এই সময়, আলিপুরদুয়ার: দুর্গাপুজোয় দুঃস্থদের জামাকাপড় বিলির কথা আকছার শোনা যায়। কিন্তু বিনে পয়সায় প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে চুল-দাড়ি কেটে সাফসুতরো করে দেওয়ার ঘটনা শুনেছেন কখনও? শনিবার আলিপুরদুয়ারের বীরপাড়া থানার গ্যারগেন্ডা চা-বাগানে এমনটাই করেছেন লঙ্কাপাড়ার তরুণী দীক্ষা লামা। কখনও কালাপানি, হল্লাপাড়া, লেপচাখায় কখনও বা দুর্গম বক্সা পাহাড়ে সপ্তাহে একদিন তিনি সঙ্গীদের নিয়ে পৌঁছে যান ‘মোবাইল-সেলুন’ নিয়ে।কেন করেন? দীক্ষা বলেন, ‘প্রত্যন্ত এলাকায় সেলুন নেই বললেই চলে। চুল-দাড়ি কাটতে হলে ২০ থেকে ৩০ কিলোমিটার পথ উজিয়ে শহরে আসতে হয়। তাতে যাতায়াতের খরচ যেমন আছে তেমনি চা বাগানে একদিন কামাই হলে ২০০-২৫০ টাকা ক্ষতি হয়। সেই কারণে গণ-সেলুন।’

চা বাগানে মানুষ হওয়ায় শ্রমিকদের কষ্ট খুব কাছ থেকে দেখেছেন তিনি। লড়েছেন অনটনের সঙ্গে। স্বনির্ভর হওয়ার লক্ষ্যে নিজে বিউটিশিয়ান কোর্স করে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে বীরপাড়া বাজারে বিউটি পার্লার খুলেছেন। সপ্তাহ এক দিন দোকান বন্ধ রেখে ছোটেন প্রত্যন্ত গ্রামে।

Siliguri Tea Garden: বোনাসের বিক্ষোভে এ বার কাজ বন্ধ পাহাড়ের বাগানে
দীক্ষা বলেন, ‘ক্রিম, কাঁচি, চিরুনি, আয়না ট্রিমার নিয়ে শনিবার গ্যারগেন্ডা চা-বাগানে এসে ৫৫ জনের চুল-দাড়ি কেটেছি। চেয়ার জোগাড় করেছি শ্রমিকদের বাড়ি থেকে। নতুন জামাকাপড় কিনতে না পারলেও পুজোর সময়ে সবাই একটু ফিটফাট থাকতে চায়। বিশ্বাস করুন, অনেকের সেই খরচ করার মতো ক্ষমতা নেই। তাই ভাবলাম, পুজোর আগে যদি ওদের মন ভালো করে দিতে পারি, তবে ক্ষতি কোথায়? এর পিছনে অন্য কোনও কারণ নেই।’

গ্যারগেন্ডা চা বাগানের অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক বিনয় কেরকেট্টা বলেন, ‘আগে বাগানে নাপিতরা আসতেন। এখন আর আসে না। ১৮ কিলোমিটার দূরে মাদারিহাট বাজারে গিয়ে চুল-দাড়ি কাটার জন্য পয়সাও থাকে না সব সময়। ওঁরা যে আমাদের কথা ভেবেছে, এটাই তো পুজোর অনেক বড় উপহার।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version