এই সময়: এক দশক পর চাকরির হাতছানি সত্ত্বেও কাউন্সেলিংয়েই গরহাজির সাড়ে ২৮ শতাংশ প্রার্থী! সরকারি চাকরিতেও অনীহা!
স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) বৃহস্পতিবারই উচ্চ প্রাথমিকে বাংলা ছাড়া অন্যান্য মাধ্যমের স্কুলগুলোয় কাউন্সেলিং ও সুপারিশপত্র দেওয়া শুরু করেছে। এ দিন ১৪৪ জন প্রার্থীর পছন্দের স্কুল বাছাইয়ের কথা ছিল। কিন্তু দিনভর কাউন্সেলিংয়ে অনুপস্থিত ছিলেন ৪১ জন। শতাংশের হিসাবে ২৮.৪৭% প্রার্থী। এমনকী কাউন্সেলিংয়ে হাজির হয়েও অনেকে পছন্দের স্কুল না পাওয়ায়, সুপারিশপত্র পেয়েও শিক্ষক পদে যোগ দেবেন কি না, তা নিয়ে ঘোর সংশয়ে।২০১৪ সালে বিজ্ঞপ্তি, ২০১৫-তে টেট এবং ২০১৬-তে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু হলেও উচ্চ প্রাথমিকের এই চাকরি নিয়ে অসংখ্য মামলা হয়েছে। এই চাকরির দাবিতে পথে নেমে দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান চালাচ্ছেন চাকরিপ্রার্থীরা। সমস্ত বিতর্কে ইতি টেনে এত দিনে শুরু হয়েছে সুপারিশপত্র দেওয়ার কাজ। চাকরিতে যোগ দিলেই মাস শেষে ৪২ হাজার ৩৮৪ টাকা পাওয়ার কথা। তারপরও কেন চাকরি নিতে এই উদাসীনতা? কাউন্সেলিংয়ে প্রথম প্রার্থীই কেন মুখ ঘুরিয়ে নিলেন?

অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে দোলাচলে রয়েছেন চাকরিপ্রার্থীরা। এ বার হবে? না হলে আর কবে? এই প্রশ্ন নিয়েই কাউন্সেলিংয়ে এসেছিলেন উচ্চ প্রাথমিকের হবু শিক্ষকেরা। কাউন্সেলিংয়ে এ দিন ডাক পাওয়া প্রথম প্রার্থী ছিলেন হুগলির শ্রীরামপুর মাহেশের বাসিন্দা হেমন্তকুমার পাসারি। আপার প্রাইমারি চাকরিপ্রার্থীর মঞ্চর তরফে তাঁকে এ দিন গোলাপ ফুল দিয়েও স্বাগত জানানো হয়। কিন্তু কাউন্সেলিংয়ে খড়্গপুর তেলেগু বিদ্যাপীঠের স্কুল বাছতে বাধ্য হন হেমন্ত। তাঁর কথায়, ‘বাড়ি থেকে অত দূরে চাকরি করতে গিয়ে পোষাবে না। আমি উত্তর ২৪ পরগনার টিটাগড়ের প্রাথমিক স্কুলে ১৩ বছর শিক্ষকতা করছি। সেটাও সরকারি চাকরি। সেই চাকরি ছেড়ে এখানে জয়েন করলে লস (ক্ষতি) হবে।’ হেমন্তর সংযোজন, ‘আমি একা নই। আমার সঙ্গে আজ দেখা হয়েছে, এমন তিন-চারজনও স্কুলে যোগ দেবেন না।’

প্যানেলে নাম থাকা স্বস্তিক ঘোষ নামে এক চাকরিপ্রার্থী কাউন্সেলিংয়েই আসেননি। তাঁর কথায়, ‘বাড়ির কাছে স্কুলে চাকরির সুযোগই নেই। বাড়ি থেকে চার-পাঁচটি জেলা পেরিয়ে দূরের স্কুলে যেতে হবে। তাই অনেক আগেই বাড়ির অদূরে প্রাথমিকে স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি পেয়ে যাওয়ায়, এ বার আর কাউন্সেলিংয়ে যাইনি। কারণ, নতুন চাকরিতে দু’বছর কনফার্ম না হওয়া পর্যন্ত পিএফ-ও পাওয়া যাবে না।’ স্বস্তিকের অভিযোগ, বারবার কোর্টে নিয়োগ নিয়ে মামলা হয়েছে। এ বার যদিও হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ নিয়োগে ছাড়পত্র দিয়েছে এবং সুপ্রিম কোর্টও হাইকোর্টের রায়ের উপর ভরসা রেখেছে। তবে তারপরও তো ৯৫ জন প্রার্থীর যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ থাকায় কমিশন প্যানেলে তাঁদের নাম রাখেনি। ফলে তাঁর দাবি, এই চাকরি নিয়ে আশঙ্কা তো রয়েই গিয়েছে।

উচ্চ প্রাথমিকের শূন্যপদে বিভ্রান্তি, বিপাকে বহু স্কুল

উল্টোচিত্রও রয়েছে। উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখরের বাসিন্দা মহম্মদ সাফিক আলম আনসারি পিওর সায়েন্সে উর্দুর শিক্ষকপ্রার্থী। বলেন, ‘কেরিয়ার থেকে দশ বছর চলে গিয়েছে। মাথার চুলও পেকে গিয়েছে। আগেও দু’বার এসেছিলাম। এ বার কাউন্সেলিংয়ের পর হাতে হাতে স্কুলের সুপারিশপত্রও দেওয়া হয়েছে। বাড়ির কাছেই সিংনাথ জুনিয়র হাইস্কুলে। এ বার মনে হচ্ছে চাকরিটা হয়ে যাবে। স্কুলে পুজোর ছুটি পড়ার আগে জয়েন করতে পারব। না হলে আবার প্রাইভেট স্কুলের চাকরিতে ফিরে যেতে হবে।’

কন্যাকে নিয়েই কাউন্সেলিংয়ে হাজির হয়েছিলেন কোন্নগরের মৌমিতা মিত্র। তিনি বেলুড় মঠের কাছে স্কুল পেয়েছেন। তাঁর স্বামী স্বাগত চন্দ্র বলেন, ‘আজ সুপারিশপত্র পেয়েছে। কাল ও স্কুলে গিয়ে যোগাযোগ করবে। এর আগেও দু’বার ইন্টারভিউ হলেও চাকরি হয়নি। তার দায় বর্তেছিল এসএসসি-র ঘাড়েই।’ বৃহস্পতিবারেও কাউন্সেলিংয়ে এসে আশঙ্কায় রয়েছেন বহু চাকরিপ্রার্থী। আর সে আতঙ্ক তাঁদের চোখেমুখে এ দিনও ফুটে উঠেছিল।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version