এক চিলতে ঘর, টিনের দেওয়াল, পলকা ছাউনি। দরজা দিয়ে মুখ বের করে দাঁড়িয়ে রয়েছেন এক মহিলা। বাংলা ভাষাও সেভাবে বোঝেন না। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, মানসিকভাবেও খুব একটা সুস্থ নন তিনি। আর সেই মহিলা ও তাঁর সঙ্গে থাকা শিশুকে ঘিরেই বুধবার ধুন্ধুমার পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় বিরাটি স্টেশনে। অভিযোগ ওঠে, চলন্ত ট্রেনে ওই মহিলার ব্যাগ থেকেই উদ্ধার হয়েছে শিশু। সহযাত্রীদের সন্দেহ হওয়ায় তাঁরাই শিশু সহ মহিলাকে বিরাটি স্টেশনে নামান। ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয় প্ল্যাটফর্মে। পরে অবশ্য জানা যায়, শিশুটি ওই মহিলারই সন্তান। আর ট্রেন যাত্রীদের ছড়ান গুজবের জেরেই বর্তমানে সন্তানের থেকে দূরে রয়েছেন মা। এবার সেই মহিলার বাড়িতেই পৌঁছে গেল এই সময় ডিজিটাল।জানা যায় ওই মহিলার বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার বামনগাছি। একদিকে তিনি কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন, অন্যদিকে রয়েছে ভাষাগত সমস্যা, আর সেই কারণেই তৈরি হয় এই জটিলতা। শুক্রবার বমনগাছিতে মহিলার বাড়িতে পৌঁছে জানা যায়, তিনি সেখানে ভাড়া থাকেন। ভাড়া বাড়ির দরজাতেই দাঁড়িয়ে রয়েছেন তিনি।

বাড়ির মালিক ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগে বামনগাছিরই অন্য একটি এলাকায় থাকলেও কয়েক মাস আগে এই জায়গায় স্বামী ও ৮ মাসের সন্তানের সঙ্গে ভাড়া এসেছেন তিনি। বর্তমানে বামনগাছি রেললাইন সংলগ্ন বস্তিতেই ভাড়া থাকেন তাঁরা। স্বামী পেশায় দিনমজুর। বুধবার স্বামী কাজে চলে যাওয়ার পর সন্তানকে নিয়ে নীলরতন সরকার হাসপাতালে ওষুধ আনতে যান তিনি। সন্তানকে কোলে নিয়ে তার প্রয়োজনীয় জামাকাপড় একটি ব্যাগে ভরে রওনা দেন। মাঝে সন্তানের খিদে পেয়েছে ভেবেই স্তন্যপান করাতে গিয়ে একহাতে ওই ব্যাগ ধরে কিছুটা লজ্জা নিবারণের জন্য শাড়ির আঁচল দিয়ে ঢাকার চেষ্টা করেন। সেই সময় হঠাৎই পাশে থাকা কিছু মহিলা সহযাত্রী শিশুর কান্না শুনে এবং ওই ব্যাগ ও তার উপর ঢাকা কাপড় দেখে মহিলাকে চেপে ধরে।

এরপর মহিলার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে ওই মহিলারা। কিন্তু মহিলা ভাষা বুঝতে না পারায় উত্তেজিত হয়ে ওঠে সহযাত্রীরা। আগুনের মতো শিশুচুরির ‘গুজব’ ছড়ায় ওই কামরায়। মায়ের কাছ থেকে টেনে হিঁচড়ে আলাদা করে দেওয়া হয় সন্তানকে। চলে চরম হেনস্থা। ঘটনার পর কিছু সময়ের জন্য সন্তানকে কাছে পেলেও, পরে জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিকের দফতরে শিশুটিকে তুলে দেয় জিআরপি। বর্তমানে শিশুটি এক হোমে রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।

প্রশানসের তরফে বলা হয়েছে, জন্মের উপযুক্ত প্রমাণপত্র দেখালে তবেই ফেরত দেওয়া হবে শিশুকে। আর তাই বুধবার রাত থেকেই জন্মের শংসাপত্রের খোঁজে শিশুটির বাবা। দিনমজুরির কাজ ফেলে এখন সন্তানকে ঘরে ফেরানোর লড়াই চালাচ্ছেন তিনি। অপরদিকে অযথা গুজবের জেরে সন্তানের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়া মা ঠায় দাঁড়িয়ে ঘরের দরজায়। শুধু অপেক্ষা, সন্তানের ঘরে ফেরার।

এদিকে ঘটনায় জিআরপি ওসি রূপসেনা পারভিন বলেন, ‘মহিলা জেরায় জানিয়েছেন বাচ্চাটি তাঁরই। আমি নিজে একজন মা, বাচ্চাটি যে ভাবে মহিলার কোলে স্বাভাবিক ছিল, যে ভাবে হাসছিল, খেলছিল, বুকের দুধ খাচ্ছিল তাতে আমি নিশ্চিত তিনিই ওই বাচ্চার মা। শুধুমাত্র ছেলেধরা গুজবে মায়ের কোল থেকে বাচ্চাকে কেড়ে নিয়ে ধুন্ধুমার ঘটনা ঘটাল একদল মানুষ।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version