এই সময়, আসানসোল: সে বেপরোয়া! কতটা? তাকে জেলে ঢোকানোর সময়ে সিআইডি-র তদন্তকারী অফিসারদেরই সে হুমকি দেয়— ‘দেখ লেঙ্গে!’ বিহারের কুখ্যাত গ্যাংস্টার সুবোধ সিংয়ের সর্বশেষ ‘কীর্তি’ সোমবারের এই থ্রেট।২০২২ সালে রানিগঞ্জে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে ডাকাতির মামলায় সুবোধকে বিহারের বেউর জেল থেকে ট্রানজ়িট রিমান্ডে আসানসোলে এনেছে সিআইডি। হেফাজতে নিতে চেয়ে এ দিন ফের সুবোধকে কোর্টে তোলে তারা। সেখান থেকে হাজতে ফেরানোর সময়ে আসানসোল জেল চত্বরে প্রিজ়ন ভ্যান থেকে নামানোর ঠিক পরেই এই মামলায় সিআইডি-র তদন্তকারী অফিসার (আইও) এবং অন্য এক অফিসারকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয় সুবোধ।

দু’জনেই সংস্থার উচ্চপদস্থ অফিসারদের ঘটনাটি সঙ্গে সঙ্গে জানান। এরপর আসানসোল দক্ষিণ থানায় সুবোধের নামে অভিযোগ দায়ের করেন মামলার সঙ্গে যুক্ত সিআইডি-র ইনস্পেক্টর কে রহমান। আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের ডিসিপি (সেন্ট্রাল) ধ্রুব দাস বলেন, ‘সিআইডির তরফে আসানসোল দক্ষিণ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে সুবোধ সিং নামে এক দুষ্কৃতী সিআইডির অফিসারদের হুমকি দিয়েছে। পুলিশ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করছে। বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েই দেখা হচ্ছে।’

তবে এই প্রথম নয়। সুবোধের বেপরোয়া মনোভাবের পরিচয় আগেও পাওয়া গিয়েছে। বেলঘরিয়ায় বিটি রোডের উপরে দিনেদুপুরে ব্যবসায়ী অজয় মণ্ডলের গাড়িতে গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। বুলেট-প্রুফ কাচের জন্য প্রাণে বেঁচে যান অজয়। এরপর তিনি যখন বেলঘরিয়া থানায় বসে অভিযোগ দায়ের করছেন, ঠিক তখনই তাঁর ফোনে আসে শাসানি— ‘বচ গয়া সালা!’ তদন্তকারীদের একাংশের জোরালো ধারণা, ফোনের অন্য প্রান্তে সেই গলা সুবোধেরই ছিল।

তবে এ দিনও সুবোধকে নিজেদের হেফাজতে পায়নি সিআইডি। আগামিকাল, অর্থাৎ ৩ তারিখ ফের কোর্টে পেশ করতে হবে তাকে। গত রবিবার সুবোধকে আদালতে তোলা হলে ফের আজ পেশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু দেশজুড়ে এ দিন থেকে বলবৎ নতুন ফৌজদারি দণ্ডবিধির প্রতিবাদে রাজ্যজুড়ে কর্মবিরতির ডাক দেয় বার কাউন্সিল। এতে আসানসোল আদালতের কাজকর্মও ধাক্কা খায়। ফলে এডিজে (১) তথা অতিরিক্ত জেলা জজ শুভ্র বন্দোপাধ্যায়ের এজলাসে এ দিন পাবলিক প্রসিকিউটর বা সুবোধ সিংয়ের হয়ে কোন সিনিয়র আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না।

হাজতে বসেই ৩০০ কোটির সুবোধ-সাম্রাজ্য, অবশেষে সিআইডির কব্জায়

এই অবস্থায় সুবোধকে এজলাসে এনে সিআইডি ১৪ দিনের জন্য হেফাজতে চায়। সেই সময়ে এজলাসে উপস্থিত এই মামলার সঙ্গে যুক্ত এক জুনিয়র আইনজীবী কোর্টকে স্মরণ করিয়ে দেন, গত ২১ জুন এই কোর্টই সুবোধকে ৩ জুলাই হাজির করানোর জন্য বেউর জেলের সুপারকে নির্দেশ দিয়েছিল। তা হলে সিআইডি তাকে ১ তারিখ হাজির করালো কেন, সে প্রশ্ন তোলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত বিচারক শুভ্র বন্দোপাধ্যায় ৩ জুলাই, অর্থাৎ আগামিকাল পর্যন্ত সুবোধকে আসানসোল জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এ দিন বেলা পৌনে বারোটা নাগাদ নিরাপত্তার কড়া ঘেরাটোপে সুবোধকে আদালতে আনা হয়। আর এ দিনও সুবোধ সাংবাদিকদের দেখে বলতে থাকে, ‘আমি নির্দোষ। আমাকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’ ঘণ্টাখানেক কোর্টে ছিল সুবোধ। এরপর তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় জেলে। সেই সময়েই সিআইডি-র দুই অফিসারকে হুমকি দেয় সে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version