আশিস নন্দী
প্রায় আট মাস জেলবন্দি রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক (বালু)। ২০১১ সাল থেকে টানা হাবরার বিধায়ক, এক সময় জেলা তৃণমূলের দোর্দণ্ডপ্রতার সভাপতি সেই বালুর বিধানসভা কেন্দ্রেই এ বার লোকসভা ভোটে হারের মুখ দেখতে হয়েছে শাসকদলকে। অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রীর বেঁধে দেওয়া টার্গেট পূরণ করে নেত্রীর কাছে নিজের সম্মান রক্ষা করেছেন আমডাঙার বিধায়ক রফিকার রহমান।বালুর অনুপস্থিতিতে বারাসত লোকসভার অধীন হাবরা বিধানসভা কেন্দ্রে কার্যত ভরাডুবি হয়েছে তৃণমূলের। হাবরা বিধানসভা থেকে তৃণমূল হেরেছে ১৯ হাজার ৯৯৩ ভোটে। পুরসভার সব ওয়ার্ডেই বিজেপির কাছে পরাজিত হয়েছে তৃণমূল। শহরের তুলনায় গ্রামীণ এলাকায় অবশ্য কিছুটা ফল ভালো ফল হয়েছে তৃণমূলের।

দলের এই শোচনীয় পরাজয়ে হাবরা বিধানসভা কেন্দ্রে নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা হাবরা পুরসভার চেয়ারম্যান নারায়ণচন্দ্র সাহাকেই দায়ী করছে তৃণমূলের একটা অংশ। বালুর অনুপস্থিতি এবং নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সবাইকে একসূত্রে কাজে লাগাতে না পারার কারণেই এই হার বলেই দাবী বালুর ঘনিষ্ঠ তৃণমূলের নেতাদের।

হাবরা পুরসভার ২৪টি ওয়ার্ড এবং রাউতারা, পৃথিবা, কুমড়া এবং মছলন্দপুর-২ পঞ্চায়েত নিয়ে হাবরা পুরসভা। ফলাফলে দেখা যাচ্ছে পুরসভার ২৪টি ওয়ার্ডেই তৃণমূল পরাজিত হয়েছে। শুধুমাত্র পুরসভা এলাকাতেই তৃণমূল হেরেছে ১৮ হাজার ৯৫১ ভোটে। চার পঞ্চায়েত থেকে ৯৮২ ভোটে হেরেছে তৃণমূল।

অথচ হাবরার পাশেই রয়েছে আমডাঙা। সেখানে ১১টি পঞ্চায়েতের মধ্যে দত্তপুকুর-১ ছাড়া বাকি ১০টি পঞ্চয়েতেই তৃণমূল লিড পেয়েছে। আমডাঙার লিড ৩৫ হাজার ২৭৩ । আমডাঙায় প্রচারে এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধায়ক রফিকুর রহমানকে লিডের টার্গেট বেঁধে দেন। রফিকুর নেত্রীকে ৪০ হাজারের লিড দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন।

সেখানে ব্যারাকপুর লোকসভার অধীন আমডাঙায় পার্থ ভৌমিক লিড পেয়েছেন ৩৫,২৭৩। যদিও প্রচার পর্বে আমডাঙা নিয়েই চিন্তায় ছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। হাই ভোল্টেজ ভোটের দিনও ব্যারাকপুর ছেড়ে দিনভর পার্থ ভৌমিক পড়ে ছিলেন আমডাঙাতেই। কিন্তু হাবরার ছবিটা অন্য। বালু গ্রেপ্তার হওয়ায় পর হাবরায় তৃণমূলের সংগঠন নেতৃত্বের অভাবে ধুঁকতে শুরু করে। সেটা বুঝতে পেরেই দেগঙ্গার চাকলা থেকে হাবরায় সংগঠন দেখার জন্য অশোকনগরের বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামীকে নিয়ে ছয় জনের কোর কমিটি গঠন করে দিয়েছিলেন মমতা।

পরে অশোকনগরের বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামীকে বনগাঁর দায়িত্ব দেওয়া হয়। হাবরা বিধানসভায় ভোট পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় পুরসভার চেয়ারম্যান নারায়ণচন্দ্র সাহাকে। তিনি নিজের মতো করে ভোট পরিচালনা করেন। কোর কমিটিতে থাকা বালু ঘনিষ্ঠ হাবরার প্রাক্তন এক চেয়ারম্যান এবং তৃণমূলের এক নেতাকে ভোট প্রক্রিয়ার কাজে গুরুত্ব না দেওয়ার অভিযোগ ওঠে নারায়ণের বিরুদ্ধে।

তৃণমূলের একাংশের অভিযোগ, ভোটের প্রচার ও জনসংযোগের ক্ষেত্রে বুথ স্তরের কর্মীদের গুরুত্ব দেননি হাবরার চেয়ারম্যান। বালু ঘনিষ্ঠরা ভোটের কাজে ধরি মাছ না ছুঁই পানি নীতিতে কাজ করেছেন। ফলে এ বারের ভোটের হাওয়া অনুকূলে থাকা সত্ত্বেও তৃণমূলকে খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে হাবরায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূলের এক নেতা বলেন, ‘হাবরায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে বা কাকলি ঘোষ দস্তিদারের বিরুদ্ধে ভোট হয়নি। ভোট হয়েছে পুরসভার চেয়ারম্যান নারায়ণচন্দ্র সাহার বিরুদ্ধে।’ দলের এই পারফরম্যান্স প্রসঙ্গে নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘ভিত্তিহীন অভিযোগ। বালুদা ছাড়া হাবরায় তৃণমূলের সংগঠন ঠিকঠাক আছে। সব স্তরের কর্মীরা একসঙ্গে মিলে চেষ্টা করেছেন। খামতি রাখিনি। কিন্তু তবুও হারতে হয়েছে। আসলে বিজেপির ধর্মীয় মেরুকরণের কারণ হল অন্যতম।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version