অনির্বাণ মণ্ডল, লন্ডন
দেখতে দেখতে প্রায় ২৪ বছর হয়ে গেল ইউকে-তে রয়েছি। জীবনের প্রথম ইনিংস কলকাতায় কেটেছে। দ্বিতীয়টা এখন লন্ডনে। তাই কলকাতাকে এখন খুব মিস করি। আমার চিকিৎসক জীবনের হাতেখড়ি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। এমবিবিএস পাস করার পর, এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে এমএস (মাস্টার্স অফ সার্জারি) করি। এর পর আমার কর্মজীবন শুরু লন্ডনে। পরিবারও এখানেই থাকে।আমার ভিত তৈরি হয়েছিল কলকাতাতেই। রবীন্দ্র সরোবরের কাছে প্রতাপাদিত্য রোডে আমাদের বাড়ি। হাজরা হয়ে বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের সেন্ট লরেন্স স্কুলে যেতাম। দোতলা বাসে চড়তাম, অটোয় যেতাম। আবার কিছুটা সময়ে ট্রামে খুব চড়েছি। লন্ডনে এখনও দোতলা বাসে উঠি। এইচএস পাস করে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হই। সেখান থেকে এসএসকেএম।

ওই সময়েই আমি প্ল্যাব (প্রোফেশনাল অ্যান্ড লিঙ্গুইস্টিক বোর্ড টেস্ট) পরীক্ষায় সফল হই। বিলেতে ডাক্তারি পড়তে হলে তা পাস করা জরুরি। তখন কলকাতার অনেক চিকিৎসক বন্ধু- সিনিয়র ডাক্তারদের পরামর্শ এবং সাহায্য পেয়েছি।

এর পর লন্ডনে রয়্যাল কলেজ অফ সার্জনস অফ এডিনবরা থেকে এফআরসিএস করে কর্মজীবনের যাত্রা শুরু। তার পর সুপার স্পেশালাইজেশন করি প্লাস্টিক সার্জারিতে। এর সুবাদে প্লাস্টিক রিকনস্ট্রাকটিভ সার্জারির বিভিন্ন দিক নিয়ে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। ডারহ্যাম, এডিনবরা, চেস্টারের হাসপাতালে কাজ করেছি। লন্ডনের নামী হাসপাতালগুলির মধ্যে চ্যারিং ক্রস, সেন্ট জর্জেস, কুইন ভিক্টোরিয়া, ইস্ট গ্রিনস্টেডেও যুক্ত থেকেছি। আমার কর্মজীবনের সেরা সময় কেটেছে গত ৮ বছর ধরে।

লিভারপুলে মার্সি বার্নস প্লাস্টিক সার্জারি সেন্টারে ২৮ জন অভিজ্ঞ কনসালট্যান্টের টিমে কাজ করছি। ইউকে-র অন্যতম বড় এবং সম্মানিত এই বার্নস এবং প্লাস্টিক সার্জারি কেন্দ্রে কাজ করা আমার কাছে অনন্য অভিজ্ঞতা। এটা স্বপ্নপূরণ তো বটেই। পাশাপাশি, প্রতিটি ধাপে নিজেকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে আরও এগিয়ে যাওয়ার সাহস পেয়েছি।

এখনও অনেক পথ চলা বাকি। আমি মানসিক ভাবে শান্তি পাই এটা ভেবে, কলকাতার সঙ্গে আমার যোগসূত্র এখনও রয়ে গিয়েছে। আমার স্ত্রী অর্পিতা রায় পেশায় কনসালট্যান্ট গায়নেকোলজিস্ট, ছেলে আর্য মণ্ডল অঙ্কে মাস্টার্স। বছরে অন্তত একবার কলকাতা যাই। কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালে যোগাযোগ করে সাহায্যের চেষ্টা করি। আমাদের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার কাজও করি এই বিলেতে। মা-বাবা এখন আর নেই। তবে কলকাতায় আত্মীয়রা রয়েছেন। সেখানে গেলে চিংড়ি-ইলিশ-ভেটকি, কোনওটাই ছাড়ি না। আর মাটন বিরিয়ানিও।

আসলে বিলেতে থেকেও মনেপ্রাণে আমি কলকাতারই ছেলে। এখন যখন কলকাতার মেডিক্যাল কলেজগুলোয় থ্রেট কালচারের খবর শুনছি, বিদেশে সেগুলো নিয়ে চর্চা হচ্ছে, তখন ধাক্কা লাগছে। আরজি কর হাসপাতালের ওই একটি ঘটনার জেরে এখন দেশে-বিদেশে প্রতিবাদ হচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি, এটা আমাদের সংস্কৃতি নয়।

রাজনীতি, দুর্নীতি, অপরাধ কি আমাদের সময়েও ছিল না? কিন্তু কাউকে এ ভাবে মেরে ফেলা হবে, এটা ভাবা যেত না! লন্ডনের কোনও হাসপাতালে এ সব কেউ ভাবতেই পারবে না। রোগী থেকে ডাক্তার-নার্স — নিরাপত্তা সবার আগে। পর্যবেক্ষণ করার জন্য বিশেষ কমিটিও থাকে। তাতে কোনও রাজনীতি থাকে না। সামান্যতম অভিযোগ উঠলেও সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ করা হয়। কলকাতার মেডিক্যাল কলেজগুলো শহরের মুকুটে অনেক খ্যাতির পালক জুড়েছে। সেই দিনগুলো আবার ফিরে আসুক।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version