মাত্র কয়েক মাস আগের ঘটনা, সংসদ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন তিনি। তবে লড়াই আদৌ থামাননি। তাই ফের একবার ভোটে জিতে নিজেকে প্রমাণও করেছেন। আর প্রথমবার সংবাদমাধ্যমের সামনে এসে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করলেন লোকসভা নির্বাচনে কৃষ্ণনগরের জয়ী তৃণমূল প্রার্থী মহুয়া মৈত্র। সঞ্চালকের প্রশ্নের জবাবে সোজাসুজি দাবি করলেন, প্রধানমন্ত্রী সংসদে উপস্থিত থাকতে ভয় পান। এমনকী মোদীর কোনও ‘লজ্জা নেই’ বলেও কটাক্ষ করেন মহুয়া।’ইনসাইড আউট’ নামে একটি পডকাস্টে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সঞ্চালক বরখা দত্তের সঙ্গে কথোপকথনে মহুয়া মৈত্র মন্তব্য করেন, ‘ব্যক্তিগত স্বার্থ ছাড়া নরেন্দ্র মোদী কখনও সংসদে উপস্থিত থাকেন না। তিনি শুধুমাত্র কোনও ঘোষণা করার জন্য আসেন। যদি তাঁর কিছু বলার না থাকে, তাহলে খুব বেশি হলে ২ মিনিট সংসদে হাজিরা দিয়েই বেরিয়ে যান। গত ৫ বছরে তাঁকে কোনও প্রশ্নের উত্তর দিতে বা বিতর্কে অংশ নিতে দেখা যায়নি। আসলে, তিনি সংসদে উপস্থিত থাকতে ভয় পান।’

এখানেই শেষ নয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘লজ্জা নেই’ বলেও কটাক্ষ করেছেন সাংসদ মহুয়া মৈত্র। তাঁর অভিযোগ, মোদী ‘নিজের ক্ষমতা জাহির করেন’ এবং সর্বদা নিজেকে নিয়েই মগ্ন থাকেন। কথা প্রসঙ্গে মহুয়া বলেন, ‘অনেকেই জিজ্ঞাসা করেন, কেন আপনি প্রধানমন্ত্রীকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করেন? আমি পালটা জিজ্ঞাসা করি, তাহলে কাকে আক্রমণ করব, অর্থমন্ত্রীকে? কিন্তু মোদীই তো নোটবন্দী ঘোষণা করেছিলেন। যে কোনও বিদেশনীতি সংক্রান্ত বিষয়েও, যেমন পণবন্দীদের মুক্তি প্রসঙ্গেও মোদীই যাবতীয় কৃতিত্ব দাবি করেন। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে প্রচার করা হয়, যুদ্ধ থামানোর পিছনেও প্রধানমন্ত্রী মোদীরই প্রধান উদ্যোগ ছিল। এক কথায়, সব সাফল্যের পিছনেই একমাত্র মোদীর অবদান। এই পরিস্থিতিতে তাঁকে ছাড়া আর কাকে আক্রমণ করব?’ কৃষ্ণনগরের সাংসদের স্পষ্ট দাবি, আগামীদিনেও মোদী নিজেকে পরিবর্তন করবেন না।

পাশাপাশি, মোদীকে মুখ করে বিজেপির নির্বাচনী প্রচারেরও তীব্র সমালোচনা করেন মহুয়া মৈত্র। তাঁর ব্যাখ্যা, গত লোকসভা নির্বাচনে মানুষ নরেন্দ্র মোদীর নামেই ভোট দেবে বলে প্রচারপর্বের গোড়া থেকে দাবি করে বিজেপি। এই তত্ত্বের পালটা হিসেবে মহুয়ার বিশ্লেষণ, দেশের ৫৪৩টি আসনে কার্যত মোদীই প্রার্থী ছিলেন। বিজেপির দাবি ছিল, বাংলাতেও ৪২টি আসনে প্রার্থী সেই মোদীই। অর্থাৎ তাঁর ক্যারিশমাতেই ভোট বৈতরণী পার হয়ে যাবার দাবি করেছিল গেরুয়া শিবির। সেই কৌশল যদি সঠিক হত, তাহলে মোদীর ভাবমূর্তির জেরে বিজেপির সংখ্যগরিষ্ঠতা পাওয়া উচিত ছিল। অথচ বাস্তবে সেই অঙ্ক মেলেনি। বাংলার মানুষ মোদী ফ্যাক্টরকে আমল দেয়নি বলেই রাজ্যে ভরাডুবি হয়েছে বিজেপির। এই বিশ্লেষণের জের টেনেই মহুয়ার সাফ কথা, ‘এই লোকসভা নির্বাচনে যে জনাদেশ এসেছে, তা পুরোপুরি নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে।’

উল্লেখ্য, সংসদে বরাবরই কেন্দ্রের এনডিএ সরকারের বিরুদ্ধে সরব থেকেছেন বাগ্মী সাংসদ মহুয়া মৈত্র। তাঁর যুক্তিনির্ভর অকপট প্রশ্নবাণের সামনে একাধিকবার অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের অনেককে। তার মাশুলও গুনতে হয়েছে তৃণমূল সাংসদকে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে শেষ পর্যন্ত সংসদ থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। কিন্তু সমস্ত প্রতিকূলতাকে হার মানিয়ে লোকসভা নির্বাচনে ফের সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়েছেন কৃষ্ণনগরের সাংসদ। সাক্ষাৎকারে তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, সংকটকালে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অকুণ্ঠ সমর্থন ও আস্থা তাঁকে গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে আগুনে লড়াইয়ে শামিল হওয়ার সাহস ও শক্তি জুগিয়েছে। সংসদের আগামী অধিবেশনে সেই অগ্নিবাণ যে মূহুর্মূহু আবার সপার্ষদ নরেন্দ্র মোদীকেই চাঁদমারি করবে, তা রাখঢাক না করেই জানিয়ে দিয়েছেন পুনর্নির্বাচিত তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র।

(ঋণ স্বীকার: ইনসাইড আউট)



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version