মোনালিসা মাইতি| প্রধান শিক্ষিকা, তারাসুন্দরী বালিকা বিদ্যাভবন
আজও অনেকে গলার রগ ফুলিয়ে রাস্তায় নেমেছে, তাঁদের একটি মাত্র ইচ্ছেকে প্রকাশ করছে, ‘জাস্টিস ফর আরজি কর’। তাঁদের আমি আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। এই সময়ের তরফে দুটি প্রশ্ন করা হয়েছিল, অন্যায়ের প্রতিবাদ কেন জরুরি? এবং অন্যায়ের প্রতিবাদে ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণ কেন জরুরি? দুটো বিষয়ই কিন্তু শাখা নদীরা যেমন সব প্রধান নদীতে এসে মেশে সেরকম ভাবেই শেষ হয়েছে। আর, আজকে শিক্ষক দিবসের দিনে এই বার্তা ছাত্র সমাজের মধ্যে ছড়িয়ে যাক এটাই চাইব।
অন্যায়ের প্রতিবাদ মানুষ করে তার বোধের জায়গা থেকে। প্রশ্ন উঠতেই পারে, বোধের জায়গা কী? কী ভাবেই তা গড়ে ওঠে? এই বোধের জায়গা তাঁর ছোটবেলা, স্কুল-কলেজ জীবন, পারিবারিক অবস্থান, সামাজিক বা রাজনৈতিক অবস্থান সব মিলিয়ে গড়ে ওঠে। বিজ্ঞান বলে, তুমি প্রশ্ন করতে শেখো। প্রশ্ন করলে, তোমার যে অজ্ঞানতা রয়েছে, সেখানে তুমি আলো দেখতে পাবে। মানুষ ‘কেন’ প্রশ্নটা যেদিন থেকে করতে শুরু করেছে সেদিন থেকে সে বিদ্রোহী, আপনি সক্রেটিসের কথাই বলুন, দ্রোণাচার্জ বা অর্জুন সবাই ‘কেন’ প্রশ্নের জন্যই বিদ্রোহী।

আজকের প্রেক্ষিতে এই আলোচনায় ফিরে আসি। ধর্ষণ কি আমাদের দেশে এই প্রথম হল? উত্তর, ‘না।’ আমাদের দেশে কি আগামীতে এই ঘটনা আর ঘটবে না? উত্তর হলো, ‘ঘটবে’। তাহলে আমরা রাস্তায় প্রতিবাদে নামলাম কেন? এর উত্তর হল সেই ‘বোধ’। ঘটনাটা আমাদের সবাইকে নাড়িয়ে দিচ্ছে। মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ-অভিমান আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের মতো হয়েছে। আমরা আজ এইটুকু বোঝাতে সক্ষম পারলাম, অন্যায়ের প্রতিবাদ করাই উচিত।

RG Kar Protest: পটচিত্রে আরজি করের ছবি, গানে গানে প্রতিবাদ

অন্যায়ের প্রতিবাদে ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণ কেন জরুরি? ছাত্র জীবন এমন একটা জীবন যেখানে কোনওরকম পূর্বশর্ত থাকে না। কোনও বাধা থাকে না। দেখুন, যাঁরা সংসদীয় রাজনীতিতে যুক্ত তাঁদের নিরেট আনুগত্য প্রকাশ করতে হয় সেই দলের কাছে। পাড়ার ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রেও একইরকম ভাবেই কারও উপর আনুগত্য থাকতে হবে, সরকারি কর্মচারিদেরও তাই। কিন্তু পড়ুয়াদের এসব নেই। সে মুক্ত, স্বাধীন। সে পরিবার-পাড়া-রাজ্য-দেশের হাল একদিন ধরবেই। ফলে এটা তার শেখা ও অণুশীলন জরুরি। অভিভাবক, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কিন্তু এগিয়ে দিতে হবে তাদের। আমার যে সন্তানরা মেডিক্যাল কলেজে এতদিন ধরে লড়ছেন আমি জানি এই ‘সমাজ মন্থন’ যেটুকু ভালো হবে তার দাবিদার তাঁরা একা নয়। সমুদ্র মন্থনের বিষ যেমন একজনকেই পান করতে হয়েছিল। তা হয়ত কয়েকজনকেই করতে হবে। কিন্তু সেই সাহস থাকতে হবে। প্রকৃত শিক্ষাই মানুষকে তাঁর মূল্যবোধ ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করে। প্রতিবাদের কোনও বয়সের পরিধি নেই। রাষ্ট্র ভেঙে পড়লে তাহলে ১৮ বছরের নীচের মানুষটাকেও সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সেই সিদ্ধান্তকে অন্যদের শুনতে হবে। যাঁরা এই প্রতিবাদ করছেন তাঁরা জয়ী হবে কি না জানা নেই, তবে তাঁরা যে ইতিহাস তৈরি করছেন তা নিয়ে সন্দেহ নেই।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version