মণিপুস্পক সেনগুপ্ত, এই সময়: বঙ্গ-রাজনীতির বহু ‘হাই-প্রোফাইল’ নেতাই নির্বাচনী পরাজয়ের ধাক্কা সামলে উঠতে নিজেদের কিছুটা গুটিয়ে রেখেছেন। ভোট-প্রচারের সেই জোশ আর তাঁদের নেই। কিন্তু ভোটে হেরেও বাকিদের মতো ‘হারিয়ে’ যেতে চান না দিলীপ ঘোষ। রেজাল্ট ঘোষণার পরের দিন থেকেই তিনি রাজনীতির ময়দানে নেমে পড়েছেন পুরোনো ছন্দেই।বিজেপিরই অনেকের মতে, লোকসভা নির্বাচন পরবর্তী আবহে বাংলার পদ্ম-ব্রিগেডের নেতৃত্বে যে শূন্যস্থান তৈরি হয়েছে, সেটাই আবার দখল করতে চাইছেন মেদিনীপুরের প্রাক্তন সাংসদ। তাই নির্বাচনী ভরাডুবির জন্য দলের একাংশকে যেমন তিনি ‘কাঠিবাজ’ বলে দেগে দিয়েছেন, তেমনই পার্টির পুরোনো এবং নিচুতলার কর্মীদের হয়ে জোরালো সওয়াল করতেও শুরু করে দিয়েছেন।

সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দিলীপ বলছেন, ‘আমি যখন দলে এসেছিলাম, তখন শূন্য থেকে শুরু করেছিলাম। এখনও আমার হাতে কিছু নেই। আবার শূন্য থেকে শুরু করব।’ বিজেপিতে তাঁর কোনও সাংগঠনিক পদ নেই এই মুহূর্তে। সদ্য খুইয়েছেন সাংসদপদও। কিন্তু তাতে দমবার পাত্র নন দিলীপ। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বঙ্গ-সফরে বের হবেন। জেলায় জেলায় ঘুরে বিজেপির নিচুতলার কর্মীদের সঙ্গে দেখা করবেন।

দিলীপের কথায়, ‘ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস চালাচ্ছে তৃণমূল। এখন ঘরে বসে থাকার জো নেই। কর্মীদের পাশে আমাদের থাকতে হবে। প্রথমে মেদিনীপুর যাব। সেখান থেকে বর্ধমান। তারপর একে একে পশ্চিমবঙ্গের সব জেলাতেই যাব।’ চক্রান্ত করেই যে তাঁকে মেদিনীপুর থেকে সরিয়ে বর্ধমান-দুর্গাপুরে ভোট লড়তে পাঠানো হয়েছিল, সে কথা বুধবারই কোনও রাখঢাক না করে জানিয়ে দিয়েছিলেন দিলীপ। তাঁর ক্ষোভ, ‘জানি না, বর্ধমান-দুর্গাপুরে আমাকে জিততে পাঠানো হয়েছিল, নাকি হারতে! বিশ্লেষণ প্রয়োজন।’

এর সঙ্গেই দলের পুরোনো নেতা-কর্মীদের গুরুত্ব বাড়ানোর দাবিও তুলেছেন তিনি। দিলীপের কথায়, ‘ওল্ড ইজ গোল্ড। তাই নতুনদের গুরুত্ব দিতে গিয়ে পুরোনোদের উপেক্ষা করা চলবে না।’ এদিন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীকে উদ্ধৃত করে দিলীপ নিজের এক্স-হ্যান্ডেলে পোস্ট করেন, ‘আমার একটা কথা মাথায় রেখো, দলের পুরোনো একজন কর্মীকেও ভাঙতে দেওয়া যাবে না। তেমন হলে দশজন নতুন কার্যকর্তা দল থেকে বেরিয়ে যাক। কারণ, পুরোনো কর্মীরাই আমাদের বিজয়ের গ্যারান্টি। খুব দ্রুত নতুন কার্যকর্তাদের উপর ভরসা করা উচিত নয়।’

দিলীপ-ঘনিষ্ঠ নেতাদের মতে, বছর দুই আগে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে নাম লেখানো মেদিনীপুরের এক নেতার উপর চোখ-বুজে ভরসা করেছিলেন অমিত শাহরা। বাংলায় তারই খেসারত চোকাতে হয়েছে বিজেপিকে। এক পুরোনো বিজেপি নেতার কথায়, ‘বাজপেয়ী তো কবেই বলেছিলেন, দলে নতুন আসা নেতার উপর খুব তাড়াতাড়ি ভরসা না করাই ভালো। তাঁর সেই সতর্কবার্তা পার্টির বর্তমান কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মাথায় রাখলে বাংলায় ভোটের ফলাফল অন্যরকম হতে পারত। মেদিনীপুরের এক নেতার পরামর্শে দিলীপ ঘোষের মতো বর্ষীয়ান বিজেপি নেতার কেন্দ্রবদল করা হয়েছে। এটা সবাই জেনে গিয়েছে।’

Dilip Ghosh on Sukanta Majumdar: দায় আমার নয় গো…, দোষারোপে পদ্ম-নেতৃত্ব! বেসুরো দিলীপ-সুকান্ত

এ লড়াইয়ে দিলীপ পাশে পেয়ে গিয়েছেন দলের আরও অনেককে। ইতিমধ্যেই রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার জানিয়েছেন যে, দিলীপকে মেদিনীপুর থেকে সরানো ভুল হয়েছে। প্রকাশ্যে একই অভিমত ব্যক্ত করেছেন বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ এবং রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকারও। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ভোটে হারলেও বঙ্গ-বিজেপির অন্দরে ক্রমশ পাল্লা ভারী হচ্ছে দিলীপ ঘোষের।

তাঁর ঘনিষ্ঠ এক বিজেপি নেতার ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, ‘মূলত তিনটি রাজ্যে বিজেপির ভরাডুবি হয়েছে এ বার। মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ। তিনটি রাজ্যেই অমিত শাহ ছড়ি ঘোরাতে ব্যবহার করেছিলেন সংশ্লিষ্ট তিন রাজ্যের তিন নেতাকে। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের আপত্তিকে গুরুত্ব না দিয়ে অমিত শাহের যাবতীয় মনোবাসনা বাস্তবায়িত করতেন ওই রাজ্যের বিজেপি সভাপতি ভূপেন্দ্র সিং চৌধুরি। বাংলার বিজেপি নেতারা কিন্তু খুব ভালোভাবে জানেন, এ রাজ্যে শাহের এজেন্টের নাম কী।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version