ঋতভাস চট্টোপাধ্যায়, তুহিনা মণ্ডল | এই সময় ডিজিটাল এক্সক্লুসিভ
বহু বছর আগের কথা…তখনও বীরভূম রাজনীতিতে ‘কেষ্ট নাম’ ততটা জনপ্রিয় ছিল না। বাবার ব্যবসা সামলাতেন অনুব্রত। সেই সময় তিনি বিয়ে করেছিলেন পাড়ার মেয়ে ছবিকে। শ্বশুরবাড়ির দূরত্ব বাড়ি থেকে খুব একটা নয়, মেরেকেটে ২০০ মিটার। শোনা যায়, ঢাকঢোল পিটিয়ে নয়, রেজিস্ট্রি করেই সেই বিয়ে হয়েছিল। সেই বিয়েতে সাক্ষী হয়েছিলেন সেই সময় স্থানীয় কংগ্রেস নেতা চিত্তরঞ্জন রক্ষিত, বিকাশ রায়চৌধুরীরা। পাড়ায় কান পাতলে শোনা যায়, প্রেম করেই নাকি সেই বিয়ে হয়েছিল। যদিও একটি সাক্ষাৎকারে অনুব্রত দাবি করেছিলেন, প্রেম করেননি তিনি।শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে অনুব্রতর পরিবারের সম্পর্ক ছিল বেশ ভালোই। জামাই আদরে কোনওদিন খামতি রাখেননি ছবির পরিবার। অনুব্রতও স্ত্রী বেঁচে থাকাকালীন শ্বশুরবাড়ি যেতেন। কিন্তু, আপাতত তিনি বাংলা থেকে বহু দূরে। জামাইষষ্ঠীর দিন যখন অন্যান্য জামাইরা শ্বশুরবাড়িতে যাচ্ছেন সেই সময় অনুব্রত এবং তাঁর মেয়ে সুকন্যার জন্য মন কাঁদছে অনুব্রতর শালা আনন্দগোপাল ঘোষের।

বুধবার জামাইষষ্ঠীর দিন বোলপুরে অনুব্রত মণ্ডলের শ্বশুরবাড়িতে যান এই সময় ডিজিটাল-এর প্রতিনিধি। দোতলা বাড়িটার অধিকাংশ জায়গা থেকেই খসে পড়েছে রং। ভাঙাচোরা বাড়িটা কোনওরকম বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। বাড়িতে কোনও আড়ম্বর নেই। নেই উৎসবের ছিটেফোঁটা ছোঁয়াও। প্রথমে ঘোষ পরিবার সংবাদ মাধ্যমে মুখ খুলতে চাননি। রাজনীতির কথা কিছু বলবেন না, স্পষ্ট জানিয়ে দেন আগেই। তবে এই সমস্ত কিছুর মধ্যেই সুকন্য়ার মামা আনন্দগোপালের মন্তব্য, ‘মেয়েটার জন্য মনটা খারাপ লাগে।’

অনুব্রতর শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা

ছবিদেবী অসুস্থ হওয়ার আগে প্রত্যেকবার জামাইষষ্ঠীতে শ্বশুরবাড়িতে যেতেন অনুব্রত মণ্ডল। এই দিনটা কবজি ডুবিয়ে খেতেন সেখানে। সকলের থেকে আশীর্বাদ নিতেন। কিন্তু, ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন অনুব্রত মণ্ডলের স্ত্রী ছবিদেবী। রাজনীতির থেকে সময় বার করে স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য ছুটতে দেখা যেত বীরভূমের এই দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতাকে। কিন্তু, ২০২০ সালে স্ত্রী বিয়োগ হয় অনুব্রতর।

তাঁর ঘনিষ্ঠদের কথায়, সেই সময় বেশ ভেঙে পড়েছিলেন অনুব্রত। এরপর থেকেই আর জামাইষষ্ঠীতে শ্বশুরবাড়ি যাননি অনুব্রত মণ্ডল। তবে সকলের সঙ্গে ভালো ব্যবহার-সুসম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। ছবিদেবীর ভাই আনন্দগোপাল ঘোষ যে দুতলা বাড়িটিতে থাকেন তা একেবারেই জীর্ণ। অধিকাংশ জায়গা থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে। তাঁর একমাত্র সন্তান বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন। বোন বেঁচে থাকাকালীন তাঁর সঙ্গে মনের সুখ দুঃখের কথা বললেও কোনওদিন অনুব্রতর থেকে আর্থিক সাহায্য নেননি বলে দাবি করেন আনন্দগোপাল।

তাঁর কথায়, ‘অনুব্রত সাহায্য করতে চেয়েছিল। আমি নিইনি।’ জামাইষষ্ঠীতে যখন গোটা রাজ্যজুড়ে উৎসবের আমেজ সেই সময় বাড়ির জামাইকে দেখার সুযোগটুকুও নেই! তা নিয়ে খারাপ লাগা রয়েছে আনন্দগোপালের। তিনি জানান, তাঁর মা-বাবা গত হয়েছে আগেই। দুই ভাই-দুই বোন, ভগ্নিপতি সকলকে নিয়ে চলতেন তিনি।

কিন্তু, অনুব্রত এবং সুকন্যা মণ্ডল দুই জনেই তিহাড় জেলে বন্দি। ফলে তাঁদের সঙ্গে দেখা করার বা এই দিনটা আলাদা করে তাঁদের জন্য কোনও আয়োজন করার সুযোগ নেই। ঘোষ পরিবারে তাই জামাইষষ্ঠীতেও শোরগোল নেই।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version