এই সময়, ঝাড়গ্রাম: এ বার ‘থ্রেট কালচার’-এর খাতায় নাম জুড়ল ঝাড়গ্রাম গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজেরও। নিজের ফেসবুকে এ নিয়ে সরব হয়েছেন ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সুদেষ্ণা মজুমদার। বর্তমানে তিনি এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অ্যানাটমি বিভাগের প্রধান। এই প্রথম এমন উচ্চপদের কেউ প্রকাশ্যে সরাসরি সমাজমাধ্যমে থ্রেট কালচার নিয়ে অভিযোগ তুললেন।

২০২২-এর নভেম্বরে ১০০ জন পড়ুয়া নিয়ে চালু হয় ঝাড়গ্রাম গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ। সেখানে প্রথম অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন অধ্যাপিকা সুদেষ্ণা। দু’দিন আগে নিজের অভিজ্ঞতার কথা পোস্ট করেছেন ফেসবুকে।

সেখানে লিখেছেন, ‘আমি যখন ঝাড়গ্রাম গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপ্যাল ছিলাম, তখন বহিরাগত কয়েক জন পড়ুয়াকে (মেদিনীপুর মেডিক্যালের) অসময়ে বিশেষ করে সন্ধেবেলা আমাদের বয়েজ় হস্টেলে প্রবেশ বা অনুপ্রবেশের অনুমতি না দেওয়ার জন্য আমাকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে নানা রূঢ় ও ব্যঙ্গাত্মক কথা শুনতে হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে একজন ওই জেলার চিকিৎসক-বিধায়ক, একজন চিকিৎসক সংগঠনের উচ্চ পদাধিকারী, একজন ওই চিকিৎসক-বিধায়কের প্যাথলজিস্ট স্ত্রী, কয়েক জন স্থানীয় ফ্যাকাল্টি, যাঁদের মধ্যে কিছু মহিলা সদস্যও রয়েছেন। গোটা বিষয়টি আমাকে জানানোর পরে নিরাপত্তারক্ষী নির্দিষ্ট সময়ে হস্টেলের গেটে তালা লাগিয়ে দিতে শুরু করেন। ওই বহিরাগতদের নিজেদের বয়ান অনুযায়ী, ওরা ওই বিধায়কের বার্তাবাহক। এ নিয়ে আমার ওপর অনেক চাপ তৈরি করা হয়েছিল।’

‘উত্তরবঙ্গ লবি’-র সঙ্গে জেলার ওই বিধায়কের যোগসূত্রের কথা উল্লেখ করে তিনি পোস্টে লিখেছেন, ‘ধীরে ধীরে দেখা গেল যে ওই বিধায়কের পরিবার ডাক্তার সুশান্ত রায়ের (উত্তরবঙ্গ লবি-র অন্যতম প্রভাবশালী বলে অভিযুক্ত) পরিবারের খুব ঘনিষ্ঠ। ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজে এক দিন পূর্বঘোষিত সফরে আসেন চিকিৎসক সুশান্ত রায়, তাঁর স্ত্রী ডাঃ সুহৃতা পাল (তখন রাজ্য স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য) এবং মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের সেই পড়ুয়াদের মতো কিছু অনুগামী বা সমর্থক, যাঁদের কয়েক জন তরুণ হলেও বাকিরা নন। বলা যায়, উত্তরবঙ্গ লবির একটা বড় দল। অধ্যক্ষকে (অর্থাৎ আমাকে) অন্ধকারে রেখে, ডাঃ সুশান্ত রায় এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ছাত্রদের (তাঁরাই তখন সদ্য প্রতিষ্ঠিত ওই মেডিক্যাল কলেজের একমাত্র পড়ুয়া) নিয়ে তালাবন্ধ দরজার পিছনে একটি মিটিং করেন এবং একটি ছাত্র ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করেন। এটা কি নৈতিক ছিল?’

এরপরেই প্রশ্ন তুলে প্রাক্তন অধ্যক্ষ লিখেছেন, ‘আজকাল, একটি প্রশ্ন আমাকে তাড়া করে, কেন বহিরাগতরা ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজের বয়েজ় হস্টেলে ঢুকতে এত আগ্রহী ছিল? সেখানেও কি থ্রেট কালচার চালু করতে চেয়েছিল?’ এ সব ঘটনার কয়েক মাস পরেই তাঁকে অধ্যক্ষের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন সুদেষ্ণা।

এ দিন তিনি ফোনে ‘এই সময়’-কে বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি নিজেই পোস্ট করেছি। চারপাশে সবাই জানত। তখন বলতে কিছু সাহস পেত না।’ তবে যাঁর সম্পর্কে অভিযোগ, সেই বিধায়ক কে, তা জানতে চাইলে উত্তরে তিনি বলেন, ‘ওই বিধায়ক খতরনাক। আমি কেন নাম বলব? যাঁরা চেনেন, তাঁরা নাম জানেন। এখন লোকে ডাঃ সুশান্ত রায় এবং ডাঃ সুহৃতা পালের কথা জানে, তাই আমি লিখেছি।’
থ্রেট কালচার রামপুরহাট মেডিক্যালে: তদন্ত কমিটি
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রাক্তন অধ্যক্ষের পোস্টের নীচে কমেন্টে চিকিৎসক সুকন্যা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘তোকে কুর্নিশ! রাজা তোর কাপড় কোথায়, এই দুর্দিনে প্রকাশ্যে বলে উঠতে পারা সহজ নয়!’

এ প্রসঙ্গে ডাঃ সুহৃতা পালকে ফোনে ধরা হলে তিনি বলেন, ‘উনি ফেসবুকে কী লিখেছেন, কেন লিখেছেন, এটা আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়। আমি তা বলতে পারব না।’ ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা বিধায়ক দুলাল মুর্মু বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানি না। খোঁজখবর নিয়ে তারপর বলতে পারব।’ ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ সুস্মিতা ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমার এখানে দেড় বছর হলো। আমি এরকম কোনও ঘটনা জানি না।’

ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের প্রাক্তন চিকিৎসক তথা বিজেপি নেতা চিকিৎসক প্রণত টুডু-র কথায়, ‘থ্রেট কালচার তো এখন পুরো বাংলা জুড়ে। ঝাড়গ্রামের নতুন মেডিক্যাল কলেজে যাঁরা এখন হাউসস্টাফ, তাঁদের হস্টেল পাওয়া নিয়ে একটা অসন্তোষ রয়েছে বলে আমি খবর পেয়েছি। কিন্তু কেন তাঁরা হস্টেল পাচ্ছেন না, জানি না।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version