এই সময়: ২০১৮-এ পারেননি। ২০১৯-এও তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে জনা সত্তরের বেশি মানুষ জমায়েত করেননি শহরে। তবু তিনি নিজের লক্ষ্য থেকে সরে দাঁড়াননি রিমঝিম সিনহা। আরজি কর হাসপাতালে কর্তব্যরত অবস্থায় চিকিৎসক-ছাত্রীর ধর্ষণ-খুনের ঘটনার পর রিমঝিমই প্রথম একটি পোস্ট করেন তাঁর ফেসবুক ওয়ালে। যা ছড়িয়ে পড়ে দাবানলের মতো।সেই প্রথম পোস্টে আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে রিমঝিম শুধু একার সামর্থ্যেই দলীয় পতাকার ঊর্ধ্বে উঠে ১৪ অগস্ট মধ্যরাতে যাদবপুর এইট-বি বাসস্ট্যান্ডে বসার ডাক দিয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন, মেয়েরা রাতের দখল নিক। গত শনিবার রিমঝিমের তোলা সেই ডাক সোশ্যাল মিডিয়ায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে বুধবার রাতে গোটা রাজ্যেই বিভিন্ন প্রান্তে মানুষ জমায়েত করলেন। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সেই সংখ্যাটা আড়াইশো ছাড়িয়ে গিয়েছে।

কে এই রিমঝিম? কেন তিনি এই ডাক দিলেন?আদতে কেষ্টপুরের বাসিন্দা রিমঝিম ২০২০ সালে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাশ করেন সমাজতত্ত্ব নিয়ে। এখন তিনি গবেষণা করছেন। ছাত্র আন্দোলনের চেনা মুখ রিমঝিম লড়াইয়ের শুরুটা করেছিলেন ২০১৮ সালে তাঁর নিজের ক্যাম্পাস থেকেই। ওই সময়ে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় উত্তাল হয়ে উঠেছিল মি-টু আন্দোলনকে কেন্দ্র করে।

প্রেসিডেন্সির অনেক ছাত্রী তাঁদেরই সহপাঠী ছাত্রের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থা, ধর্ষণের চেষ্টা-সহ একাধিক এমন অভিযোগে সরব হন। ক্যাম্পাসে নিভৃতে ঘটে চলা সেই সব ঘটনার বিরুদ্ধে প্রথমে অবস্থান, পরে দোষীদের শাস্তির দাবিতে অনশন আন্দোলনেও বসেন রিমঝিম-সহ বাকিরা। তবে সেই আন্দোলনের পরেও কর্তৃপক্ষ সে ভাবে কোনও পদক্ষেপই করেননি বলে অভিযোগ। আরজি করের ঘটনার পরে রিমঝিমের তোলা প্রথম স্লোগানে সাড়া দিয়ে রাস্তায় নামলেন অনেকে।

অনেকে আবার পাশে থাকার বার্তা দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করছেন। এমনকী এই ভিড়ে সেই অভিযুক্তদের অনেকেও আছেন, যাঁরা সে দিন রিমঝিমদের অনশন প্রত্যাহারের পর টিটকিরি দিয়েছিলেন ক্যাম্পাসে। ২০১৯ সালে হায়দরাবাদে পশু রোগ বিশেষজ্ঞ এক মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার পরও রিমঝিম একই ভাবে রাস্তার দখল নেওয়ার ‘কল’ দিয়েছিলেন। স্লোগান তোলেন, ‘মুঝে গুলাব নেহি, ইনকিলাব চাহিয়ে!’

কিন্তু সে বারও জনা ৭০-এর বেশি সহনাগরিক তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে এগিয়ে আসেননি। সেই রিমঝিম এখন বলছেন, ‘সব লড়াই জেতার জন্য নয়। কিছু লড়াই করতে হয় লড়াইয়ে যে আছি, সেই বার্তাটা দিতেও। প্রেসিডেন্সিতে সে দিন যারা আমাদের উদ্যোগে হেসেছিল, টিটকিরি দিয়েছিল, তারা আজও ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারে না।’

তাঁর রাত দখলের ডাকে সাড়া দিয়ে যে মেয়েরা এ দিন রাতের শহরের দখল নিলেন, তাঁদের উদ্দেশে রিমঝিম বলছেন, ‘শুধু একদিনের রাত দখলেই পরিস্থিতি বদল হবে না। মেয়ে হোক, ছেলে হোক বা প্রান্তিক লিঙ্গ পরিচয়ের মানুষ, সজাগ থাকুন, রাতে-দিনে-দুপুরে। ক্যাম্পাসে, পরিবারের মধ্যে বা পাড়ায় ঘটে চলা নিগ্রহ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে ১৪ অগস্ট রাতের মতোই আওয়াজ তুলুন।’ কারণ রিমঝিম চান, পুরুষতন্ত্র আর ক্ষমতার উপরে মনুষ্যত্বের নিশান ওড়াতে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version