এই সময়: ভিউ, লাইক বা শেয়ারের সংখ্যা যতই বেশি হোক না কেন, আরজি কর হাসপাতালের ঘটনার পর বিভিন্ন পুজো কমিটি দুর্গাপুজোর অনুদান নিতে অস্বীকার করছে বলে নিয়মিত যে খবর রটছে, তার পুরোটাই ভুয়ো। এমনটাই জানাচ্ছে দুর্গোপুজো কমিটিগুলোর উদ্যোক্তাদের কমিটি ফোরাম ফর দুর্গোৎসব কমিটি। সংগঠনের দাবি, শহরে বারোয়ারি পুজোর সংখ্যা ২ হাজার ৭৯৩। ফোরামের মতে, এখনও পর্যন্ত এর মধ্যে একটা বারোয়ারিও অনুদান নিতে অস্বীকার করেনি।

সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার কয়েক মিনিটের মধ্যে কয়েক হাজার ভিউ। সঙ্গে কয়েকশো লাইক। পোস্টের বিষয়বস্তু — দুর্গাপুজোয় সরকারি অনুদানের ৮৫ হাজার টাকা নিতে অস্বীকার করছে কোনও ক্লাব। আরজি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং তাঁর নারকীয় হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদেই এমন সিদ্ধান্ত ওই ক্লাবের। আসল অপরাধীর গ্রেপ্তারি এবং যত দ্রুত সম্ভব তার দৃষ্টান্তমূলক সাজাপ্রাপ্তির দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে যাঁরা ক্রমাগত পথে নামছেন, তাঁদের আন্দোলন যেন আরও বেশি করে উৎসাহ পাচ্ছে এমন এক একটা পোস্টে।

কিন্তু এমন একটা পোস্টেরও কোনও বাস্তব ভিত্তি নেই বলেই জানা যাচ্ছে। এই কারণেই এই ধরনের পোস্টকে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বাংলার দুর্গাপুজোকে হেয় করার চেষ্টা বলে মনে করছেন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শাশ্বত বসু। তিনি বলছেন, ‘কলকাতায় ২ হাজার ৭৯৩টি বারোয়ারি পুজোর মধ্যে আমাদের সদস্য ৬০০-র বেশি। এখনও পর্যন্ত আমাদের কোনও সদস্য অনুদান নিতে অস্বীকার করেনি। কোনও বরোয়ারিও এমন করেছে বলে আমার কাছে খবর নেই। এই ধরনের পোস্ট একটা গভীর চক্রান্তের অংশ বলেই আমরা মনে করছি।’

ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের উত্তর কলকাতার কমিটিগুলোর সম্পাদক অভিষেক ভট্টাচার্য বলছেন, ‘দুর্গাপুজো নিছক একটা পুজো নয়। এর নেপথ্যে রয়েছে দেড় লক্ষ কোটি টাকার অর্থনীতি। যুক্ত থাকে এক কোটির বেশি পরিবার। সোশ্যাল মিডিয়ায় কয়েকটা পোস্ট করে এই বিরাট কর্মযজ্ঞকে হেয় প্রতিপন্ন করার লোক অনেক আছে।’

ফোরামের দক্ষিণ কলকাতা শাখার কোষাধ্যক্ষ সন্দীপ চক্রবর্তী বলছেন, ‘দক্ষিণ কলকাতাতেই ৯৪টি পুজো ফোরামের সঙ্গে যুক্ত। এখনও পর্যন্ত কেউ অনুদান নিতে অস্বীকার করেননি। কোনও হাউসিং অনুদান পায় না। সুতরাং হাউসিংয়ের নাম করে অনুদান অস্বীকার করার যে প্রচার চলছে, সেটা ভিত্তিহীন। আমরা সবাইকে বলছি, গুজবে কান না দিতে।’

গোটা বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার তৃণমূলের রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ বলেন, ‘পুজোর অনুদান বয়কট অত্যন্ত আপত্তিকর কথা। এখন যাঁদের টাকা পয়সা আছে, সরকারি অনুদান লাগে না, তাঁরা রাজনীতির কারণে এমন কথা বলতে পারেন। পুজো মানে শুধু ধর্ম-উৎসব নয়। পুজো একটা বড় অর্থনীতি। মৃৎশিল্পী, ডেকোরেটর, আলো, ঠাকুরের সাজ, ফুল চাষি, বিসর্জনের ব্যান্ড— সবার কাছে পুজো কমিটির মাধ্যমে টাকা পৌঁছয়। যাঁরা পুজোর ফান্ড কমাতে চান তাঁরা বহু গরিব মানুষের ভাঁড়ারে টান দিতে চাইছেন। যাঁরা বলছেন পুজো ছোটো করুন তাঁরা কি পুজো অর্থনীতিতে যুক্তদের আয় কমে গেলে তার দায়িত্ব নেবেন? একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার সঙ্গে পুজোর কী সম্পর্ক? যাঁরা এই বয়কটের কথা বলছেন তাঁরা মানুষকে বিপথে চালিত করতে চাইছেন।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version