এই সময়, এগরা: দেশ জুড়ে তোলপাড়। সোমবারেই সুপ্রিম কোর্টে শুনানি হয়েছে। সিবিআই তদন্ত চালাচ্ছে। এমন আবহে ক্লাস ইলেভেনের পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে উঠে এল আরজি কর প্রসঙ্গ! এখানেই শেষ নয়, নির্যাতিতার বয়ানে সেখানে লেখা হয়েছে, ‘আমাকে মেডিক্যাল কলেজের মধ্যে পাশবিক অত্যাচার করে প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে খুন করা হয়েছে।’প্রশ্ন উঠেছে, সিবিআই যেখানে তদন্ত করছে, এখনও চূড়ান্ত রিপোর্ট বা চার্জশিট জমা পড়েনি, সেখানে সরকারি স্কুলের প্রশ্নে কী করে লেখা হল ‘প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে খুন করা হয়েছে!’ পূর্ব মেদিনীপুরের এগরার ঝাটুলাল উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সোমবার একাদশ শ্রেণির প্রথম সেমেস্টারের রাষ্ট্রবিজ্ঞান পরীক্ষায় আসা এই প্রশ্ন নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। জানা গিয়েছে, প্রশ্নটি আদতে ছিল, সংবিধানে শিক্ষার অধিকার কোন ধারায় রয়েছে, তা নিয়ে। কিন্তু এই প্রশ্নটি করা হয় আরজি করের নির্যাতিতার বয়ানে!

প্রশ্নপত্রে লেখা হয়েছে, ‘শিক্ষা আমার মৌলিক অধিকার। আমি অভয়া, অনেক আশা ও স্বপ্ন নিয়ে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমার। আমাকে মেডিক্যাল কলেজের মধ্যে পাশবিক অত্যাচার করে প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে খুন করা হয়েছে। আমার সঠিক বিচার হোক।’

এর পরেই প্রশ্ন করা হয়েছে, উপরে বর্ণিত শিক্ষার অধিকারটি সংবিধানের কোন ধারায় রয়েছে? শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, ‘উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদকে বলেছি, স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে আমার কাছে রিপোর্ট জমা দিতে। কারণ সংসদই একাদশ ও দ্বাদশের সিলেবাস তৈরি করে।’

উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য-র কথায়, ‘বিষয়টি শুনেছি। অত্যন্ত অনভিপ্রেত ঘটনা। খোদ নির্যাতিতার বয়ানে প্রশ্ন করা হয়েছে। এরকম মর্মান্তিক ঘটনা নিয়ে সমস্ত মানুষই সংবেদনশীল। সবাই ঘটনার বিচার চাইছে। সুপ্রিম কোর্টে বিষয়টি বিচারাধীন। তার আগেই পরীক্ষার প্রশ্ন করা কতটা যুক্তিযুক্ত, আমরা খোঁজ নিয়ে দেখছি। তার ভিত্তিতে স্কুলের সঙ্গে কথা বলে পদক্ষেপ করা হবে। কারণ ক্লাস ইলেভেনের প্রশ্নের ব্যাপারটি পুরোপুরি স্কুলের উপর ছাড়া হয়েছিল।’

ঘুমন্ত অবস্থায় চশমা পরা কেন? চোখে আঘাতই বা কী ভাবে? প্রশ্ন সুপ্রিম কোর্টের

কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী নীলাদ্রি শেখর ঘোষ বলেন, ‘বিচারাধীন বিষয় নিয়ে এই ধরণের প্রশ্নপত্র তৈরি বৈধ নয়। অভয়ার মৃত্যু প্রাতিষ্ঠানিক কি না, তা এখন প্রমাণিত নয়। বিচারাধীন বিষয় নিয়ে আলোচনার অধিকার নাগরিকের থাকলেও বিচারাধীন বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া অপরাধ বা সে বিষয়ে কিছু এমন বলা যায় না যা বিচারের সিদ্ধান্তকে আগে থেকেই পক্ষপাতী করে তোলে।’

সোমবার এই প্রশ্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতেই বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। স্কুলের টিআইসি (টিচার-ইনচার্জ) দেবাশিস জানা বলেন, ‘আমি অসুস্থ, ছুটিতে আছি। বিষয়টি শুনেছি। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সাবজেক্ট টিচার করে থাকেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষকই এই বিষয়ে বলতে পারবেন। আগামিকাল স্কুলে গিয়ে খোঁজ নেওয়ার পরে এই বিষয়ে বলতে পারব।’ যিনি প্রশ্নপত্র তৈরি করেছেন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সেই শিক্ষক বাসুদেব নন্দীর পরিষ্কার কথা, ‘শিক্ষার অধিকার নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে। এতে এত বিতর্ক হবে ভাবিনি।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version