আচমকা সাথীহারা হয়ে গেল আলিপুর চিড়িয়াখানার মাদি জলহস্তী। দাঁতের জটিল অপারেশন করার পরেই অসুস্থতার জেরে মৃত্যু হয়েছে পুরুষ জলহস্তীর। জ়ু কতৃর্পক্ষ জানিয়েছে, ১৬ অগস্ট জলহস্তীর এনক্লোজ়ারেই ৩ ঘণ্টার অপারেশন হয়েছিল। অস্ত্রোপচারের পরে জ্ঞানও ফিরেছিল বছর বিয়াল্লিশের পুরুষ জলহস্তীর।তার পরে আচমকা অসুস্থতার জেরে ১৭ অগস্ট, শনিবার ভোরবেলা আলিপুরের এনক্লোজ়ারেরই মৃত্যু হয় তার। এতদিন চিড়িয়াখানায় একটি পুরুষ ও একটি মাদি জলহস্তী সবার আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু ছিল। পুরুষ জলহস্তীটির দাঁতের সমস্যা ছিল দীর্ঘদিনের। তার মৃত্যু নিয়ে মঙ্গলবার সকালে জানতে চাওয়া হলে প্রাথমিক ভাবে চিড়িয়াখানার তরফ থেকে ঘটনাটিকে ‘রুটিন বিষয়’ বলে দাবি করা হয়।

অথচ একাধিক সূত্রে দাবি করা হয়েছিল, অস্ত্রোপচারের আগে জলহস্তীটিকে ঘুমপাড়ানি গুলি নির্দিষ্ট ডোজ় মেনে দেওয়া হয়নি। মঙ্গলবার দুপুরে ওই অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবি করে আলিপুর চিড়িয়াখানার ডিরেক্টর শুভঙ্কর সেনগুপ্ত জানান, সব রকমের পদ্ধতিগত নিয়মনীতি অনুসরণ করেই জলহস্তীটির চিকিৎসা চলছিল। তাতে সে সাড়াও দিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যায়নি। আপাতত জলহস্তীটির দেহের ময়নাতদন্ত, বায়োপসি এবং প্যাথোলজিক্যাল রিপোর্টের অপেক্ষায় রয়েছেন আলিপুর কর্তৃপক্ষ।

কী হয়েছিল ওই জলহস্তীর?
ডিরেক্টর শুভঙ্করের কথায়, ‘গত ১০ বছর ধরে আস্তে আস্তে ওর নীচের চোয়ালের দু’দিকে থাকা ক্যানাইন বাড়ছিল। ক্রমশ সেটা নাকের পাশে চামড়া ফুটো করে ঢুকে প্রায় মস্তিষ্ক পর্যন্ত গভীর ক্ষত তৈরি করে। দাঁত নাড়ালেই সেই ক্ষতে আঘাত লাগছিল, মুখ খুললে গলগল করে বেরোচ্ছিল রক্ত। ক্ষতগুলো ক্রমশ ম্যালিগন্যান্সির দিকে যাচ্ছিল। ও ঠিক করে খেতেও পারছিল না। তাই প্রায় দেড় বছর ধরে দেশের বিভিন্ন এক্সপার্টের সঙ্গে কথা বলা হয়। একটা মেডিক্যাল বোর্ডও গড়া হয়, যেখানে চিড়িয়াখানার চিকিৎসক, রাজ্যের অ্যানিম্যাল রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্টের চিকিৎসক, আরও বিশেষজ্ঞ-উপদেষ্টারা ছিলেন। জুলাই মাসেই সিদ্ধান্ত হয়, ১৬ অগস্ট ওর অপারেশন হবে। কারণ ওই দিন চিড়িয়াখানা বন্ধ থাকবে। শুক্রবার এনক্লোজ়ারের ভিতরে আলাদা কোয়ারান্টিন সেট-আপ করে জলহস্তীর অপারেশনের সময়ে সবাই ছিলেন। সঙ্গে চিড়িয়াখানার অন্তত ৭০ জন কর্মী গোটা ব্যবস্থার দেখভাল করেছেন।’

দু’সপ্তাহে প্যারালাইজ়ড হয়ে মৃত ৪টি গন্ডার শাবক

ক্যানাইনের অবস্থান নিশ্চিত জানতে পোর্টেবল এক্স-রে মেশিন কেনা হয়েছিল। ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়ে জলহস্তীকে ট্র্যাঙ্কুলাইজ় করার পরে ৩ ঘণ্টা চলে অপারেশন। সেখানে করাত দিয়ে তার দুটো ক্যানাইনেরই কিছুটা অংশ কেটে বাদ দেওয়া হয়। তার পর জ্ঞান ফিরলে দাঁড়িয়ে কিছুটা হাঁটাহাঁটিও করেছিল জলহস্তীটি। তা হলে পরদিন ভোরের দিকে কেন আচমকা মৃত্যু হলো তার?

অভিজ্ঞ পশু চিকিৎসকদের একটি সূত্রের দাবি, অপারেশনের আগে ও পরে দীর্ঘক্ষণ জলহস্তিকে জলাশয়ের বাইরে রাখলে তার শরীরের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক বেড়ে হাইপারথার্মিয়া হতে পারে, তা থেকে মৃত্যুও হয়। অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধের রেশেও মৃত্যু হতে পারে। যদিও চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের দাবি, জলহস্তীকে নির্দিষ্ট ডোজ়ের ঘুমপাড়ানি ওষুধ দেওয়ার পরেও তার শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার উদাহরণ প্রচুর। তা ছাড়া এ ক্ষেত্রে জলহস্তীটি অসুস্থ ছিল এবং সাধারণ জীবনকালের (৩৫-৪০ বছর) উপান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। আপাতত ময়নাতদন্ত ও বাকি রিপোর্টের অপেক্ষায় রয়েছেন আলিপুরের আধিকারিকরা।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version