বাড়ির মালিক ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগে বামনগাছিরই অন্য একটি এলাকায় থাকলেও কয়েক মাস আগে এই জায়গায় স্বামী ও ৮ মাসের সন্তানের সঙ্গে ভাড়া এসেছেন তিনি। বর্তমানে বামনগাছি রেললাইন সংলগ্ন বস্তিতেই ভাড়া থাকেন তাঁরা। স্বামী পেশায় দিনমজুর। বুধবার স্বামী কাজে চলে যাওয়ার পর সন্তানকে নিয়ে নীলরতন সরকার হাসপাতালে ওষুধ আনতে যান তিনি। সন্তানকে কোলে নিয়ে তার প্রয়োজনীয় জামাকাপড় একটি ব্যাগে ভরে রওনা দেন। মাঝে সন্তানের খিদে পেয়েছে ভেবেই স্তন্যপান করাতে গিয়ে একহাতে ওই ব্যাগ ধরে কিছুটা লজ্জা নিবারণের জন্য শাড়ির আঁচল দিয়ে ঢাকার চেষ্টা করেন। সেই সময় হঠাৎই পাশে থাকা কিছু মহিলা সহযাত্রী শিশুর কান্না শুনে এবং ওই ব্যাগ ও তার উপর ঢাকা কাপড় দেখে মহিলাকে চেপে ধরে।
এরপর মহিলার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে ওই মহিলারা। কিন্তু মহিলা ভাষা বুঝতে না পারায় উত্তেজিত হয়ে ওঠে সহযাত্রীরা। আগুনের মতো শিশুচুরির ‘গুজব’ ছড়ায় ওই কামরায়। মায়ের কাছ থেকে টেনে হিঁচড়ে আলাদা করে দেওয়া হয় সন্তানকে। চলে চরম হেনস্থা। ঘটনার পর কিছু সময়ের জন্য সন্তানকে কাছে পেলেও, পরে জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিকের দফতরে শিশুটিকে তুলে দেয় জিআরপি। বর্তমানে শিশুটি এক হোমে রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
প্রশানসের তরফে বলা হয়েছে, জন্মের উপযুক্ত প্রমাণপত্র দেখালে তবেই ফেরত দেওয়া হবে শিশুকে। আর তাই বুধবার রাত থেকেই জন্মের শংসাপত্রের খোঁজে শিশুটির বাবা। দিনমজুরির কাজ ফেলে এখন সন্তানকে ঘরে ফেরানোর লড়াই চালাচ্ছেন তিনি। অপরদিকে অযথা গুজবের জেরে সন্তানের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়া মা ঠায় দাঁড়িয়ে ঘরের দরজায়। শুধু অপেক্ষা, সন্তানের ঘরে ফেরার।
এদিকে ঘটনায় জিআরপি ওসি রূপসেনা পারভিন বলেন, ‘মহিলা জেরায় জানিয়েছেন বাচ্চাটি তাঁরই। আমি নিজে একজন মা, বাচ্চাটি যে ভাবে মহিলার কোলে স্বাভাবিক ছিল, যে ভাবে হাসছিল, খেলছিল, বুকের দুধ খাচ্ছিল তাতে আমি নিশ্চিত তিনিই ওই বাচ্চার মা। শুধুমাত্র ছেলেধরা গুজবে মায়ের কোল থেকে বাচ্চাকে কেড়ে নিয়ে ধুন্ধুমার ঘটনা ঘটাল একদল মানুষ।’