উচ্চশিক্ষায় এ বার ভুয়ো জাতিগত শংসাপত্রে ভর্তি-কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠল। চলতি শিক্ষাবর্ষে রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজে সাধারণ স্নাতক-স্তরে এবং আইন, ইঞ্জিনিয়ারিং-সহ পেশাদারি নানা কোর্সে তফসিলি উপজাতির (এসটি) শংসাপত্র নিয়ে যাঁরা ভর্তি হয়েছেন, তাঁদের একাংশ আদৌ তফসিলি উপজাতিভুক্ত কিনা, সে প্রশ্ন তুলেছে পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী কল্যাণ সমিতি।সংরক্ষিত আসনে ভর্তির সুযোগ পাওয়া বিশ্বাস, বড়ুয়া, সাউ, কর্মকার, চৌধুরী, দাস, ঘড়াই, রায়, মণ্ডল, পাল, নাগ এবং সিং পদবিধারীরা আদৌ এসটি কিনা, সে প্রশ্ন তুলে ২১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছে সমিতি। সেই সঙ্গে কেউ কেউ ঠিকানা বদলে এক-এক জেলা থেকে এক-এক রকম শংসাপত্র জোগাড় করে ভর্তি হয়েছেন বলেও অভিযোগ সমিতির।

সমিতির সভাপতি মিতানচন্দ্র টুডু বলেন, ‘এতদিন জেলায় জেলায় দু’একজন ছেলেমেয়ে নানা বিষয়ে পদবি ভাঁড়িয়ে ভুয়ো এসটি শংসাপত্র দেখিয়ে ভর্তি হতো। কিন্তু এ বার তা একেবারে লাগাম ছাড়া। খাস কলকাতা শহরের বিভিন্ন ডিগ্রি কলেজে বিএ/বিএসসি/বিকমে এ রকম ঘটেছে। বাদ যায়নি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল এন্ট্রান্স টেস্টও। চিত্রটা একই যাদবপুর এবং রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়েও।’

ঘটনা হলো, উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রের প্রশাসকরা কিন্তু এই অভিযোগ কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দেবাশিস দাস বলেন, ‘বিষয়টি উদ্বেগের। তবে কলেজের ভর্তি প্রক্রিয়া অনলাইন পোর্টালে হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশি কিছু করার নেই। রেজিস্ট্রেশনের আগে সংশ্লিষ্ট কলেজগুলিকে যথাযথ ভেরিফিকেশনের জন্যে বলা হবে।’

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসুর কথায়, ‘বিষয়টি বিভাগীয় অ্যাডমিশন কমিটির কাছে ফরওয়ার্ড করা হয়েছে। এখনও চূড়ান্ত রিপোর্ট আসেনি।’ রবীন্দ্রভারতীর ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার আশিস সামন্তর বক্তব্য, ‘অভিযোগ পেয়েছি। কিন্তু আমরা বড়জোর অরিজিনাল শংসাপত্র মিলিয়ে দেখতে পারি। সমিতি বরং যেখান থেকে শংসাপত্র ইস্যু হচ্ছে, সেখানে দরবার করলেই ভালো হয়।’

চাপ সামলাতে সিট ডবল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে

কেন শয়ে শয়ে জেনারেল, ওবিসি (এ/বি) এবং তফসিলি জাতির ছেলেমেয়েরা এসটি শংসাপত্র পেতে আগ্রহী? উচ্চশিক্ষা শিবিরের বক্তব্য, কলকাতা ও শহরতলির বহু উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসটি-দের জন্যে সংরক্ষিত আসন ফাঁকাই থাকে। সেখানে এ বার অভিন্ন পোর্টালের মাধ্যমে বিভিন্ন কলেজের মেধাতালিকায় বিশেষ কিছু পদবির অনেক পড়ুয়ার নাম ওঠার বিষয়টি অনেকের নজরেই এসেছে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বার এসটি শংসাপত্রে ভর্তি হওয়া গেলে উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি কর্মসংস্থানেও বাড়তি সুবিধা মেলে।

যদিও অন্য ক্যাটিগরির অনেকে এসটি শংসাপত্র পাচ্ছেন, এমন অভিযোগ খতিয়ে দেখে সংশোধনের জন্যে কিছুদিন আগেই মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে বৈঠক হয়েছে। এ নিয়ে ডিএম, এসডিও-দের পদক্ষেপ করার জন্যে নির্দেশও দিয়েছে অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দপ্তর। কিন্তু বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আদিবাসী কল্যাণ সমিতির সাম্প্রতিক চিঠিতে স্পষ্ট, জেলা প্রশাসনের এখনও তেমন হেলদোল নেই। এই ‘নির্বিকার’ থাকার পিছনে বড় চক্র, অনেক লেনদেন যুক্ত থাকতে পারে বলেও জল্পনা বাড়ছে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version