এই সময়, আলিপুরদুয়ার: অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছিল কিশোরী কন্যা। প্রসবের সময় এগিয়ে আসতেই ভিন রাজ্যের থানায় ছুটে যায় পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক বাবা। দাবি করে, তার নিজের ছেলেই ধর্ষণ করেছে কিশোরীকে। সেই ছেলের বয়স আট! তা শুনেই চোখ কপালে ওঠে পুলিশকর্তাদের। চেপে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই সেই পরিযায়ী শ্রমিক স্বীকার করে নিজের অপরাধের কথা। অভিযোগ, খোদ বাবার আদিম লালসার শিকার কিশোরী কন্যা!ভিন রাজ্যে মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে শাসানি দিয়ে পরিবারের মুখ বন্ধ করে রেখেছিল অভিযুক্ত। নিজের কুকীর্তি ঢাকতে আট বছরের ছেলের নামে ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে পুলিশের কাছে গিয়েছিল সে। কিন্তু এতটুকু শিশুর এমন অপরাধের কথাটা মেনে নিতে চাননি পুলিশকর্তারা। এর পরেই ফাঁস হয় আসল ঘটনা। সব কিছু জানার পরে স্তম্ভিত হরিয়ানা পুলিশের কর্তারা যোগাযোগ করেন আলিপুরদুয়ার পুলিশের সঙ্গে।

আদতে আলিপুরদুয়ারের শামুকতলা থানার বাসিন্দা হলেও, বেশ কয়েক বছর ধরে হরিয়ানার যমুনানগরে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করত অভিযুক্ত। সেখানেই পরিবার নিয়ে থাকত সে। দিনের পর দিন কিশোরী কন্যার উপরে নৃশংস অত্যাচার চালালেও ভয়ে মুখ খোলেনি মেয়ে। সময় গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিশোরীর দৈহিক পরিবর্তন শুরু হলে, বিষয়টি তার মায়ের নজরে আসে।

কিন্তু হুমকির ভয়ে মুখ খোলেননি তিনিও। প্রসবের সময় চলে আসায়, নতুন মতলব আঁটে অভিযুক্ত। কারণ সরকারি অথবা বেসরকারি হাসপাতালে প্রসবের জন্যে ভর্তি করতে গেলেই তার কুকীর্তি ফাঁস হয়ে যাবে যে! তাই নিজের শিশুপুত্রের বিরুদ্ধে ওই মারাত্মক অভিযোগ আনতে হাত কাঁপেনি তার। তবে সেই অভিযোগের সারবত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন হরিয়ানার পুলিশকর্তারা।

ইতিমধ্যেই ঘটনা জানাজানি হতেই মাঠে নামেন হরিয়ানার মানবাধিকার কর্মীরা। তাঁরাই ওই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর করেন। এ দিকে পুলিশের সহায়তায় সরকারি হাসপাতালে সন্তান প্রসব করে ওই কিশোরী। সদ্যোজাতকে একটি সমাজকর্মী সংগঠনের মাধ্যমে তুলে দেওয়া হয় এক নিঃসন্তান দম্পতির হাতে। হরিয়ানা পুলিশের তরফে গোটা ঘটনা মেইল মারফত জানানো হয় আলিপুরদুয়ার জেলা পুলিশকে।

অটোর ৪০ টাকা ভাড়া দেওয়া নিয়ে বচসা! সহকর্মীকে খুনের অভিযোগ

তারপরেই নড়েচড়ে বসেন জেলার পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবমশী। তাঁর নির্দেশে জেলা পুলিশের চার সদস্যের একটি বিশেষ দল হরিয়ানা থেকে ওই কিশোরীকে উদ্ধার করে আনে। গ্রেপ্তার করা হয় অভিযুক্ত বাবাকেও। উদ্ধারের পরে ওই কিশোরীকে সিডব্লিউসি-র হাতে তুলে দেয় পুলিশ। কিশোরীর ঠাঁই হয়েছে কোচবিহারের সরকারি হোমে। অভিযুক্ত বাবার বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে আলিপুরদুয়ার জেলা আদালতে পেশ করার পরে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

জেলা সিডব্লিউসি-র চেয়ারম্যান অসীম বসু বলেন, ‘ভাবতে অবাক লাগছে। সামাজিক অবক্ষয় কোন পর্যায়ে পৌঁছে গেলে, মানুষ এমন ঘৃণ্য কাজ করতে পারে?’ জেলার পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবমশী বলেন, ‘আমি ভাষা হারিয়েছি। কোনও মন্তব্য করব না।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version