এই সময়: ভোট পরবর্তী হিংসার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের নেতৃত্বে চার সদস্যের কেন্দ্রীয় টিম এরাজ্যে পাঠাচ্ছে বিজেপি। দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা এই সিদ্ধান্ত নিলেও কেন্দ্রীয় দল এসে নিচু তলার নেতা-কর্মীদের মনোবল কতটা বাড়াতে পারবে, তা নিয়ে সংশয়ী গেরুয়া শিবির।কারণ, কেন্দ্রীয় টিম অথবা রাজ্য বিজেপি নেতাদের পক্ষে কোনও এলাকায় দিনের পর দিন থাকা সম্ভব নয়। নির্দিষ্ট সময়ের পরে কেন্দ্রীয় বাহিনীও রাজ্য থেকে বিদায় নেবে। তাই পদ্ম সমর্থকদের রক্তক্ষরণ কতটা ঠেকানো যাবে তা নিয়ে গেরুয়া শিবিরেই প্রশ্ন রয়েছে।

নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-র সঙ্গে শুক্রবার রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কথা হয়। রাজ্যের যেখানে যেখানে বিজেপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা আক্রান্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ, সেই সংক্রান্ত বিশদ তথ্য, ছবি, ভিডিয়ো শুভেন্দু শনিবার সকালে শাহকে পাঠান।

এরপরেই দুপুরে বিপ্লব দেবকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের একটি টিম গঠন করে দেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। বিপ্লব ছাড়াও এই টিমে রবিশঙ্কর প্রসাদ, ব্রিজলাল, কবিতা পতিদার রয়েছেন। এক-দু’দিনের মধ্যেই এই টিম পশ্চিমবঙ্গে আসতে চলেছে।
বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক অরুণ সিংহ এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গে দেশের একাধিক রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচন পরবর্তী হিংসার মতো এবারেও লোকসভা ভোটের পরে সন্ত্রাস শুরু হয়েছে। দেশের অন্য কোনও রাজ্যে এমন ঘটনা ঘটছে না। শুভেন্দু এ দিন কোচবিহারে বলেন, ‘বিপ্লব দেব, রবিশঙ্কর প্রসাদের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের পরিদর্শক টিম পাঠানো হচ্ছে। দ্রুত তাঁরা আসবেন। তাঁদের বিভিন্ন এলাকায় যেতে অনুরোধ করব।’

যদিও বিজেপির এই হিংসার অভিযোগ মানতে নারাজ তৃণমূল। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়ে বিপ্লব দেব নিজেই রাজনৈতিক সন্ত্রাস চালিয়েছেন বলে অভিযোগ জোড়াফুল শিবিরের। ভোটের পরে যেখানে অশান্তি হয়েছে তা মূলত আদি বিজেপির সঙ্গে নব্য বিজেপি নেতাদের গোষ্ঠীবাজির ফল বলে তৃণমূলের বক্তব্য।

এদিন দলের রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ বলেন, ‘এরা রাজনৈতিক পর্যটক, নাটক করতে আসছে। এই বিপ্লব দেব মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়ে ত্রিপুরায় পুরভোটে তৃণমূল কর্মীদের উপর অকথ্য অত্যাচার, নির্যাতন, অপহরণ করা হয়েছিল। বিপ্লবের জমানায় তৃণমূল কর্মীদের ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য থানায় আক্রমণ হয়েছিল। বিপ্লব নিজেই সন্ত্রাসের প্রতীক।’

তৃণমূল নেতৃত্ব মনে করছে বিপ্লবের নেতৃত্বে বিজেপি টিম পশ্চিমবঙ্গে পা দিলেই ত্রিপুরায় এই বিজেপি নেতার জমানায় কী ভাবে বিরোধী শূন্য পঞ্চায়েত তৈরি করা হয়েছিল, তা পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে আরও বিশদে জানানো হবে। পাশাপাশি ত্রিপুরায় প্রচার করতে গিয়ে কী ভাবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, সায়নী ঘোষ, দেবাংশু ভট্টাচার্য আক্রান্ত হয়েছিলেন সেই ইতিহাসও ফের সামনে আনা হবে।

এদিকে, বিজেপির টিম নিয়ে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘বিজেপির এই টিমের কী গুরুত্ব রয়েছে? এমন টিম তো আগেও এসেছে, কিছু হয়েছে? সব ধামাচাপা পড়েছে।’

বঙ্গ বিজেপি অবশ্য এই কেন্দ্রীয় টিমকে হিংসা কবলিত এলাকায় নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করলেও নিচুতলার নেতা-কর্মীদের মনোবল কতদিন ধরে রাখা যাবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে খোদ গেরুয়া শিবিরেই। শুভেন্দু নিজেই এ দিন কোচবিহারের কয়েকটি জায়গায় যান।

নির্বাচন পরবর্তী হিংসা ইস্যু যুযুধান দুই ফুলের

বিজেপি-র ঘরছাড়া কর্মীদের শিবিরে তিনি বলেন, ‘আপনাদের ফেলে রেখে নেতৃত্ব সরে যায়নি, যেখানে যেতে বলবেন যাব। আমরা দু-চার ঘণ্টা, ছ’ঘণ্টা থাকব, কিন্তু টানা কয়েক দিন তো থাকব না। তাই আমরা চলে যাওয়ার পরে আরও অত্যাচার হবে কি না তা বিচার বিবেচনা করতে হবে।’

যদিও কুণালের সাফ কথা, ‘দিলীপ ঘোষ ছাড়া বিজেপিতে কেউ ঘরছাড়া নেই। দিলীপকে শুভেন্দুরা মেদিনীপুর থেকে উচ্ছেদ করেছে। তৃণমূলের কেউ বিজেপিকে মারছে না। অধিকাংশ জায়গায় আদি বিজেপির সঙ্গে তৎকাল বিজেপির নেতাদের সংঘাত চলছে। তা নিচু তলায় ছড়িয়ে পড়ছে। মারামারি চলছে।’ এই পরিস্থিতিতে আজ, রবিবার ভোট পরবর্তী হিংসায় আক্রান্তদের নিয়ে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের কাছে যাচ্ছেন শুভেন্দু।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version