তিন সপ্তাহ হয়ে গেল আরজি করে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনার। তার পর থেকেই কর্মবিরতিতে জুনিয়র ডাক্তাররা। ফলে সরকারি হাসপাতালের পরিষেবায় অচলাবস্থার ছাপ স্পষ্ট। ইমার্জেন্সি বাদে বহু মানুষই যথাযথ চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানে সপ্তাহ তিনেক হলো, রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। তবে সব বড় মাপের বেসরকারি হাসপাতাল নয়, তুলনায় একটু ছোট বেসরকারি হাসপাতালে বেড়েছে রোগীর সংখ্যা।স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে খবর, এমনি সময়ে দৈনিক প্রায় ৬৫-৭০ হাজার রোগী রাজ্যের সরকারি মেডিক্যাল কলেজের আউটডোরে ডাক্তার দেখাতে আসেন। ভর্তি হন ৬-৭ হাজার রোগী। কিন্তু জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি চলায় শুধুমাত্র সিনিয়র ডাক্তাররাই যেহেতু পরিষেবা দিচ্ছেন, ফলে তাঁদের একার পক্ষে সব রোগীকে সামলে ওঠা সম্ভব হচ্ছে না।

তাই গত দু’-তিন সপ্তাহে রোগীর সংখ্যাটা অর্ধেকের কাছাকাছি নেমে এসেছে বলে দাবি স্বাস্থ্যভবনের। সূত্রের খবর, গত সপ্তাহে একদিনে গড়ে ৩০-৩৫ হাজার রোগী আউটডোরে ডাক্তার দেখাতে এসেছেন এবং হাজার চারেক রোগী ভর্তি হয়েছেন।

প্রশ্ন হলো, বাকি রোগীরা গেলেন কোথায়? বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, একান্ত দরকার না হলে কোভিড কালের মতোই রোগীদের একটা অংশ হয় অসুখ চেপে অথবা স্থানীয় স্তরে ডাক্তার দেখিয়ে পরিস্থিতি সামলে নিচ্ছেন। আর বাকিরা, যাঁদের চিকিৎসা না-হলেই নয়, তাঁরা বাধ্য হয়েই পকেট প্রায় শূন্য করে বেসরকারি হাসপাতালের দ্বারস্থ হচ্ছেন।

তবে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের থেকে মেলা তথ্য বলছে, সেখানেও সরকারি হাসপাতালের তথাকথিত নিম্নবিত্ত রোগীরা বেশ ভালো রকম বাছবিচার করেছেন হাসপাতাল নির্বাচনের ক্ষেত্রে। কেননা, তুলনায় একটু কম খরচের মাঝারি মাপের বেসরকারি হাসপাতালেই তাঁরা বেশি যাচ্ছেন।

মাঝারি হাসপাতালগুলিতে ১৫-৩২% রোগী বেড়ে গিয়েছে গত ১৫-২০ দিনে। মণিপাল হাসপাতাল গোষ্ঠীর এক মুখপাত্র জানান, তাঁদের হাসপাতালে রোগী বাড়েনি এর মধ্যে। স্বাস্থ্যসাথীতে যেমন নিম্নবিত্ত রোগী আসেন, তেমনই আসছেন। পিয়ারলেস হাসপাতালের সিইও সুদীপ্ত মিত্র বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে তো অনেক খরচ। সাধারণত গরিব রোগীরা আসেন না।’

তবে ঠিক উল্টো ছবি দেখা যাচ্ছে টেকনো ইন্ডিয়া ডামা হাসপাতালে। সেখানকার মেডিক্যাল সুপারিন্টেন্ডেন্ট মহম্মদ শাহনওয়াজ পুরকাইত বলেন, ‘এই ক’দিনে আমাদের হাসপাতালে অন্তত ১৫% রোগী বেড়েছে। বেশিরভাগই গুরুতর অসুস্থ এবং পরিকল্পিত অস্ত্রোপচারের রোগী।’

আইএলএস হাসপাতাল গোষ্ঠীর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট দেবাশিস ধর জানান, মাঝে আইএমএ-র ডাকা কর্মবিরতির কারণে দু’দিন চিকিৎসকরা অনিয়মিত ছিলেন বলে সেই সময়ে রোগী কমে গিয়েছিল একটু। কিন্তু এখন ফের বেড়ে গিয়েছে যা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। মূলত ইমার্জেন্সি এবং সার্জারির রোগীই বেড়েছে।

দিশা আই হসপিটালের চেয়ারম্যান তথা ম্যানেজিং ডিরেক্টর, চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ দেবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমাদের সব শাখাতেই প্রায় ২৫% বেড়েছে রোগীর সংখ্যা।’ বিপি পোদ্দার হাসপাতালের গ্রুপ অ্যাডভাইজ়র সুপ্রিয় চক্রবর্তী জানান, গত কয়েক দিনে তাঁদের হাসপাতালের আউটডোরে ২৭-৩২% রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে। সে জন্য আউটডোরের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে এবং চিকিৎসকদের আরও বেশি সময় দিতে অনুরোধ করা হয়েছে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version