সোমনাথ মণ্ডল
কলকাতা পুলিশের আওতায় থাকা থানাগুলো কি এ বার লালবাজারের ‘গোয়েন্দাগিরির’ আওতায় চলে আসছে? পশ্চিমবঙ্গ হোক বা ভিন রাজ্য-লক আপে মৃত্যুর ঘটনায় মাঝে মধ্যেই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় পুলিশ-প্রশাসনকে। বছরখানেক আগে আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় চোরাই মোবাইল জমা দিতে এসে রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হয় এক ব্যক্তির। পুলিশের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ ওঠে।লালবাজারের বিভাগীয় তদন্তে থানায় ঢোকা এবং বেরোনোর পথের সিসিটিভি ফুজেট মিললেও, ভিতরে অফিসারদের রুমে ওই ব্যক্তির সঙ্গে ঠিক কী ঘটেছিল, সেই ফুটেজ পাওয়া যায়নি। মানবাধিকারকর্মীদের অভিযোগ, থানায় যেখানে ক্যামেরা নেই, সেখানেই পুলিশি অত্যাচার চলে।

অথচ, ২০২০ সালে পাঞ্জাবে লক আপে একটি মৃত্যুর ঘটনায় দেশের সব থানার ১৪টি জায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। দেরিতে হলেও, এ বার সেই নির্দেশ মেনে সব থানাতেই দ্রুত নাইট ভিশন ক্যামেরা লাগানোর প্রক্রিয়া শেষ করতে চাইছে কলকাতা পুলিশ। থানার ফুটেজ যাতে সরাসরি পিটিএস-এর নতুন ডেটা সেন্টারে চলে আসে, সেই পরিকল্পনাও রয়েছে। তাতে থানায় কোনও অনিয়ম হলে, তা পুলিশকর্তাদের নজর এড়াবে না।

পুলিশ সূত্রে খবর, চলতি বছরে ২৮টি থানায় অত্যাধুনিক সিসিটিভি লাগানোর কাজ শুরু হয়েছে। আগে ২৪টি থানায় সেই কাজ হলেও, অর্থাভাবে প্রায় দু’বছর আটকে বাকি থানায় সিসিটিভি লাগানোর কাজ। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জানানো হয়েছে-থানায় ঢোকা এবং বেরোনোর পথ ছাড়াও লক আপ, লবি, রিসেপশন এবং অফিসারদের রুমেও সিসিটিভি ক্যামেরা থাকতে হবে। এমনকী, টয়লেটের বাইরেও লাগাতে হবে ক্যামেরা। শুধু তাই নয়, ফুটেজও সংরক্ষণ করতে হবে। যাতে কোনও মামলার ক্ষেত্রে তা কাজে লাগানো যায়।

কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, থানার সিসিটিভি ফুজেট সংরক্ষণ করা হয় সংশ্লিষ্ট থানাতেই। প্রয়োজন পড়লে লালবাজার তা চেয়ে পাঠায়। লালবাজারে যে তথ্যকেন্দ্র বা ডেটা সেন্টার রয়েছে, তাতে ফুটেজ এবং অফিসের ডেটা স্টোরেজের জায়গা কমে আসছে। সে কারণে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় পুজোর মধ্যেই কলকাতা পুলিশ ট্রেনিং স্কুল (পিটিএস)-এ একটি আধুনিক ডেটা সেন্টার কাজ শেষ করতে চলেছে লালবাজার।

থানার ক্যামেরার ফুটেজ সার্ভারের মাধ্যমে নতুন ডেটা সেন্টারে স্টোর করার পরিকল্পনাও রয়েছে। পুলিশের আধুনিকীকরণের জন্য সাহায্য আসে অ্যাসিস্ট্যান্স টু স্টেটস ফর মডার্নাইজেশন অফ পুলিশ স্কিমে। ওই ২৮টি থানায় নাইট ভিশন ক্যামেরা লাগানোর জন্য প্রায় ৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

বছর চারেক আগে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ থাকলেও, তা এ রাজ্যের অধিকাংশ থানাতেই কার্যকর হয়নি। ২০২২-এ বারুইপুর সংশোধনাগারের চার বিচারাধীন বন্দির মৃত্যুর (চার থানায় মারধর করা হয়েছিল) ঘটনায় কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা হয়।

দুর্ঘটনা এড়াতে সিসিটিভি ক্যামেরায় নজর রাজ্য সড়কে
সিআইডি তদন্তে জানা যায়, থানার সব জায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল না। রাজ্য গোয়েন্দাদের তদন্ত রিপোর্ট খতিয়ে দেখার পর, রাজ্যের সব থানায় সিসিটিভি ক্যামেরা ইনস্টলের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্টও। তবে তার পরেও তৎপরতার সঙ্গে কাজ হয়নি বলে অভিযোগ।

এ প্রসঙ্গে কলকাতা পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘ভাঙড় ডিভিশন-সহ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সব থানাতেই নিয়ম মেনে সিসিটিভি ইনস্টল করা হচ্ছে।’ মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর-এর সম্পাদক রঞ্জিত শূর বলেন, ‘সিসিটিভি খারাপ বা নেই বলে পুলিশ মামলা থেকে নিস্তার পেতে চায়। গত ১০ বছরে লক আপে মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েছে। ক্যামেরা ইনস্টল হলেই হবে না, তা সচল থাকাও জরুরি।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version