এই সময়: সুকান্ত মজুমদার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হওয়ায় রাজ্য বিজেপির সভাপতি পদে বদল একরকম নিশ্চিত। কিন্তু ভোটে হারলেও প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি পদে আপাতত অধীর চৌধুরীই বহাল থাকছেন—এমনটাই খবর ‘হাত’ শিবির সূত্রে। ২০১৯-এর তুলনায় দেশজুড়ে কংগ্রেসের আসন সংখ্যা অনেক বাড়লেও মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, পশ্চিমবঙ্গ-সহ বেশ কিছু রাজ্যে গ্র্যান্ড ওল্ড পার্টির বিপর্যয় অব্যাহত।এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বর্ধিত বৈঠকে ঠিক হয়েছে, এই রাজ্যগুলিতে কংগ্রেসের খারাপ ফলাফল বিশ্লেষণ করতে এআইসিসি-র পক্ষ থেকে বিশেষ টিম যাবে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বাংলাতেও এআইসিসি-র টিম আসবে। এই টিমের নেতৃত্বে ওয়ার্কিং কমিটির বর্ষীয়ান নেতারা থাকবেন।

প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সদস্য, জেলা সভাপতি, শাখা সংগঠনের নেতৃত্ব-সহ বিধানভবনের বিভিন্ন স্তরের নেতার সঙ্গে কথা বলে পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে সার্বিক রিপোর্ট মল্লিকার্জুন খাড়গে, রাহুল গান্ধীদের কাছে জমা দেবে এই টিম। এছাড়া এআইসিসি-র তরফে বাংলার ইনচার্জ গুলাম মিও নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে রিপোর্ট দেবেন। পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে এই সার্বিক রিপোর্ট পাওয়ার পরেই কংগ্রেস হাইকম্যান্ড বিধানভবনের নেতৃত্বে বদল করবেন কি না, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে সূত্রের খবর।

এআইসিসি-র এক সদস্যের কথায়, ‘এখন ফিল-গুড আবহ রয়েছে। সেখানে তড়িঘড়ি কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার সম্ভাবনা নেই। অধীর চৌধুরী গত লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা ছিলেন। ফলে আগামী দিনে যদি প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি পদে কোনও অদলবদল হয়ও, তা সময় নিয়ে বিশদে আলোচনা করে হতে পারে। লোকসভার প্রথম অধিবেশন হয়ে যাওয়ার পরে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে।’

ইউসুফ পাঠানের কাছে বহরমপুরে পরাজিত হওয়ার পরেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদ নিয়ে নিজের অবস্থান একাধিকবার ব্যাখ্যা করেছেন অধীর। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির বক্তব্য, ‘আমি আগেই বলেছিলাম, আমার বদলে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হোক। আমি তো হারলাম। আমি চাই, পর্যালোচনা হোক। আমার থেকে যোগ্য ব্যক্তিকে খোঁজা হোক।’

অধীর নিজের অবস্থান স্পষ্ট করলেও তিনি এখনও স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে পদত্যাগপত্র কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের কাছে পাঠাননি। দীর্ঘ পাঁচ বারের সাংসদ হওয়ায় দিল্লিতে অধীর সরকারি বাংলো পেতেন। সেই বাংলো তাঁকে এবার ছেড়ে দিতে হবে। লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা থাকায় এতদিন অধীর কেন্দ্রীয় নিরাপত্তাও পেতেন। সেই সুরক্ষা বলয়ও আগামী দিনে তিনি নেবেন কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। একই সঙ্গে বাংলায় বামেদের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতার যে রাজনৈতিক লাইন অধীর জমানায় চলে এসেছে, তা-ও আগামী দিনে আর থাকবে কি না, সেটা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল লোকসভায় শক্তি বাড়িয়ে এখন ‘ইন্ডিয়া’ জোটের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদীর মিলিজুলি সরকার যদি কোনও কারণে হোঁচট খায়, তা হলে কংগ্রেসকে সরকার তৈরি করতে হলে তৃণমূলের সমর্থন প্রয়োজন হবেই। সেই পরিস্থিতিতে অধীরের তীব্র তৃণমূল বিরোধী অবস্থানে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড লাগাম পরাতে পারে বলে এআইসিসি-র একাংশ মনে করছেন।

Rahul Gandhi Leader Of Opposition : লোকসভায় সেয়ানে সেয়ানে! রাহুলই বিরোধী দলনেতা? কী বললেন সোনিয়া পুত্র?

এআইসিসি-র সদস্য বঙ্গজ এক নেতার কথায়, ‘কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের দিনেই অধীর বহরমপুরে তাঁর পরাজয় নিয়ে সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করেছেন। জাতীয় রাজনীতির বাধ্যবাধকতায় ইন্ডিয়া জোটে মমতাকে কংগ্রেসের দরকার। তাই অধীরের এই তীব্র মমতা বিরোধী অবস্থান কংগ্রেস হাইকম্যান্ড কতদিন চলতে দেবে, তা দেখার বিষয়। যেমন দেখার, বামেদের সঙ্গে জোটও আর থাকবে কি না।’

বহরমপুরে অধীরের নিজের বিপর্যয়ের পরেই কংগ্রেসকে রাজ্যে একগুচ্ছ বিধানসভার উপনির্বাচনের মুখোমুখি হতে হবে। কয়েক মাসের মধ্যে এই উপনির্বাচন হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version