয়ার কাছে পরাজিত হয়েছেন। তবে কোচবিহার ও মালদা দক্ষিণ ছাড়া বাকি ছয় আসনেই জয় পেয়েছে বিজেপি। আলিপুরদুয়ারে মনোজ টিগ্গা, জলপাইগুড়িতে জয়ন্ত রায়, দার্জিলিংয়ে রাজু বিস্তা, রায়গঞ্জ আসনে কার্তিক পাল, বালুরঘাটে সুকান্ত মজুমদার এবং উত্তর মালদায় খগেন মুর্মু জয়ী হয়েছেন। কোচবিহারে নির্বাচনী প্রচারের সময়েই নিশীথ প্রামাণিকের জয় নিয়ে অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেছিলেন।

একই রকমের সংশয় ছিল জলপাইগুড়ি ও বালুরঘাট আসন নিয়েও। শেষ পর্যন্ত বিজেপি বালুরঘাট ও জলপাইগুড়ি আসন দখলে রাখতে সক্ষম হলেও কোচবিহারে তৃণমূলের কাছে হার মানতে বাধ্য হয়। কারণ, তৃণমূল কোচবিহারে প্রথম থেকেই আক্রমণাত্মক মেজাজ দেখিয়েছে। যদিও নির্বাচনী প্রচারের এই ঝাঁঝ ছিল না আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং কিংবা উত্তর দিনাজপুরে। এর মধ্যে পাল্টা প্রচারে নেমে দার্জিলিংয়ে বিমল গুরুং, মন ঘিসিংদের পাশে নিয়ে প্রচার চালান বিজেপি প্রার্থী রাজু বিস্তা।

West Bengal Political News : বহু বিধানসভা কেন্দ্রের রাজনৈতিক সমীকরণ পাল্টে গেল লোকসভার রেজাল্টে

এদিন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী গোপাল লামাকে প্রায় ২ লক্ষের বেশি ভোটে হারানোর পরে রাজু দার্জিলিংয়ে বলেন, ‘পাহাড়ের জনতার সঙ্গে রাজ্য সরকার যে অন্যায় করেছে, তারই জবাব দিয়েছেন মানুষ। ভোটেও এ বার চোপড়ায় বেশ কিছু বুথে দেখা গিয়েছে একটিই দল সব ভোট পেয়েছে। এ সবই আমরা লক্ষ্য রেখেছি। সবই খতিয়ে দেখা হবে।’

অন্যদিকে, নতুন প্রার্থী দেওয়া থেকে শুরু করে তৃণমূলের এমন হাজারো কৌশল কাজে আসেনি মালদাতে। উত্তর মালদায় বিজেপির খগেন মুর্মু এবং দক্ষিণ মালদায় কংগ্রেসের ঈশা খান চৌধুরী অনায়াসে জয়ী হয়েছেন। তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি আব্দুর রহিম বক্সি বলেন, ‘কেন এই ফল হলো সেটা এখনই বলা সম্ভব নয়। পর্যালোচনা করতে হবে। তার পরেই মন্তব্য করব।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version