আরামবাগের বন্যা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। ভাঙল নদী বাঁধ। ভাসছে খানাকুল, গোঘাট, পুরশুড়া। জল ঢুকল হাসপাতালে। আড়াই হাজার মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো নিপাদ আশ্রয়ে। ডিভিসি-র ছাড়া জলে প্লাবিত হয়েছে আরামবাগের খানাকুল, গোঘাট, পুড়শুড়া-সহ বহু এলাকা। শুক্রবার সকাল থেকে নতুন করে জল না বাড়লেও খানাকুলের অধিকাংশ জায়গা জলমগ্ন।জল ঢুকেছে খানাকুল ১ ও ২ নম্বর ব্লক অফিসে। আরামবাগ দক্ষিণ নারায়ণপুর হাসপাতালে ভিতরেও জল ঢুকেছে। খানাকুলে কবিদপুরে কানা দিঘির বাঁধ ভেঙ্গে খানাকুলের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। উঁচু জায়গাগুলোতে জল কমলেও নিচু এলাকাগুলি এখনও ডুবে রয়েছে। ঘর ছেড়ে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছে ত্রাণ শিবিরে ও নদী বাঁধের উপরে। একাধিক মাটির বাড়ি ভেঙে গিয়েছে।

প্লাবিত এলাকায় আরও জল ঢুকছে। আরামবাগের মাঝপুর, খান্না, হেলান, বাইত খানা, তিলক চক ও মৈখণ্ড ডিভিসি-র ছাড়া জলে প্লাবিত।
অন্যদিকে, মুণ্ডেশ্বরী নদীর জলে আরামবাগ-মধ্যডাঙ্গা জাতীয় সড়কের উপর দিয়ে বইছে জল। তার মধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছেন এলাকার লোকজন। নতুন করে আরামবাগ হামিদ বাটি, শালালপুর এলাকায় পাঁচটি কাঁচা বাড়ি ভেঙে পড়েছে।

খানাকুল ২ নম্বর ব্লকের একাধিক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। খানাকুল ১ নম্বর অঞ্চলে বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের কর্মীরা জলবন্দি মানুষদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছেন। স্পিড বোট ও নৌকা নামানো হয়েছে এলাকায়। বন্ধ রয়েছে দোকানপাট। হুগলি জেলা পরিষদের সভাধিপতি রঞ্জন ধাড়া জানান, খানাকুলের ১ ও ২ নম্বর ব্লক মিলিয়ে ২৪টি পঞ্চায়েত, পুরশুড়ার ৮টি পঞ্চায়েত, ও গোঘাটের ৪টি পঞ্চায়েত এলাকা জলমগ্ন।

বর্তমানে পরিস্থিতি অনেকটা স্থিতিশীল হলেও বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের কর্মীরা মানুষকে এখনও খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন। আড়াই হাজার মানুষকে ত্রাণ শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। শুকনো খাবার ও রান্না করা খাবার বিলি করা হচ্ছে। যাঁরা গৃহবন্দি, তাঁদের কাছে গিয়ে বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের কর্মীরা খাবার পৌঁছে দিচ্ছে। বন্যা দুর্গতদের প্যাকেট বন্দি জল দেওয়া হচ্ছে।

অন্যদিকে, ডিভিসি-র ছাড়া জলে প্লাবিত বলাগড়ের জিরাট পঞ্চায়েতের চর খয়রামারী এলাকা। চর খয়রামারী-জিরাট সংযোগকারী একমাত্র কালভার্ট গঙ্গার জোয়ারের জলে ভেঙে যায়। তার জেরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। জল ঢুকতে শুরু করে গ্রামে। ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। তারই মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে চলছে পারাপার।

বানভাসি দক্ষিণবঙ্গ, ত্রাণ শিবিরে বাড়ছে ভিড়

ওই এলাকায় প্রায় আড়াইশো পরিবারের বসবাস করে। তাঁদের ৬০ জনকে স্থানীয় আশুতোষ নগর প্রাইমারি বিদ্যালয়ে অস্থায়ী ত্রাণ শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান সদর মহকুমা শাসক স্মিতা সান্যাল শুক্লা ও বলাগড়ের বিডিও সুপর্ণা বিশ্বাস। কালভার্টের জায়গা নতুন কাঠের সেতু নির্মাণ করা হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেওয়া মানুষকে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অন্যদিকে, জল ঢুকতে শুরু করেছে বলাগরের শ্রীপুরের বাবুচর, সিজা কামালপুর পঞ্চায়েতের বানেশ্বর পুর, আশ্রম ঘাট সহ বেশ কয়েকটি এলাকায়। কৃষিতেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বলাগড়ের অধিকাংশ এলাকার বাসিন্দারা সবজি চাষের উপর নির্ভর করেন। ফলে ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন চাষিরা।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version