সহপাঠী ও নিচু ক্লাসের স্টুডেন্টরা তাঁর হয়ে আন্দোলন শুরু করায় এক সময়ে সামিল হন দ্বাদশের ওই ছাত্রীও। তার বয়স এখন ১৭ বছর ২ মাস। মেয়েটির অভিভাবকরা পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযুক্ত প্রাক্তন ছাত্রকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছেন তদন্তকারীরা। এই সাইবার ক্রাইমে স্কুলেরই একাদশ শ্রেণির দুই ছাত্রও এই কাজে সঙ্গত করেছে বলে জানা গিয়েছে। তারা নাবালক বলে এখনই পদক্ষেপ করছে না পুলিশ। কিন্তু এত অল্প বয়সের ছেলেদের মধ্যে এ ধরনের অপরাধপ্রবণতা কার্যত বিরল।
ওই ছাত্রী যেহেতু নাবালিকা, তাই এই ঘটনায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পকসো আইনে মামলা হওয়ার কথা বলে জানাচ্ছেন আইনজীবী এক্রামুল বারি। কিন্তু এমন ঘটনার নেপথ্যে কোন মানসিকতা কাজ করেছে? প্রেসিডেন্সির সোশিওলজির প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান প্রশান্ত রায়ের ব্যাখ্যা, ‘এই ঘটনায় আমরা দু’রকম সাহস দেখলাম। একটা হলো দুঃসাহস। অভিযুক্তদের এমন অন্যায়ের পিছনে এক ধরনের ফান রয়েছে।
যে ফান বা মজা থেকে শারীরিক উত্তেজনা হয়, এক ধরনের পার্ভার্ট সেক্সুয়ালিটি কাজ করে। এবং এই প্রবণতা, এমন অপরাধের সংখ্যা বাড়ছে, যদিও সব আমাদের গোচরে আসে না। আর দ্বিতীয়টা অবশ্যই স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের সৎ সাহস, যেটা প্রশংসনীয়। আসলে ওরা যে খুব বিস্মিত হয়েছে, তা নয়। এ ভাবে মানুষকে অপদস্থ করে মজা পাওয়ার একটা ট্রেন্ড হয়তো ওরাও নোটিস করেছে। তা ছাড়া এখন প্রতিবাদের একটা সামগ্রিক আবহ রয়েছে। তাদের আন্দোলন সেই আবহের কারণেও হতে পারে।’
মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ কস্তুরী মুখোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ, ‘এখন তো আরজি কর করে দেবো একটা শব্দবন্ধই হয়ে গিয়েছে! তবে এমন ঘটনা যে একেবারেই হতো না, তা নয়। টেকনোলজির অগ্রগতি-সহ নানা কারণে আমরা সে সব জানতে পারছি। আর স্কুল-পড়ুয়াদের এই আন্দোলনের নেপথ্যে সাম্প্রতিক বিক্ষোভ-প্রতিবাদের আবহের প্রভাব অবশ্যই আছে। মাসকয়েক আগে আমরা দেশের বাইরে এক আন্দোলন দেখেছি। যার পরে আমাদের দেশে প্রতিবাদ দেখলাম। পাশাপাশিই সামগ্রিক আস্থাহীনতা, উপযুক্ত রোল মডেলের অভাব ছেলেমেয়েদের আন্দোলনের পথে এগিয়ে দিচ্ছে। তবে মূল ঘটনাটা অত্যন্ত চিন্তার।’
ছাত্রীর ছবি সুপারইম্পোজ় করে পর্নোগ্রাফিক কনটেন্ট তৈরি ও তা ভাইরাল করায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামতে চেয়ে এ দিন প্রেয়ারের পরেই স্কুল-কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমতি চায় পড়ুয়ারা। কিন্তু স্কুল চলাকালীন কোনও আন্দোলন, প্রতিবাদের অনুমতি দিতে চাননি কর্তৃপক্ষ। এতে বিক্ষোভের আঁচ অনেকটা বেড়ে যায়। অথরিটির অনুমতির বিষয়টি উপেক্ষা করেই স্কুলের সব পড়ুয়া একজোট হয়ে অভিযুক্ত প্রাক্তনীর গ্রেপ্তারির দাবিতে সরব হয়ে ওঠে।
এক সময়ে তারা পৌঁছে যায় অভিযুক্ত ওই এক্স-স্টুডেন্টের বাড়ির সামনে। সেখানেই বসে পড়ে তারা। প্রাক্তনীর শাস্তির দাবিতে স্লোগান, চিৎকার শুরু করে ছাত্রছাত্রীরা। কার্যত গোটা গ্রামেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
যাকে নিয়ে আন্দোলন, সেই ছাত্রীও যোগ দেয় প্রতিবাদী পড়ুয়াদের সঙ্গে। বিক্ষোভের সামনে থেকেছে সে। তার বক্তব্য, ‘সম্মানহানি হলেও আমি তো নিশ্চিত যে ওই কাজে যুক্ত ছিলাম না। আমার মতো কারও সঙ্গে ফের যাতে এমন ঘটনা না ঘটে, তা নিশ্চিত করতেই প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছি।’
এক শিক্ষক বলেন, ‘আজ স্কুলে আসার পর থেকেই ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে খানিকটা অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করেছিলাম। কিন্তু ওরা যে এমন কিছু করার কথা ভাবছে, সেটা বুঝতে পারিনি। তারপরে ছেলেমেয়েরা যে ভাবে একজোট হয়ে প্রতিবাদে সামিল হলো, তা কল্পনার বাইরে!’
তাঁর সংযোজন, ‘এই সামাজিক অবক্ষয় কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। ইন্টারনেটের কুপ্রভাবে আসক্ত হয়ে পড়ছে পড়ুয়ারা, যেটা খুব দুশ্চিন্তার।’ পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবমশী বলেন, ‘ছাত্রীটির অভিভাবকের লিখিত অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। অভিযুক্ত প্রাক্তন ছাত্রের অপরাধ প্রমাণিত হলে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।’