এমনই স্লোগান মিলিয়ে দিল কলকাতার সঙ্গে কুর্দিস্তানকে। কুর্দিস্তান? সেটা আবার কোথায়? এক দিকে, সুজলা-সুফলা-বাংলা আর অন্য দিকে, রুক্ষ প্রস্তরভূমি আরব ভূখণ্ডের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কুর্দ জনগোষ্ঠী। তবু মিলে যায়। মিলিয়ে দেন দুই তরুণী, কাকতালীয় ভাবে যাঁরা আবার পেশায় চিকিৎসক। ভাষা, সংস্কৃতি, আদবকায়দায় আশমান জমিন ফারাক থাকলেও কুর্দদের মুখে এখন শুধু আরজি করের নির্যাতিতার সমর্থনে তাঁদের পেটেন্ট স্লোগান, ‘জিন জিয়ান আজ়াদি’ অর্থাৎ ‘woman, life, freedom’।আর ওই স্লোগানের জেরে আরজি কর হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনার সঙ্গে মিশে যান ইরানের অধীন ইস্ট কুর্দিস্তানের জিনা মাশা আমিনি। কলকাতার তিলোত্তমার মতো কুর্দ জিনা আমিনিও ছিলেন ডাক্তারির পড়ুয়া। মেয়েদের মাথায় থাকতেই হবে হিজাব, ইরানের এই নীতিপুলিশি মানতে পারেননি ২৩ বছরের জিনা আমিনি। তাঁর প্রতিবাদ মেনে নেয়নি ইরান সরকার। ২০২২-এর ১৬ সেপ্টেম্বর ভাইয়ের সঙ্গে থাকা আমিনিকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় ইরানের নীতিপুলিশ।

তার পরেই ইরানের রেভোলিউশনারি ফোর্সের হাতে নির্মম অত্যাচারে মৃত্যু হয় জিনা মাশা আমিনির। তাঁর মৃত্যুই জন্ম দেয় নতুন এক স্লোগানের: জিনা জিয়ান আজাদি, ওমেন লাইফ, ফ্রিডম। সেই স্লোগানেই পথে নেমেছেন এ দেশের মুক্তিকামী মহিলারা। কলকাতা, মুম্বই, দিল্লি, হায়দরাবাদ, পুনে… সর্বত্র। আর এই স্লোগানের জেরেই অস্তিত্বহীন কুর্দরা আজ তিলোত্তমার পাশে, ভারতের নিপীড়িত মেয়েদের নির্যাতনের শরিক।

আরব ভূখণ্ডে কুর্দদের নেই নিজস্ব দেশ। তারা ছড়িয়ে রয়েছে ইরাক, ইরান, তুরস্ক, জর্ডনে। প্রতিটি দেশেই তারা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক। তারা লড়াই করেছে আইসিসের সঙ্গে। সেই যুদ্ধে কুর্দ মেয়েরা হাতে তুলে নিয়েছিলেন সয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র। তাদের হার না মানা জেদে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল আইসিস জঙ্গিরা। সেই কুর্দরা যখন কলকাতার এক চিকিৎসকের হাসপাতালের ভিতরে ধর্ষিত হয়ে খুন হওয়ার ঘটনা দেখেন, তখন তাঁরাও বলছেন, আমরা ভারতের মেয়েদের পাশে আছি। জিন জিয়ান আজাদি: women, life, freedom।

১৪ অগস্ট আরজি করের চিকিৎসকের হত্যাকারীদের শাস্তির দাবিতে ভারতের প্রতিটি কোণে স্লোগান উঠেছিল: উই ওয়ান্ট জাস্টিস। সেখানেই দেখা গিয়েছিল, ‘নারীরা রাত দখল করুন’-এর পাশে জিন জিয়ান আজাদি লেখা স্লোগান। তার চারপাশে হাজার জনতার প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। সেই ছবি পৌঁছে যায় বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা কুর্দদের কাছে। সেই ছবি দিয়ে খবর করে বেলজিয়ামের আনহা হাওয়ার নিউজ এজেন্সি।

কয়েকজন কুর্দ সাংবাদিক সেই এজেন্সি চালান। ইউরোপ, পশ্চিম এশিয়ায় মূলত পরিবেশিত হয় তাদের সংবাদ। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের তরুণী চিকিৎসকের খুনের প্রতিবাদে ছবি দিয়ে তাঁরা খবর প্রকাশ করতেই তা ছড়িয়ে পড়ে গোটা কুর্দিস্তানে। তারপরেই তাঁরা জিনা মাশা আমিনির সঙ্গে মিল খুঁজে পান কলকাতার তিলোত্তমার।

ইরানে হিজাব আন্দোলনে নারীদের উপর ইরানি ফৌজের দমনপীড়ন নিয়ে নিয়মিত ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী নিনা আনসারি। বেলজিয়ামের আনহা হাওয়ার এজেন্সির খবর তিনি পোস্ট করেন তাঁর টাইমলাইনে। সেখানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মন্তব্য করেন মহিলারা। বাঙালি কন্যার নির্মম খুনে তাঁরাও প্রতিবাদ জানান। ভারতেও জিন জিয়ান আজাদি স্লোগানে আবেগরুদ্ধ জনতা সেখানেই কবিতা লেখেন। যেমন লিখেছেন, আথেনা শি গার্সিয়া।

তিনি লিখেছেন —Women, life, freedom We all stand chant Women, life, freedom We all will cry Women, life freedom Jin jiyan azadi
We all will stand Until every life is free।

সেই পোস্টে মন্তব্য ভেসে এসেছে: পারস্য থেকে যে স্লোগানের জন্ম তা ভারত ঘুরে আবার পারস্যে ফিরে আসবে। ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠবে নিশ্চিহ্ন হতে-বসা নারীর অধিকার। আবার কেউ মন্তব্য করেছেন, আমরা কুর্দবাসী তোমাদের আন্দোলনের পাশে আছি। ভারতীয় নারীদের দুর্দশা আমরা বুঝি কারণ, আমরাও যে দুর্ভাগা।

নির্যাতিতা মিলিয়ে দেন চিরশত্রু মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের কয়েক কোটি সমর্থককে। জন্ম নেয় ঐতিহাসিক সব মুহূর্ত। আবার সেই নির্যাতিতা মিলিয়ে দিচ্ছেন কলকাতার সঙ্গে আজাদির লড়াই চালিয়ে যাওয়া আরব দুনিয়ার কুর্দিস্তানকেও।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version