রাজ্যের পরিষদীয় দপ্তর সূত্রের খবর, আগামী সোমবার বিধানসভার বিশেষ এই অধিবেশন শুরু করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে ধর্ষণ বিরোধী নতুন বিল মঙ্গলবার পেশ করা হতে পারে। ওই দিনই বিল পাশ করাতে রাজ্য সরকার উদ্যোগী হতে পারে। নবান্ন সূত্রের খবর, নতুন এই বিলে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তকে কঠোরতম সাজা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
মমতার পাশাপাশি ধর্ষণ বিরোধী কঠোর আইন প্রণয়ন করতে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের উপরেও চাপ বাড়াতে চাইছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মোদী সরকার কঠোর আইন না-আনলে দিল্লিতে তৃণমূল বৃহত্তর আন্দোলনে নামবে বলে অভিষেক ঘোষণা করেছেন। অভিষেক নিজেও সাংসদ হিসেবে ধর্ষণ বিরোধী প্রাইভেট মেম্বার বিল লোকসভায় পেশ করবেন বলে জানিয়েছেন।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ঘটনায় সাত দিনের মধ্যে অভিযুক্তের বিচার শেষ করে ফাঁসির সাজা দিতে চেয়েছিলেন মমতা। কিন্তু হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে চলে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ট্রায়াল শেষ করে কবে সিবিআই অভিযুক্তকে সাজা দিতে পারবে, তা স্পষ্ট নয়। ধর্ষণের মোকাবিলায় বর্তমানে যে কেন্দ্রীয় আইন (ভারতীয় ন্যায় সংহিতা) রয়েছে, তা দুর্বল বলে মমতার পর্যবেক্ষণ।
তাই ধর্ষণে অভিযুক্তকে কঠোর সাজা দিতে নতুন আইনের পক্ষে সওয়াল করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু মোদী সরকার এমন আইন করতে যে খুব একটা আগ্রহী নয়, তা কয়েক দিন আগে কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুবিকাশ মন্ত্রী অন্নপূর্ণা দেবীর চিঠি থেকেই স্পষ্ট হয়েছে। এই চিঠিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যুক্তি দিয়েছেন যে, বর্তমান আইনে ধর্ষককে কঠোর সাজা দেওয়ার পথ রয়েছে। মোদী সরকারের এই অনীহা দেখে মমতা নিজেই রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর আইন তৈরি করতে চলেছেন বলে তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য।
বুধবার মেয়ো রোডের সভায় মমতা বলেন, ‘অধ্যক্ষকে বলে আগামী সপ্তাহে বিধানসভার অধিবেশন আহ্বান করব। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা থেকে আমরা আগামী ১০ দিনের মধ্যে ধর্ষকের ফাঁসি চাই— এই বিল পাশ করে রাজ্যপালের কাছে পাঠাব। আমি জানি, রাজাবাবু কিছু করবে না। উনি না-করলে মেয়েরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাজভবনে গিয়ে বসে থাকবে। ভাইরাও থাকবে। এই বিলে ওঁকে সই করতে হবে। রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে দিয়ে দায়িত্ব সারলে হবে না।’
এর পাশাপাশি ধর্ষকের ফাঁসি চাই— এই দাবি নিয়ে তৃণমূলের মহিলা কর্মী-সমর্থকরা ব্লকে ব্লকে ধর্না-অবস্থানে বসবেন বলেও মমতা জানিয়েছেন। রাজ্য সরকার এই কঠোর আইন তৈরি করতে পারলে ধর্ষণের মতো অপরাধ কমবে বলে তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের পর্যবেক্ষণ। মমতার কথায়, ‘মহিলাদের সুরক্ষার জন্য আপনাদের (মোদী) আইন শক্তিশালী নয়। আমরা ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট চাই। দেখুন, এটা যদি হয়, (ধর্ষণ) থেমে যাবে।’
মমতার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘ভারতের বর্তমান আইনেই মৃত্যুদণ্ডের সাজা রয়েছে। আমি জানি না, বিধানসভা এই আইন করতে পারে কি না। আমি যতদূর জানি, এমন আইন সংসদে পাশ করাতে হয়। কে আইন প্রয়োগ করছে, তার উপরে সব কিছু নির্ভর করে। মানুষকে উনি আর কত বোকা বানাবেন?’
এমন আইন তৈরির জন্য বিশেষ অধিবেশন ডাকার এক্তিয়ার রাজ্য সরকারের নেই বলে দাবি করেছেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। রাজ্য সরকারের উদ্যোগ নিয়ে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী কামদুনির ঘটনাতেও ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে বিচার করে ফাঁসি দেওয়ার কথা বলেছিলেন। এর অর্থ, প্রচলিত আইনেই এই শাস্তির বিধান রয়েছে। যদি না-থাকে, তা হলে সে দিন কেন উনি ফাঁসির সাজা হবে বলেছিলেন?’
যদিও কামদুনির ঘটনা নিয়ে মমতা একাধিক বার বলেছেন যে, রাজ্য সরকার অভিযুক্তদের মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিতে চাইলেও হাইকোর্টের রায়ে দোষীদের যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে যখন ধর্ষণ বিরোধী নতুন আইন তৈরির তোড়জোড় শুরু হয়েছে, তখন তৃণমূল দলগত ভাবেও অভিষেকের নেতৃত্বে এই বিষয়ে দিল্লিতে সরব হতে চলেছে।
মেয়ো রোডে টিএমসিপি-র সভায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘কেন্দ্রকে আমরা দলগত ভাবে চিঠি লিখব। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যে চিঠি লিখেছেন। এই ধরণের নৃশংস ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে আমাদের চাই ধর্ষণ বিরোধী কঠোর আইন। কেন্দ্রের সরকার যদি এই আইন না-আনে আমি প্রাইভেট মেম্বার বিল মুভ করব।’
অভিযুক্তকে এক থেকে দু’মাসের মধ্যে সাজা দেওয়ার জন্যই এই নতুন আইন প্রয়োজন বলে ব্যাখ্যা দিয়েছেন অভিষেক। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ঘটনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে রাজ্যে আন্দোলন শুরু করেছে বিজেপি। অভিষেক মনে করছেন, রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের বদলে ধর্ষণ বিরোধী কঠোর আইনের দাবি নিয়ে বিজেপির উচিত নরেন্দ্র মোদীর কাছে দরবার করা।
অভিষেকের কথায়, ‘যাঁরা বলছেন, দাবি এক, দফা এক, মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ। আমি বলছি, দাবি এক, দফা এক, তা হলো ধর্ষণ বিরোধী আইন। যাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছেন, তাঁরা সংসদ অভিযান করুন। নরেন্দ্র মোদী,অমিত শাহর কাছে গিয়ে কঠোর আইন তৈরির দাবি করুন।’
ধর্ষণ বিরোধী নতুন কঠোর আইন তৈরি হলে গেরুয়া শিবিরের লোকেরাই জেলে যাবে বলে বিজেপি নতুন আইন তৈরি করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না বলে অভিষেকের পর্যবেক্ষণ।